ঢাকাশনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

ফেসবুকে সোহেল তাজ

আওয়ামী লীগই শেষ ঠিকানা

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৬ , ০৬:৪৪ পিএম


loading/img

রাজনীতিতে না থাকলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাবা তাজউদ্দীন আহমদের আদর্শের আওয়ামী লীগই তার শেষ ঠিকানা। বললেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ।

বিজ্ঞাপন

সংগত কারণেই এমপি-মন্ত্রির পদ ছেড়েছিলেন জানিয়ে ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, সব খোলাসা না করারও যথেষ্ট কারণ আছে।

তাকে নিয়ে জল্পনা-কল্পনা নিরসনে মুখ খুললেন সোহেল তাজ।

বিজ্ঞাপন

স্ট্যাটাসের পাশাপাশি ফেসবুকে পুরনো একটি চিঠিও শেয়ার করেন তিনি।

গেলো ১৪ অক্টোবর দেশের মানুষের জন্য সময়-শ্রম উৎসর্গ করবেন জানিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে সবার মনোযোগ কাড়েন তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। সবার মতামত ও গঠনমূলক পরামর্শও চান তখন তিনি।

এরপর এলো আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদ পেতে পারেন সোহেল তাজ।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, আপনাদের মন্তব্য এবং পত্র-পত্রিকায় কিছু সংবাদ পড়ে মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে আমাকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হবে, এমনটাই ভেবে নিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে অনেক বিভ্রান্তিকর খবর বেরোয়। এমনও প্রচার হয়েছে, আমি দেশে ফিরেছি কাউন্সিলের কারণে। স্পষ্টভাবে বলছি, এসব ঠিক নয়। আমি কোনো পদ কারো কাছে চাইনি এবং আশাও করিনি। কারণ বর্তমানে আমি রাজনীতিতে সক্রিয় না।

ফেসবেুকে অনেক মতামত পেয়েছেন জানিয়ে সোহেল তাজ লিখেছেন, গত ক’দিন ধরে আপনাদের মন্তব্যগুলো আমি মনোযোগের সঙ্গে পড়েছি। আমার প্রতি আপনাদের অনুভূতি, ভালবাসা ও আন্তরিকতা আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। আমি যদি আপনাদের কাউকে কোনো কারণে কষ্ট দিয়ে থাকি ক্ষমা করে দেবেন। সেটা কখনোই আমার উদ্দেশ্য ছিল না।

আমার কাছে এটিও প্রতীয়মান হয়েছে, আপনারা অনেকেই আমার প্রতি ভালবাসার কারণে আমার অনেক প্রশংসা করেছেন, সেজন্য আমি অভিভূত এবং কৃতজ্ঞ। যদিও জানি না আমি এ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য কিনা। ভাল মন্দ, ন্যায় অন্যায়, হাসি কান্না, সুখ দুঃখ, ভুল ত্রুটি, চড়াই উৎড়াই নিয়েই একটি মানুষ। আর সে মানুষকে নিয়েই সমাজ। আমিও সে সমাজেরই একজন। তবে আমার ব্যক্তি জীবনে এবং রাজনীতিতে সবসময় চেষ্টা করেছি বাবা মা’র আদর্শ বুকে নিয়ে নিজেকে পরিচালিত করতে।

সবার দোয়া চাই। যেন ব্যবসা বাণিজ্য চাকরি বা সামাজিক কাজ, ভবিষ্যতে যা ই করি- তা সৎভাবে, স্বচ্ছভাবে করতে পারি।

