বাংলাদেশে শিশুদের জন্য সুষম পুষ্টির গুরুত্ব

আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ , ০৮:০৭ পিএম


বাংলাদেশে শিশুদের জন্য সুষম পুষ্টির গুরুত্ব
ছবি: সংগৃহীত

শিশুরা একটি জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের সুস্বাস্থ্য এবং সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি সমাজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও অনেক শিশু পুষ্টিহীনতার কারণে তাদের সম্ভাব্য শারীরিক ও মানসিক দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। পুষ্টিহীনতা একটি অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ, যা ধীরে ধীরে শিশুর বিকাশ ও জাতীয় উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সুষম পুষ্টি একটি শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে। এটি শুধু তাদের ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য নয়, বরং সমগ্র জাতির অগ্রগতির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার শিশুদের সুস্বাস্থ্য এবং সঠিক বিকাশের উপর। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশে এখনও অনেক শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। সুষম পুষ্টি শুধু একটি শিশুর সুস্থতার জন্য নয়, বরং জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সুষম পুষ্টি কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ

বিজ্ঞাপন

সুষম পুষ্টি বলতে শরীরের সকল প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের যথাযথ মাত্রায় গ্রহণকে বোঝায়। এর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, চর্বি, ভিটামিন, মিনারেল এবং পানি অন্তর্ভুক্ত। শৈশবকালীন সুষম পুষ্টি শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এবং দৈহিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।

যে শিশুরা পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না, তাদের মধ্যে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে

১. শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া: পুষ্টির অভাবে শিশুদের উচ্চতা এবং ওজন গড় মানের চেয়ে কম হতে পারে।
২. রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব: অপুষ্ট শিশু সহজেই নানা রোগে আক্রান্ত হয়।
৩. মস্তিষ্কের বিকাশের ঘাটতি: পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়া শিশুদের শেখার ক্ষমতা এবং মনোযোগের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
৪. দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা: পুষ্টিহীনতার কারণে ডায়বেটিস, হৃদরোগ এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশে পুষ্টিহীনতার বর্তমান চিত্র

বাংলাদেশে পুষ্টিহীনতা একটি গুরুতর সমস্যা। ইউনিসেফের মতে, দেশের প্রায় ৩৬% শিশু অপুষ্টির শিকার। অনেক শিশুর মধ্যেই ভিটামিন এ, আয়রন, এবং জিঙ্কের অভাব রয়েছে। এই অভাবের কারণে শিশুরা শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পিছিয়ে পড়ছে।

পুষ্টিহীনতার পেছনের মূল কারণগুলো হলো

১. ক্রয়ক্ষমতার অভাব: অনেক পরিবার তাদের শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত এবং পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করতে পারে না।
২. অজ্ঞতা: পুষ্টির বিষয়ে সচেতনতার অভাবে অনেক অভিভাবক সঠিক খাবার নির্বাচন করতে পারে না।
৩. পরিবেশগত সমস্যা: নিরাপদ পানি এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভাবে শিশুদের মধ্যে রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়, যা পুষ্টি শোষণে বাধা দেয়।
৪. খাদ্য বৈচিত্র্যের অভাব: অনেক শিশুর খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অভাব থাকে।

সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য কী কী করা যেতে পারে

বাংলাদেশে শিশুদের সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে

১. পুষ্টি শিক্ষা প্রদান: অভিভাবক এবং সমাজের অন্যান্য সদস্যদের পুষ্টি সম্পর্কে সচেতন করতে প্রশিক্ষণ ও কর্মসূচি চালানো জরুরি।
২. স্কুল পর্যায়ে খাবার সরবরাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পুষ্টিকর মধ্যাহ্নভোজ চালু করা যেতে পারে, যা শিশুদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।
৩. জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচি: গর্ভবতী মা এবং শিশুদের জন্য বিশেষ পুষ্টি সরবরাহ কর্মসূচি চালু করা প্রয়োজন।
৪. দারিদ্র্য হ্রাস: দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাড়ানো প্রয়োজন।
৫. নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা: পরিচ্ছন্ন পানি এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ শিশুদের পুষ্টি শোষণ ও স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।

বাংলাদেশের শিশুদের জন্য সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করা একটি মৌলিক প্রয়োজন, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে। এটি শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবনের উন্নতি নয়, বরং একটি জাতির টেকসই উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। পুষ্টিহীনতার সমস্যা মোকাবিলায় সরকার, পরিবার এবং সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। সচেতনতা বৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মানোন্নয়নের মাধ্যমে আমরা শিশুদের জন্য একটি সুস্থ এবং প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করতে পারি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা একটি মেধাবী ও সমৃদ্ধিশালী প্রজন্ম গড়ে তুলতে সক্ষম হব, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করবে।

বাংলাদেশের শিশুদের জন্য সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করা জাতির ভবিষ্যৎ উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। এটি শুধু তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে। পুষ্টিহীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে সরকার, পরিবার, এবং সমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে। সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা একটি স্বাস্থ্যকর এবং মেধাবী প্রজন্ম তৈরি করতে পারব, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করবে।

আরটিভি/একে/এআর

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission