মঞ্চে সস্ত্রীক কাঁদলেন আবুল হায়াত
একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নাট্যনির্দেশক আবুল হায়াত। গুণী এই মানুষটির আত্মজীবনীমূলক ‘রবি পথ-কর্মময় ৮০’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শিল্পকলায় এসেছিলেন নাট্যাঙ্গনের অনেকেই। বাবার বই প্রকাশ উপলক্ষে বড় মেয়ে বিপাশা হায়াত উড়ে আসেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। প্রধান অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সবার বক্তব্য শেষে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন আবুল হায়াত।
শনিবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘রবি পথ-কর্মময় ৮০’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়।
‘রবি পথ-কর্মময় ৮০’ লেখার গল্প বলতে বলতে আবুল হায়াত কাছে টেনে নিলেন স্ত্রী শিরিন হায়াতকে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, আজ থেকে তিন বছর আগে চিকিৎসক বললেন, আমার ক্যানসার হয়েছে। আমি জানতে পারলাম, আমি ক্যানসার রোগী। হাসপাতাল থেকে বাসা পর্যন্ত আর কথা বলতে পারিনি।
প্রসঙ্গত, ‘রবি পথ-কর্মময় ৮০’ নাট্যজন আবুল হায়াতের আত্মজীবনীমূলক এই বই প্রকাশ করেছে সুবর্ণ প্রকাশনী। অভিনয়শিল্পী সংঘ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন মামুনুর রশীদ, নওয়াজীশ আলী খান, তারিক আনাম খান, সারা যাকের, শাহীন খান, আহসান হাবিব নাসিম, শাহেদ শরীফ খান, মুনিরা ইউসুফ মেমী, পরিচালক আরিফ খান প্রমুখ। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন অপি করিম।
১৯৪৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন আবুল হায়াত। ১৯৪৭ সালে পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন চট্টগ্রামে। মাত্র ১০ বছর বয়সে মঞ্চে ওঠেন অভিনয়ের জন্য। যে অভিনয়ের সঙ্গে এখনো নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন এই অভিনেতা। ২০১৫ সালে তিনি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত হন।
থিয়েটারের মাধ্যমে অভিনয়ের যাত্রা শুরু আবুল হায়াতের। পরবর্তী সময়ে টেলিভিশন নাটক, সিনেমায় অভিনয় করে দেশজুড়ে পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। এখনও সমানতালে অভিনয় করে চলেছেন। পাশাপাশি দাম্পত্যজীবনেও ভীষণ সুখী এই অভিনেতা। বর্তমানে দেশের অন্যতম নাট্যদল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন তিনি।
আবুল হায়াতের উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো— ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অন্য ভুবনের ছেলেটা’, ‘দ্বিতীয় জন্ম’, ‘শেখর’, ‘অয়োময়’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আজ রবিবার থেকে জোছনার ফুল’, ‘শুকনো ফুল রঙিন ফুল’, ‘আলো আমার আলো’, ‘নদীর নাম নয়নতারা’, ‘খেলা’, ‘শনিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিট’, ‘হাউজফুল’, ‘এফএনএফ’সহ অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটকে অভিনয় করে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তার উল্লেখযোগ্য সিনেমার তালিকায় রয়েছে—‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘জয়যাত্রা’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘ফাগুন হাওয়া’ ইত্যাদি।
আরটিভি/এএ-টি
মন্তব্য করুন