শেয়ার করা ২০১২ সালের ওই চিঠিতে সোহেল তাজ বলেন,  

যুক্তরাষ্ট্রে অনেক কষ্টে গড়ে তোলা জীবন আমার। কিশোর বয়স থেকে নিজে দিনরাত কাজ করে পড়াশোনার খরচ চালিয়েছি। বাবা-মা’র শিক্ষা, দেশপ্রেম থেকেই দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে সবকিছু ছেড়ে ফিরেছিলাম দেশে। প্রথমে সামাজিকভাবে কাজ শুরু করি। আর্সেনিক সচেতনতার কাজও অনেক করেছি। গ্রামে-গঞ্জে ঘুরেছি দিনের পর দিন। বাবা-মা’র রাজনৈতিক সহকর্মীদের পরামর্শ এবং কাপাসিয়ার মানুষের অনুরোধেই আমার সক্রিয় রাজনীতিতে আসা। তারা আমাকে বুঝিয়েছিলেন, রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম থেকে আরো ভালো করে দেশের মানুষের জন্য কাজ করা সম্ভব।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও শরীরে বয়ে চলা বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের রক্তই আমাকে আরো বেশি প্রাণিত করেছে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগ দিতে এবং দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে। ক্ষমতা, অর্থসম্পদ, খ্যাতি, প্রতিপত্তির জন্য রাজনীতিতে যোগ দেইনি। যদি উদ্দেশ্য তাই হতো, সবকিছু মেনে নিয়ে এখনো এমপি ও মন্ত্রিত্বের পদ আঁকড়ে থাকতাম। মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাকে বাকি জীবন লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে রাখেন। নিজের দল ও তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সৃষ্ট শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ২০০১ সালের নির্বাচনে কাপাসিয়ার মানুষের ভালোবাসায় প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই।

দুর্ভাগ্য, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে ক্ষমতায় আসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। আমার কাপাসিয়ার মানুষের ওপর বিএনপি-জামায়াত জোটের হামলা, মামলা ও নির্যাতন চলতে থাকে একের পর এক । প্রতিবাদে কাপাসিয়ার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলি। বিএনপি-জামায়াতের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন আমার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী যুবলীগের সভাপতি জালাল উদ্দীন সরকার। পুলিশ নির্মমভাবে হত্যা করেছে জামাল ফকিরকে। এসবের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ অনশন করতে গিয়ে বারবার পুলিশের নির্মম হামলার শিকার হয়েছি।

বস্তুত বিএনপি-জামায়াতের ৫টি বছর হামলা, মামলা ঠেকাতে আমাকে বেশিরভাগ সময় রাজপথ ও আদালত প্রাঙ্গণে সময় কাটাতে হয়েছে। কোনো ব্যবসা-বাণিজ্যে নিজেকে জড়াইনি। পৈতৃক সম্পত্তি থেকে যা আয় হতো, তা দিয়েই চলতো আমার রাজনীতি। এমনকি পৈতৃক সম্পত্তিও বিক্রি করেছি রাজনীতির জন্য। খুব সাদামাটা সাধারণ জীবনযাপন করেছি। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছরের কর্মকাণ্ড আমাকে হতাশ করলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের যুগোপযোগী নির্বাচনী ইশতেহার আমাকে রাজনীতিতে আরো বেশি উৎসাহিত করে। যে ইশতেহার ছিল প্রগতিশীল ও দিনবদলের ঐতিহাসিক অঙ্গীকার। আশাবাদী হই, একটি সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির। যে সংস্কৃতির মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। জনগণ পাবে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার। যুদ্ধাপরাধ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ড, উদীচী ও একুশে আগস্ট হত্যাকাণ্ড, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া ও আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ড এবং ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। বাংলাদেশ হবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিমুক্ত একটি রাষ্ট্র।সব মিলিয়ে সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলাম।

আর তাই যে মন্ত্রণালয় কেউ নিতে চায়নি, প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাসে সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলাম। শুধু মন্ত্রিত্ব নয়, এটি ছিল এক চ্যালেঞ্জ। কারণ সুশাসন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব অপরিসীম। আর সুশাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্বের অনেকটাই ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।

সব সময়ই চেষ্টা ছিল পুলিশ বাহিনীকে একটি সুশৃঙ্খল পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে জনগণের বন্ধু করে তোলা। মন্ত্রিত্বের শেষদিন পর্যন্ত আমার সে চেষ্টা অব্যাহত ছিল। কতটুকু পেরেছি বা কেন পারিনি, সে কথায় না গিয়ে শুধু এটুকু বলতে চাই, আমি আমার মায়ের কাছে শিখেছি, সব সময় অনিয়ম ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। সেটা যেই করুক না কেন। যতটুকু সম্ভব আমি আমার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে চেষ্টাও করেছি। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়াও শুরু করতে সহযোগিতা করেছিলাম।

কথার পেছনে অনেক কথা থাকে। অনেক লুকায়িত সত্য থাকে। যা দেশ, জনগণ ও দলের বৃহত্তর স্বার্থে সবার সামনে বলা উচিত না। আর তা সম্ভবও না। শুধু এটুকু বলি, আমি সংগত কারণেই এমপি ও মন্ত্রিত্বের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। যে ক’দিন দায়িত্বে ছিলাম, মন্ত্রিত্বের শপথ থেকে বিচ্যুত হইনি। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত সোচ্চার ছিলাম। যখন মনে করেছি, আমার সীমিত ক্ষমতায় জনগণের প্রতি দেয়া কমিটমেন্ট আর রক্ষা করা সম্ভব না, তখন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছি। কারণ পদ বা ক্ষমতার লোভে আমি রাজনীতিতে আসিনি। যদি তাই হতো তাহলে মন্ত্রিত্বের লোভনীয় সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে প্রবাসে চাকরির জীবন বেছে নিতাম না। অর্থসম্পদ বা ক্ষমতার বিন্দুমাত্র মোহ আমার নেই।

আমার কাপাসিয়াবাসীর উদ্দেশে বলতে চাই, সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগের এ সিদ্ধান্ত নিতে আমার অনেক চিন্তাভাবনা করতে হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশা, ভালোবাসা, স্নেহ, আমার জন্য এলাকার মানুষের ত্যাগ স্বীকার, আবেগ সবকিছু চিন্তা করার পরও বাস্তবতা বিচার করে আমি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছি। কাপাসিয়ার মানুষের সম্মান রক্ষায় আমার সামনে এছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। কারণ কাপাসিয়ার মানুষের মর্যাদা ও সম্মান আমার সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িত বলেই বিশ্বাস করি। জানি, আমার এ সিদ্ধান্তে আপনারা ক্ষুব্ধ ও অভিমানী হবেন, প্রতিবাদ করবেন। কারণ যে ভালোবাসা ও সম্মান আপনারা আমাকে দিয়েছেন, সে সম্মানের ওপর কোনো কালিমা পড়ুক, তা আমি চাই না। সংগত কারণেই সবকিছু খুলে বলতে পারছি না।

কাপাসিয়ার মাটি ও মানুষের সঙ্গে আমার নাড়ির সম্পর্ক। এই কাপাসিয়ার মাঠে-ঘাটেই বেড়ে উঠেছেন আমার বাবা তাজউদ্দীন আহমদ। সেই মাটির গন্ধ আমার গায়েও। তাঁর আদর্শ নিয়েই আমার পথচলা। কাপাসিয়ার মানুষের জন্য অনেক কিছু করার স্বপ্ন নিয়েই আমি প্রবাস-জীবনের ইতি টেনেছিলাম। আপনাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ভালোবাসা ও দোয়া পেয়েছি। এর প্রতিদান হয়তো ততটুকু দিতে পারিনি। তবে সেই চেষ্টা আমার সব সময় ছিল। আমি এটুকু বলতে চাই, সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করলেও আপনাদের পাশে থাকবো সব সময়। হয়তো অন্য কোনো ভাবে, অন্য কোনো পথে। এই প্রতিজ্ঞা করছি।

সক্রিয় রাজনীতিতে ফের আসার সম্ভাবনা না থাকলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আমার বাবা তাজউদ্দীন আহমদের আদর্শে গড়া আওয়ামী লীগই আমার শেষ ঠিকানা। কারণ দলটির সঙ্গে আমার বাবার রক্ত মিশে আছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে তিনি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েছেন। কোনো ষড়যন্ত্রের কাছে মাথা নত করেননি। জীবন দিয়েও তা প্রমাণ করে গেছেন।

কাপাসিয়ায় আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী যারা আমার জন্য ত্যাগ স্বীকার, জেল-জুলুম ও অত্যাচার সহ্য করেছেন, তাদের উদ্দেশে বলবো, আমি সবসময় যেটা আপনাদের বলে এসেছি, তা হচ্ছে ব্যক্তি-স্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতি পরিহার করতে হবে। ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির রাজনীতি বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীনের মতো নীতি-আদর্শের রাজনীতি করতে হবে। ঐতিহ্যবাহী কাপাসিয়ার নেতৃত্ব যেন ভালো মানুষ দিয়ে পরিচালিত হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনাদের। কাপাসিয়ার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আপনারা সে পথে এগিয়ে যান। আপনাদের সবার মতো আমিও তাকিয়ে আছি ভবিষ্যতের দিকে। হয়তো একদিন সুস্থ একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ হবে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দেশ।


এম/ এসজেড

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |