ত্বকের যত্নের কথা শুনলে প্রথমেই মাথায় আসে মুখের যত্নের কথা। কিন্তু একই সঙ্গে হাত, পায়েরও যে যত্ন নেওয়া উচিত, সেই কথা হয়তো অনেকেই ভুলে যান। তবে খেয়াল রাখবেন, আপনার মুখেও যেমন বয়সের ছাপ পড়ে, একইভাবে আপনার হাতেও কিন্তু বলিরেখা প্রকট হতে শুরু করে। সময়ের আগেই হাতের তালু খসখসে হয়ে চামড়া কুঁচকে যেতে পারে। এ রকম যদি না চান, তবে আজ থেকেই হাতের যত্ন নিতে শুরু করুন। শীতকালে এমনিই ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
তাই এই শীতে কীভাবে হাতের যত্ন নেবেন জেনে নিন-
ময়েশ্চারাইজার : হাতের যত্নে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে একদম ভুলবেন না। আসলে ময়েশ্চারাইজারে থাকা নিউট্রিয়েন্ট আপনার হাতকে নরম মখমলি বানাতে সাহায্য করে। তাই আজই পারলে দোকান থেকে আপনার পছন্দের ময়েশ্চারাইজারটি কিনে আনুন, আর নিয়ম করে কাজের ফাঁকে হাতে মাখুন।
গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখুন : আপনার হাতের পাতা কি শুকিয়ে কাঠের মতো হয়ে গেছে, এ নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।
পদ্ধতি : হালকা গরম পানি করুন, তারপর মিনিট দশেক আপনার হাত পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। আর সম্ভব হলে ৩ থেকে ৪ ফোঁটা অরেঞ্জ এসেনশিয়াল অয়েল বা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েলও দিতে পারেন। দেখবেন বেবি সফট হাতের রহস্য আপনার হাতের মুঠোয়।
পাতিলেবু : হাতের যত্নে পাতিলেবু বেশ কার্যকর। সুপার সফট হাত, আর উজ্জ্বল, মসৃণ হাত এ দুটো যদি একসাথে চান, তাহলে পাতিলেবুর আশ্রয় আপনাকে নিতেই হবে।
উপকরণ : ২ থেকে ৩ চামচ পাতিলেবুর রস, ২ চামচ মধু, ১ চামচ বেকিং সোডা।
পদ্ধতি : মধু, পাতিলেবুর রস আর বেকিং সোডা একসাথে মিশিয়ে হাতে ভালো করে মেখে ফেলুন। এরপর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। তারপর দেখবেন হাত নরম তুলতুলে হয়ে গেছে।
এক্সফোলিয়েট করুন : হাতে মরা চামড়া জমে থাকলে তাও কিন্তু আপনার হাতকে খসখসে করে দিতে পারে। এরকম হলে এক্সফোলিয়েট করুন। হালকা গরম পানিতে হাত ধুয়ে নিন। তারপর আপনার পছন্দের কোনো স্ক্রাব ব্যবহার করে এক্সফোলিয়েট করা শুরু করুন। আর চান যদি তাহলে এই স্ক্রাব কিন্তু বাড়িতেও তৈরি করতে পারেন।
উপকরণ : ৪ চামচ মসুর ডাল গুঁড়া, দুধ পরিমাণমতো।
পদ্ধতি : মুসুর ডাল গুঁড়া আর দুধ নিয়ে একটা পেস্ট বানান। তারপর হাতে ভালো করে ঘষে ঘষে স্ক্রাবিং করে নিন। দেখবেন মরা চামড়াও ভ্যানিশ, আর আপনার হাতও কেমন নরম হয়ে গেছে।
দই আর বেসন : আপনার হাতকে সহজে নরম করতে চাইলে, তাও আবার তাড়াতাড়ি, তাহলে এই মিশ্রণটা কিন্তু আপনার জন্যি। বেসন আপনার হাতকে উজ্জ্বল, মসৃণ তো করবেই, আর সেই সাথে দইও আপনার হাতকে মোলায়েম করে তুলবে।
উপকরণ : ৪ চামচ বেসন, ২ চামচ দই।
পদ্ধতি : দই আর বেসন দিয়ে একটা স্মুদ পেস্ট তৈরি করে নিন। তারপর আপনার হাতে ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট রেখে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। দিনে ২ বার করে টানা ২ সপ্তাহ হাতে মেখেই দেখুন, উপকার পাবেন।
চিনি আর অলিভ অয়েল : জানেন কি, চিনি আপনার হাতকে দারুণভাবে এক্সফোলিয়েট করতে পারে। আর অলিভ অয়েল আপনার ত্বককে মসৃণ, নরম তো করেই। আর তাছাড়া অলিভ অয়েলে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও থাকে, যা আপনার ত্বককে উজ্জ্বলও করে তোলে।
উপকরণ : ২ চামচ চিনি, ২ চামচ অলিভ অয়েল।
পদ্ধতি : চিনি আর অলিভ অয়েল মিশিয়ে ভালো করে আপনার দু’হাতে মেখে ফেলুন। তারপর ভালো করে ম্যাসাজ করে করে স্ক্রাব করুন। মিনিট দশেক পরে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩ দিন নিয়ম করে করুন। মাখনের মতো বেবি সফট হাত পেয়ে যাবেন।
নারকেল তেল : চুলের জন্যে নারকেল তেল যে দারুণ উপকারী, এ কথাতো শুনে আসছেন। কিন্তু হাতের জন্যও নারকেল তেল, এ কথা শুনেছেন কি? তাহলে এবার শুনে নিন, হাতের যত্নেও নারকেল তেল জাদুর মতো কাজ করে।
উপকরণ : ৪ চামচ নারকেল তেল।
পদ্ধতি : নারকেল তেল একটা বাটিতে নিয়ে হালকা করে গরম করুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে হাতে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। তারপর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। নরম হাত তো পাবেনই, আর যদি হাতে ট্যান থাকে তাও দেখবেন নিমিষে ভ্যানিশ হয়ে যাবে।
মিল্ক থেরাপি : দুধে যে প্রচুর প্রোটিন, ল্যাক্টোজ আর নিউট্রিয়েন্টস থাকে তা তো জানেনই। আর নরম হাত পেতে এই মিল্ক থেরাপি ব্যবহার করেই দেখুন। কেমন নিমিষেই আপনার হাতকে তুলতুলে করে দিবে।
পদ্ধতি : একটা পাত্রে কিছুটা ঈষদুষ্ণ দুধ নিয়ে ১৫ মিনিট ধরে হাত ডুবিয়ে রাখুন। দিনে ২ থেকে ৩ বার করে এক সপ্তাহ কষ্ট করে ফলো করেই দেখুন। তারপর ম্যাজিক রেজাল্ট পাবেনই পাবেন।
মালাই বা ক্রিম : রান্না শেষে সবসময় হ্যান্ডওয়াস ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু জানেন কি, আপনার খসখসে রুক্ষ হাতকে মখমলের মতো বানাতে হ্যান্ডওয়াস দিয়ে হাত ধোয়ার পর হাতকে নরম করতে ক্রিমের জুড়ি নেই। ক্রিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা আপনার হাতকে নরম আর ক্রিমি করে তোলে সহজেই।
উপকরণ : ৪ চামচ মালাই, ১ চামচ বাদাম তেল।
পদ্ধতি : মালাই বা ক্রিম আর বাদাম তেল একসাথে মিশিয়ে তা হাতে মেখে ফেলুন। তারপর ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। দিনে ৩ থেকে ৪ বার করেই দেখুন না। ফলাফলে আপনি নিজেই অবাক হবেন।