আমার আব্বু। আর দশজনের মতোই। তেমন অসাধারণ কিছু না। সুপার হিরো টাইপ ও না। আর সবার মতোই। কিন্তু এই সাধারণ আব্বুই মাঝে মাঝে আমার কাছে অতি সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠে। যেটা আমার কখনোই আব্বুকে সেভাবে বলা হয়ে ওঠেনি।
একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। সময় ২০০৮। মেডিকেল এডমিশন টেস্ট। রেজাল্ট তখনো হয়নি। কিন্তু আমার পরীক্ষা আশানুরূপ হয়নি। রেজাল্ট খারাপ হলে আব্বুর মন খারাপ হবে, হয়ত বা রাগ হবে। কিন্তু কেন জানি তখন আব্বুর কথা মাথায় আসছিল না। নিজের কথা মনে হয়েই মন ভারী হয়ে যাচ্ছিল, একটু পর পরই কান্না পাচ্ছিল। আব্বু হঠাৎ আমার কাছে আসল। আব্বুকে দেখে আমার অপরাধবোধ কয়েকগুণ বেড়ে গেল। কিন্তু আব্বু আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার মাথায় হাত রেখে বলল, "তুমি তো কখনো পড়াশোনায় ফাঁকি দাওনি। আগে রেজাল্ট দিক। না হলে ১ বছর বাসায় থেকে পড়ে যদি আবার দিতে চাও, দিও। বেসরকারিতে পড়তে চাইলে সেটাও আমি চেষ্টা করব। তোমাকে নিয়ে আমাদের কোন কমপ্লেইন নেই।" এই কথাগুলো বলে আব্বু কি করে ফেলল আব্বু নিজে জানত কিনা জানি না। এই কথাগুলো আমার সারাজীবনের পুঁজি হয়ে গেল।
আমার রেজাল্ট দিল। আমি খুলনা মেডিকেল কলেজে চান্স পেলাম। আমার আব্বুর কি খুশি! এরপরে জীবনে যত পরীক্ষাই দিয়েছি দেশে বিদেশে। সবসময় আব্বুর কথা মনে পড়েছে। যখনি ভেংগে পড়তে নিয়েছি আব্বুর সেই কথাগুলো মনে পড়ছে। নিজেকে বারবার বলেছি "মুনা ফাইট ব্যাক। আব্বুর মুখে হাসি আসবে।" এবং সব রেজাল্ট দেওয়ার পরে আমি সবার প্রথমে আব্বুকেই কল দিয়ে বলি। আব্বুর সেই হাসি আমার চোখের সামনে ভাসে। আমার প্রতি আব্বুর ভালোবাসা আব্বু অনেকভাবেই প্রকাশ করে। আমি আব্বুর মতো পারি না। আব্বু তুমি হয়তো জানো না আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
(রেসিডেন্ট, কার্ডিওলজি, বিএসএমএমইউ)