কৈশোরে ব্রণের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। কারও কারও ক্ষেত্রে বেশি বয়সেও ব্রণের প্রবণতা দেখা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক যারা নিয়মিত ব্রণের সমস্যায় ভোগেন, তাদের দেখা যায় শরীরে হরমোনের তারতাম্য রয়েছে। সেই কারণেই ঘনঘন কপাল, চিবুক, নাকের চারপাশ, গাল, ঘাড়, গলা, পিঠ, বুকে, এমনকি হাতেও ব্রণ হচ্ছে।
শরীরে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে অত্যধিক হলে, ত্বকে সেবাম কোষগুলো বেশি কার্যকর হয়ে ওঠে। তখন ত্বক তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। সঙ্গে চুল ওঠার সমস্যা বেড়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে লাল হয়ে ব্রণ হয়। বেশির ভাগ ব্রণই বেদনাদায়ক। এতে অনেকের শরীরে অবাঞ্ছিত লোমের পরিমাণও বেড়ে যায়।
এই ধরনের ব্রণ বাইরে থেকে ত্বকের যত্ন নিয়ে সারানো সম্ভব নয়। যতই ঘরোয়া টোটকায় ভরসা রাখুন, ব্রণ ফিরে আসবে। শুধু তেল-মশলা না খাওয়া কিংবা বেশি করে পানি পান করেও কাজে লাগবে না। এই ধরনের ব্রণের সঙ্গে লড়ার প্রাথমিক উপায় ব্রণ হওয়ার আসল কারণ খুঁজে বের করা। সাধারণত দু’টি কারণে ব্রণ হতে পারে।
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স
শরীরে ইনসুলিন তৈরি হওয়ার পরেও, যদি এটি সঠিকভাবে কাজ না করে। তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। এই কারণে আপনার ডিম্বাশয়ে বেশি পরিমাণে অ্যান্ড্রোজেন তৈরি করে। তা থেকেই সিস্ট তৈরি হয় এবং তাতেই কপাল, গাল, চিবুক ব্রণে ভরে যায়।
দীর্ঘ প্রদাহ
এক সময় ব্রণ দেখলেই বাড়ির বয়স্করা (মা-দাদি) বলতেন, পেট পরিষ্কার হচ্ছে না। কথাটা শুনে বিরক্ত লাগলেও, হজমশক্তি এবং ব্রণের সঙ্গে এর গভীর যোগ রয়েছে। যদি আপনার শরীরে কোনোরকম দীর্ঘ প্রদাহ থাকে, তাহলে হজমশক্তি কমে যায়। খাবার হজম হতে সমস্যা হয় এবং প্রত্যেক দিন পেট পরিষ্কার হতেও অসুবিধা হয়। এই কারণেও শরীরে অ্যান্ড্রোজেন উৎপাদন বেড়ে যেতে পারে। যার জন্য অনেকেই পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হন। এর ফলে ব্রণের সমস্যাও যেতে চায় না।
কীভাবে সমাধান করবেন?
ঠিক কী কারণে আপনার শরীরে অ্যান্ড্রোজেন বেশি, তা খুজে বের করতে হবে। যদি আপনার শরীর ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হয়, তাহলে খাদ্যাভ্যাসে বদল আনতে হবে। গ্লাইসেমিক সূচক কম, এমন খাবার খান। গমের রুটির বদলে জোয়ার, বাজরা ও রাগির রুটি খেতে পারেন। কার্বোহাড্রেট কমিয়ে খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি রাখুন। খুব ঘন ঘন মুখ চালাবেন না। খাবার হজম করতে শরীরকে সময় দিন।
যদি পেটে প্রদাহের সমস্যা থাকলে, খুঁজে বের করতে হবে কোন খাবারে আপনার সমস্যা বেশি হচ্ছে। অনেকের দুগ্ধজাত খাবারে সমস্যা হয়। অনেকের গ্লুটেনে সমস্যা হয়। এক মাস করে এগুলো খাওয়া বাদ দিয়ে দেখতে হবে, পেট এবং ত্বক কেমন থাকছে। নিয়মিত খাবারে প্রোবায়োটিক রাখুন। সেটা দই, আচার, ইডলি বা ধোসা হতে পারে, কিংবা কম্বুচা পানীয়ও হতে পারে।
সিস্টিক অ্যাকনে বা হরমোনের তারতম্যের জন্য যে ব্রণ হয়, তা সম্পূর্ণ সারিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে সময় লাগবে। রাতারাতি কোনো বদল আশা করবেন না। জীবনযাপন বদলাতে নিজেকেও কিছুটা সময় দিন। ধৈর্য ধরে নিয়ম মেনে চললে সুফল নিশ্চয়ই পাবেন।