দুষ্ট লোকের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পিঁপড়াও!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ , ১০:৫৮ পিএম


দুষ্ট লোকের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পিঁপড়াও!
ছবি: সংগৃহীত

মানব, মাদক কিংবা বন্যপ্রাণী পাচারের গল্প কমবেশি আমাদের সবার জানা হলেও এবার সামনে এসেছে নতুন তথ্য। পাচারকারীদের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে ক্ষুদ্র জীব পিঁপড়াদের ওপর। টিউবের ভেতর ভরে তারা এগুলো পাচার করছে। সম্প্রতি আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। এতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘদিন ধরেই কেনিয়ার বনাঞ্চল বিভিন্ন বন্যপ্রাণী পাচারের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। চলতি মাসের শুরুর দিকে নিজেদের নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছিলেন কেনিয়ার বণ্যপ্রাণী সেবার (কেডব্লিউএস) কর্মকর্তারা। এ সময়ে ৫ হাজার পিঁপড়া পাচার করার সময় দুই বেলজিয়ান তরুণকে আটক করেন তারা।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, এ অভিযানটি ছিল সবচেয়ে ছোট প্রাণীর পাচার রোধ করার সবচেয়ে বড় অভিযান। কারণ উদ্ধার করা প্রাণীগুলো ছিল ১৮ থেকে ২৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের পিঁপড়া।

বিজ্ঞাপন

কেডব্লিউএস কর্মকর্তারা জানান, সিরিঞ্জ ও টিউবের মধ্যে তুলা ভরে তার মধ্যে পিঁপড়াগুলোকে রাখা হয়েছিল। এই পরিবেশে পিঁপড়া বেশ কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পারে।

তারা আরও জানান, পাচারকারীরা এই পিঁপড়াগুলোকে এশিয়া ও ইউরোপের বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আটককৃত তরুণদের মধ্যে লর্নি ডেভিড দাবি করেন, তারা কোনো আইন ভাঙতে এ কাজ করেননি। দুর্ঘটনাবশত বোকামির কারণে এটি করে ফেলেছেন।

বিজ্ঞাপন

ডেভিড ও তার সহযোগী সেপে লোডেউইজিক্স দুজনেই ১৯ বছর বয়সী। পিঁপড়া পাচারের অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে। 

s0y

এর আগে, একই অভিযোগে ৪০০ পিঁপড়াসহ আরও দুই ব্যক্তিতে আটক করেন কেনিয়ার বন কর্মকর্তারা। গত ২৩ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ পর্যালোচনা করে আদালত তাদের হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

কেডব্লিউএস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পিঁপড়া পাচারের এই ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক সময়ে প্রাণী পাচারের ক্ষেত্রে এক ধরনের পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করে। বড় স্তন্যপায়ী প্রাণীর চেয়ে এখন কম দৃশ্যমান ছোট সাইজের প্রাণীর পাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উদ্ধারকৃত পিঁপড়াগুলোর মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার মেসর সেপ্যালোটস জাতের বড় লাল পিঁপড়া, যা ফসল সংগ্রহের জন্য বিখ্যাদ। এ জাতের রাণী পিঁপড়াগুলো ২০ থেকে ২৪ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

পিঁপড়া কেনাবেচার ওয়েবসাইট ‘অ্যান্ট আর ইউএস’ থেকে জানা যায়, এই পিঁপড়াগুলোর আচরণের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাছাড়া এরা নিজেদের কলোনি (পিঁপড়াদের নির্মিত বাসস্থান) তৈরিতে খুবই দক্ষ। এ কারণে এটি অনেকেরই ‘স্বপ্নের প্রজাতির পিঁপড়া’। এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য বিদেশে এই পিঁপড়াগুলোর চাহিদা বেড়েছে।

কেনিয়ার বন কর্মকর্তাদের মতে, এই পাচারের ঘটনা কয়েক দশক ধরে মানুষের মধ্যে বিদ্যমান এক বিচিত্র শখের সঙ্গেও সম্পর্কিত। পিঁপড়া পালন ও সংগ্রহ করার শখ সম্প্রতি অনেক মানুষের মধ্যে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পিঁপড়া বিক্রেতা জানান, পিঁপড়ার বাজার ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং প্রতিবছরই বিক্রি বাড়ছে। পাশাপাশি ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে একটু প্রকৃতির পরশ পেতে অনেকেই পিঁপড়া পালন করতে আগ্রহী হচ্ছেন। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের কার্যকলাপের কারণে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। পিঁপড়াগুলোকে যদি তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থলের বাইরে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে পালন করা হয়, তাহলে তারা আক্রমণাত্বক হয়ে উঠতে পারে। পরিবেশ ও অর্থনীতি উভয় ক্ষেত্রেই এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।

কেনিয়ার জীববিজ্ঞানী ডিনো মার্টিন বলেন, আফ্রিকার সাভান্না অঞ্চলের হারভেস্টার পিঁপড়াগুলো (ফসল সংগ্রহকারী পিঁপড়া)) সবচেয়ে বেশি পাচার হচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক ইকোসিস্টেমের (বাস্তুসংস্থান) ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ar

হারভেস্টার পিঁপড়াগুলো নিজেদের খাদ্য হিসেবে ফসলের বীজ সংগ্রহ করে থাকে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তাদের (পিঁপড়াদের) একেকটি কলোনি থেকে কয়েক কেজি ফসলের বীজ পাওয়া যায়। বীজগুলো নিজেদের কলোনিতে নিয়ে আসার সময় কিছু আবার জমিতে পড়েও যায়। এগুলো আবার অন্যান্য প্রাণীরাও খায়।

বিস্ময় প্রকাশ করে কেনিয়ার এই জীববিজ্ঞানী বলেন, আমার কাছে অবাক লাগে পাচারকারীরা এখন কেনিয়ার পিঁপড়াগুলোর ওপরও নজর দিয়েছে!

এ ধরনের কীটপতঙ্গকে বাজারজাত করতে চাইলে তা পরিকল্পিতভাবে করার পরামর্শ দিয়েছেন ডিনো মার্টিন। তিনি মনে করেন, নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এসব কীটপতঙ্গ উৎপাদন করে বিক্রি করা সম্ভব, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। এক্ষেত্রে তিনি কেনিয়ার কেপেপো প্রকল্পের উদাহরণ দেন।

এ বিষয়ে আফ্রিকার বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থার সহ-সভাপতি ফিলিপ মুরোথি বলেন, পিপঁড়া প্রকৃতির জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি জীব। এটি মাটিকে সমৃদ্ধ করে, ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে, অন্যান্য প্রাণীকে খাবার সরবরাহ করে।

একটা সুন্দর বন দেখতে সবারই ভালো লাগে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তবে কিভাবে এই বনটি গড়ে উঠল তা অনেকেই ভেবে দেখেন না। এর পেছনে পিঁপড়া কিংবা ব্যাকটেরিয়ার মতো ছোট জীব থেকে শুরু করে বিশালাকার প্রাণী সবার মধ্যকার আন্তঃসম্পর্কই জরুরি।

আরটিভি/আইএম

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission