প্রায় আড়াই দশকে ১০টি যুদ্ধ দেখেছে বিশ্ব। শুরুটা ইরাক দিয়ে, শেষ ভারত-পাকিস্তান। বর্তমানে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলা। যুদ্ধক্ষেত্রের সামরিক শক্তির প্রতীক হিসেবে ট্যাংক খুব গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশেষ রাশিয়ার-ইউক্রেনে হামলার শুরু দিকে ট্যাংকের দীর্ঘ বহর দেখেছে বিশ্ব। অনেকের মনে কৌতূহল জাগতে পারে যুদ্ধক্ষেত্রের ‘রাজা’ খ্যাত এই ট্যাংক কোন দেশে কত আছে? তাই আর দেরি না করে জেনে নিনি শীর্ষ ১০টি দেশের ট্যাংকবহরের বিবরণ।
বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ৬ হাজার ৮০০ ট্যাংক আছে চীনের। তাদের বহরে ‘টাইপ ৯৯’ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ‘টাইপ ৯৯এ’ মডেলের ট্যাংক রয়েছে। ট্যাংকগুলোতে ১২৫ মিমি কামান, উন্নত ফায়ার কন্ট্রোল, স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশন, থার্মাল ইমেজিং ও সক্রিয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে।
একসময় রাশিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্যাংকবহরের মালিক বলা হতো। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিপুলসংখ্যক ট্যাংক হারিয়েছে দেশটি। আগে রাশিয়ার বহরে ১২ হাজার ৫৫৬টি ট্যাংক থাকলেও এখন আছে ৫ হাজার ৭৫০টি। বর্তমানে দেশটি প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার ৫০০ ট্যাংক উৎপাদন করছে, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সম্মিলিত উৎপাদনের চেয়ে তিন গুণ বেশি। পুতিনের দেশে টি-৭২, টি-৮০, টি-৯০ এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির টি-১৪ আর্মাতা মডেলের ট্যাংক রয়েছে। এরমধ্যে টি-১৪ অটোমেটেড টারেট, ক্রু সুরক্ষা ক্যাপসুল ও আধুনিক সেন্সর রয়েছে।
তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কাছে রয়েছে ৪ হাজার ৬৪০টি ট্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ট্যাংকের নাম এম১ আব্রামস, যা ১৯৮০ সাল থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ট্যাংকের আধুনিক সংস্করণগুলো হলো এম১এ১, এম১এ২ এবং এম১এ২ সেপ। ইরাক, আফগানিস্তান ও উপসাগরীয় যুদ্ধে এম১ আব্রামস ব্যবহার করা হয়েছিল।
উত্তর কোরিয়ার বহরে প্রকৃত কতটি ট্যাংক রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে, ধারণা করা হয় দেশটিতে ৪ হাজার ৩৪৪টি ট্যাংক রয়েছে। সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি টি৩৪/৮৫, টি৫৫ এবং চীনের টাইপ-৫৯ মডেলের ট্যাংক ব্যবহার করে দেশটি। পাশাপাশি নিজেদের নকশা করা চনমা-হো, পোকপুঙ-হো এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চিওনমা-২ মডেলের ট্যাংকও রয়েছে দেশটির।
পঞ্চম অবস্থানে থাকা ভারতের ট্যাংক সংখ্যা ৪ হাজার ২০১টি। ভারতের প্রধান ট্যাংক ‘অর্জুন’। নিজেদের তৈরি এই ট্যাংক অত্যাধুনিক প্রযুক্তির। এতে ডিজিটাল ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম, ১২৫ মিমি স্মুথবোর কামান, উন্নত বর্ম ও অ্যাকটিভ প্রটেকশন সিস্টেম রয়েছে। এ ছাড়া দেশটি সোভিয়েত আমলের তৈরি টি-৯০ ও টি-৭২ মডেলের ট্যাংক রয়েছে।
মুসলিম দেশ মিসরের কাছে আছে ৩ হাজার ৬২০ ট্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম১এ১ আব্রামস দেশটির প্রধান ট্যাংক। এ ছাড়া সোভিয়েত আমলের তৈরি টি-৫৫ ও টি-৬২ মডেলের ট্যাংকও ব্যবহার করে মিসর। দেশটির ট্যাংকবহর মধ্যপ্রাচ্যে অন্যতম বৃহৎ।
এদিকে, নিজেদের বহরে থাকা ট্যাংকের সংখ্যায় ভারতকে পেছনে ফেলতে পারেনি পাকিস্তান। দিল্লির কাছে ৪ হাজার ২০১টি ট্যাংক থাকলেও পাকিস্তানের আছে ২ হাজার ৬২৭টি। ইসলামাবাদের প্রধান ট্যাংকগুলো হলো আল-খালিদ, আল-জারার, টি-৮০ইউডি, টি-৫৯। চীনের সহায়তায় তৈরি আল-খালিদে ১২৫ মিমি কামান, উন্নত ফায়ার কন্ট্রোল ও স্বয়ংক্রিয় লোডার রয়েছে। টি-৮০ইউডি রাশিয়া থেকে আমদানিকৃত দ্রুতগামী ট্যাংক।
তালিকায় অষ্টম অবস্থানে তুরস্ক। দেশটির কাছে ট্যাংক রয়েছে ২ হাজার ২৩৮টি। তুরস্কের ট্যাংকবহরে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম৬০ প্যাটন, জার্মানির লেপার্ড১ ও লেপার্ড২ এবং নিজেদের তৈরি আলতাই রয়েছে। নিজেদের নকশা করা আলতাই ট্যাংক ১২০ মিমি স্মুথবোর কামান, উন্নত বর্ম, থার্মাল সেন্সর এবং ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম রয়েছে। লেপার্ড২ অত্যাধুনিক সুরক্ষা ও নির্ভুল আক্রমণক্ষমতা দিয়ে সজ্জিত।
দক্ষিণ কোরিয়ার ট্যাংকের সংখ্যা ২ হাজার ২৩৬টি। দেশটির প্রধান ট্যাংক কে২ ব্ল্যাক প্যানথার। নিজেদের তৈরি এই ট্যাংকে প্রায় সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। তারা ট্যাংক তৈরিতে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। ব্ল্যাক প্যানথার বিশ্বের অন্যতম সেরা ও ব্যয়বহুল ট্যাংক হিসেবে পরিচিত। এটি কয়েকটি দেশেও রপ্তানি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া।
এছাড়া তালিকার তলানিতে রয়েছে ইরান। তাদের কাছে রয়েছে ১ হাজার ৭১৩টি ট্যাংক। ইরানের ট্যাংকবহর বৈচিত্র্যময় এবং দেশীয়ভাবে তৈরি ও বিদেশি ট্যাংকের সমন্বয়ে গঠিত। দেশটির প্রধান ট্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে সোভিয়েত রাশিয়ার তৈরি টি-৭২, টি-৫৫ ও টি-৬২। নিজেদের তৈরি ট্যাংক হলো জুলফিকার ও কারার।
আরটিভি/আরএ