ঢাকা

রাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে স্থানীয় সিন্ডিকেটের আধিপত্য

রাবি প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

বুধবার, ০৯ নভেম্বর ২০২২ , ০৬:১৯ পিএম


loading/img
ছবি : সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সর্বপ্রথম কমিটি ঘোষণা হয় ১৯৬২ সালে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একটি আহ্বায়ক কমিটিসহ গঠিত হয়েছে মোট ২৫টি কমিটি। আর এসব কমিটির শীর্ষ দুই পদে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়িত্ব পেয়ে আসছেন স্থানীয়রা। 

বিজ্ঞাপন

যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শীর্ষ এই দুই পদে আসার দৌড়ে সবসময় পিছিয়ে থাকছেন অন্য জেলার নেতাকর্মীরা। এবারও স্থানীয়দেরই নির্বাচিত করার প্রক্রিয়া চলছে বলে ক্যাম্পাসজুড়ে গুঞ্জন চলছে। এতে রাজশাহীর বাইরে থেকে উঠে আসা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তারা বলছেন, বাইরের জেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা এখানে ছাত্রলীগের রাজনীতি করলেও কেবল স্থানীয়রাই শীর্ষ দুই পদে প্রাধান্য পাচ্ছেন। ফলে শেষ পর্যন্ত উৎসাহ হারিয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক নেতাই রাজনীতি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। রাবির মতো এতো বড় পরিসরে বরাবরই বাইরের নেতৃত্ব না আসায় হচ্ছে না জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি, যা আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, রাবিতে শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন জেলার নেতারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হলেও ১৯৮৮ সাল থেকে ক্রমেই তা রাজশাহী বিভাগে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। ২০১৩ সাল থেকে শীর্ষ দুই পদে দায়িত্ব পাওয়া ছয় জন নেতারই বাড়ি রাজশাহী জেলায়। বর্তমান কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার বাড়ি ক্যাম্পাস সংলগ্ন বুধপাড়ায় ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর পবা উপজেলার নওহাটায়।

এর আগে ২০১৫ সালে দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু ও সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লবের বাড়ি ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেহেরচণ্ডি ও কাজলায়। ২০১৩ সালে দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রহমান রানার বাড়ি বাগমারা ও সম্পাদক তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের বাড়ি বাঘা উপজেলায়। এ ছাড়া ২০১০ সালের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম অপুর বাড়ি ক্যাম্পাস-সংলগ্ন তালাইমাড়িতে।

১৯৮৮ সালে সাধারণ সম্পাদক হন নগরীর কাটাখালির শরিফুল ইসলাম শরীফ, ১৯৯২ সালে বাঘা উপজেলার লায়েব উদ্দিন লাভলু, ১৯৯৭ সালে নগরীর পঞ্চবটির আহসানুল হক পিন্টু, ২০০২ সালে আহ্বায়ক হন ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুরের কামরুজ্জামান চঞ্চল, ২০০৪ সালে সাধারণ সম্পাদক হন মোহনপুর উপজেলার আয়েন উদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

আগামী ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনে পদপ্রার্থীদের বেশির ভাগই ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকার। নেতা হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা ছাত্রলীগ নেতা কাজী আমিনুল হক লিংকনের বাড়ি ক্যাম্পাস সংলগ্ন মেহেরচণ্ডিতে, শাহিনুল ইসলাম সরকার ডনের বাড়ি নগরীর বুধপাড়ায়, এনায়েত রাজুর বাড়ি নগরীর ভদ্রায়, মেহেদী হাসান মিশুর বাড়ি নগরীর কাটাখালিতে, আসাদুল্লাহ-হিল-গালিবের বাড়ি ক্যাম্পাস সংলগ্ন কাজলায়। স্থানীয় এই নেতাদের মধ্যেই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জোর গুঞ্জন উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে রাবি ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জীবন বৃত্তান্ত দিয়েছেন অন্য জেলাগুলো থেকে আসা নেতাকর্মীরা। এদের মধ্যে রয়েছেন, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি মেজবাহুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ ও শেখ মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক তাওহীদ দুর্জয় প্রমুখ। যোগ্যতা থাকলেও অন্য জেলার কেউ শীর্ষ দুই পদে পাবেন না বলে নেতাকর্মীদের মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

আসন্ন কমিটির পদপ্রার্থী সহসভাপতি মেজবাহুল ইসলাম বলেন, রাবি ছাত্রলীগের কমিটিতে দীর্ঘদিন অন্য জেলার নেতারা মূল্যায়িত না হওয়ায় একটা দীর্ঘশ্বাস আছে। অন্য জেলার কেউ আসলে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্বদানের সক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু সঠিক মূল্যায়ন না হলে অনেকে রাজনীতি থেকে সরেও যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সুরুজ আলী বলেন, রাবিতে বর্তমানে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে যেই ধারাটা চলছে এটা দলের জন্য ভালো না। নিয়মিত স্থানীয়রা নেতৃত্বে আসায় এখান থেকে এক দিকে জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। অপরদিকে আমরা যারা বাইরে থেকে এসে রাজনীতি করছি, তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। এভাবে চলতে থাকলে আমরা নিজেও আমাদের এলাকা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের এখানে রাজনীতি করতে নিরুৎসাহিত করব।

রাবি ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য সাহানুর শাকিল বলেন, স্থানীয় রাজনীতির সমীকরণ মেলানোর জন্য রাবিতে সবসময় স্থানীয় নেতাদের পদায়ন করা হয়। রাজশাহীর নেতারা হয়তো মনে করছেন, এখানে স্থানীয় নেতা বের করতে পারলে তাদের হাত শক্ত হবে। বাহিরে থেকে এসে রাবিতে জীবন হাতে রেখে রাজনীতি করতে হয়। যখন শীর্ষ পদ পাওয়ার সুযোগ থাকে না, তখন অনেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। এর ফলে, জাতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগেরই নেতৃত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |