ঢাকায় জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন নিয়ে নায়ক নাঈমের ক্ষোভ
‘চাঁদনী’ খ্যাত ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা নাঈম। এখন আর সিনেমায় দেখা যায় না। ৯০ দশকের শুরুতেই খ্যাতিমান নির্মাতা এহতেশামের হাত ধরে চলচ্চিত্রে এসে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিলেন। নবাব বংশের সন্তান তিনি। পুরো নাম খাজা নাঈম মুরাদ।
‘চাঁদনী’ দিয়ে দিয়ে যাত্রা শুরু করে সহ-অভিনেত্রী শাবনাজকে সঙ্গে নিয়ে চলচ্চিত্র জগত জয় করেছিলেন তিনি। প্রথম ছবির সাফল্যের পর একাধারে অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করেন নাঈম। একসময় প্রেম করে বিয়ে করেন শাবনাজকে। পিতা হন দুই কন্যা সন্তানের। তারপর ধীরে ধীরে সরে যান অভিনয় থেকে। সিনেমায় না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ খানের বংশধর চিত্রনায়ক নাঈম মুরাদ।
সম্প্রতি পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে ঢাকায়। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েছেন ঢালিউড অভিনেতা নাঈম। ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন এ অভিনেতা।
বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমির ব্যানারে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচনাসভার পাশাপাশি উর্দু গান-কবিতা পরিবেশন করা হয়। নওয়াব সলিমুল্লাহ একাডেমি আয়োজিত সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। এতে তিনি মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের নানা ঘটনা বর্ণনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার কামরান ধাঙ্গাল উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ অনুষ্ঠানের খবর গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে ভক্তদের স্পষ্ট ধারণা দিতে ফেসবুকে পোস্ট দেন অভিনেতা নাঈম।
নায়ক নাঈম ঢাকার নবাব পরিবার খাজা সলিমুল্লাহর বংশধর। ফেসবুকে জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের একটি ছবি পোস্ট করেন তিনি। ছবির ক্যাপশনে নাঈম লিখেছেন, ঢাকার নবাব পরিবার এটি সাপোর্ট করে না।
নাঈম বলেন, ‘আমি খাজা নাঈম মুরাদ নওয়াব সলিমুল্লাহর পৌপুত্র এবং গর্বিত বাংলাদেশি নাগরিক। আমি এমন কোনো গোষ্ঠী বা কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত নই, যা আমাদের জাতীয় পরিচয় বা ইতিহাসকে ক্ষুণ্ন করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমির সঙ্গে আমাদের ঢাকা নবাব পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এদের প্রচারিত মূল্যবোধের বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান করি।’
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ অভিনেতা বলেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রতি যেকোনো কর্মকাণ্ড, যা জনসাধারণের আশা এবং মূল্যবোধের বিরোধিতা করে আমি তা সমর্থন করি না। আমি বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার এবং তাদের স্বার্থের প্রতি দৃঢ়ভাবে অবস্থান করি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ বড় একটা ফ্যাক্ট। এই নাম দিয়ে অনেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের পরিবার এই সংগঠন সম্পর্কে স্পষ্ট জানেই না।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিনেতা বলেন, ‘নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমির ব্যানারে যারা এটা করেছেন, তারা কেবল তাদের স্বার্থ রক্ষায় করেছেন। আমাদের নবাব পরিবারের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমরা এটা প্রত্যাশা করি না। যারা করেছেন, তারা অন্যায় করেছেন। আমি অনুরোধ করব- আমাদের নাম নিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করলে তা আমরা কঠোরভাবে প্রতিহত করব।’
প্রসঙ্গত, বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার কামরান ধাঙ্গাল বলেছেন, ‘মুসলিম লীগে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্ব ছিল অসাধারণ। সমগ্র ভারতে মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গণআন্দোলনের সূচনা ছিল এটি।’
আরটিভি /এএ-টি
মন্তব্য করুন