• ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চাইলে যা করবেন

আরটিভি নিউজ

  ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৪৭
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা কেমিকৌশল বিভাগে দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত। চাকুরীর বাজারে কেমিক্যাল প্রকৌশলীদের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর তাই মাঝে মাঝে এমনও দেখা যায় ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফলের পূর্বেই চাকরিদাতারা কাজে যোগদান করায়।

এই বিষয়ে দুইভাবে পড়াশোনা করা যেতে পারে। এসএসসি পরীক্ষার পর ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং। অথবা এইচএসসি পরীক্ষার বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং। এই লেখাটিতে শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং উত্তীর্ণ কেমিকৌশলীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা হবে।

প্রথমত বলে রাখি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কেমিকৌশল একটি বিশেষ বিভাগ যা সরকারিতে শুধু মাত্রই ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আছে। বেসরকারিগুলোর মধ্যে আহসানউল্লাহ এবং সাজ পলিটেকনিকে বিভাগটি পরিচালনা করছে।

আজ বলা হবে উচ্চশিক্ষা নিয়ে, ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিয়ারিংয়ের কেমিক্যাল টেকনোলজি থেকে কেউ পাস করলে তার জন্য খোলা রয়েছে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন দুয়ার। এই বিভিন্ন বলারও কারণ আছে, এই টেকনোলজি থেকে পড়লে যে কেউ কেমিক্যাল ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর পড়াশুনা করতে পারে।

যেমন, মেকানিক্যাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুড, টেক্সটাইল, ইলেক্ট্রিক্যাল, সিভিল, ফার্মেসি, কম্পিউটারসহ যেকোনো বিষয়ে স্নাতক পড়তে পারবে। এর মধ্যে কেমিক্যাল, মেকানিক্যাল, ফুড, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।

এবার ডিগ্রি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে উচ্চশিক্ষার পথ বাতলানো যেতে পারে,

ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট)

বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করতে সময় লাগবে চার বছর। খুব সুন্দরভাবেই একজন ডিপ্লোমা পাশ করা ছাত্র ডুয়েটের কেমিক্যাল এন্ড ফুড, মেকানিক্যাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন, মেটেরিয়াল এন্ড মেটালারজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শর্ত সাপেক্ষে যোগ্যতা রাখে। ডুয়েটে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তি প্রস্তুতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ, আবার এই ভর্তি প্রস্তুতি হয় দুই রকম। সংক্ষিপ্ত আর দীর্ঘ। এর মানে পাশ করে বের হয়ে অল্প কিছুদিন সময় পেয়ে একটা ভর্তি পরীক্ষা আবার আরেকটা প্রায় দেড় বছর পর।

সম্পূর্ণ কোর্স (বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং) শেষ করতে সময় নির্ধারণ করা আছে ৪ বছর। যদি কেউ অনেক চেস্টা করে ভর্তির সুযোগ না পায়,হতাশ হওয়ার কিছু নেই, তাদের জন্য সরকারী চাকুরী অপেক্ষা করছে। উল্লেখ থাকে এখান থেকে পাশ করলে প্রত্যেকে আইইবি থেকে সরাসরি সদস্যপদ লাভ করে। চাকুরী করে এখানে পড়াশুনা করা প্রায় অসম্ভব।

এএমআইই

চাকরি করে এই জায়গায় ও পড়াশুনা করা যায় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারি। তবে, অতি মাত্রায় পড়াশুনা না করলে পাস করা যেমন কঠিন হবে ঠিক তেমনি সময়টাও নষ্ট হবে দেদারছে। খরচ খুবই কম, তবে পাশ করতে পারলে যেমন তার জানার পরিধিও থাকবে অনেক বড় এবং আইইবি থেকে সরাসরি সদস্যপদ লাভ করবেন। এখানে রয়েছে সেকশন ভিত্তিক পরীক্ষা। সেকশন এ এবং বি। একে একে শেষ করতে হয় প্রতিটি সেকশন। বেশি সময় নিয়ে কম কম বিষয় নিয়ে শেষ যেমন করা যায় ঠিক তেমনি কম সময়েও বেশি বিষয় নিয়ে দ্রুত শেষ করা যায়। তবে পাশ করা লোক খুবই কম, যেখানে কারও কারও ৫ থেকে ৭ বছরও লেগে যায়।


বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারিখাতে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হলো জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। অবস্থান শরিয়তপুর জেলার ভেদেরগঞ্জ থানার কার্তিকপুর এ অবস্থিত। এখানে চাকুরী করে বিএসসি করা যায় তবে এখন প্রতি সপ্তাহে ক্লাস হওয়ায়, একটু কস্টকর। এখানে টিউশন ফী এর সমান প্রায় যাতায়াত খরচ হয়ে যায়। পড়াশুনার নিয়ম কানুন প্রায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর মতই। নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে খুব ভালো ফলাফল করা সম্ভব। সারে তিন বছরে কোর্স কমপ্লীট হয় আর সার্টিফিকেট দেয় চার বছর পর। উল্লেখ থাকে এখান থেকে পাশ করলে, আই ই বি সদস্যপদ লাভ করার সুযোগ নেই (আলাদা করে পরীক্ষা দিয়ে নিতে হয়)।

এছাড়া সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাইলে পড়া যেতে পারে। চাকরি করে পড়া যায় এখানে তাই সাড়ে তিন বছরে মুটামুটি ভালো টাকা খরচ করেই এখানে পড়তে হবে। পড়াশুনার মান বেশ ভালো। তবে জানিয়ে রাখা ভালো, এখান থেকে পড়াশোনা শেষে সরাসরি আইইবি সদস্যপদ লাভ করার সুযোগ নেই। ইউরোপিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন আর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশুনা করা যেতে পারে। সময় লাগে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন বছর। খরচ মুটামুটি সহনশীল। চাকুরী করা অবস্থায় পড়াশুনা করা সম্ভব। উল্লেখ থাকে এখান থেকে পাশ করলে, সরাসরি আইইবি সদস্যপদ লাভ করার সুযোগ নেই।

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়
বর্তমান সময়ে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরাসরি কোনো ভাষাগত দক্ষতা ছাড়াই নির্দিষ্ট খরচে কেমিক্যাল, ফার্মা, বায়োটেক ছাড়াও রিলেভেন্ট বিষয় গুলোতে ভর্তি হওয়া সম্ভব। এছাড়া অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতা বাধ্যতামূলক, হোক সেটা নির্দিষ্ট দেশের কিংবা হোক ইংরেজী। এছাড়াও ডিপ্লোমা শেষে দেশের জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন টেকনোলজি ও ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ওয়ার্ল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা করা যাবে।

এমএসসি/এমবিএ
বিএসসি শেষে এমএসসি বা এমবিএ করা যাবে। তবে বেশ কিছু দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্সেও ভর্তি হওয়া যাবে। তবে এখানে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভর্তি যোগ্যতা বিবেচ্য বিষয়।

এমফিল
বিদেশী কিংবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ভর্তি যোগ্যতা পূরন সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর গবেষণার জন্য এমফিল এ ভর্তি হতে পারবে। এক্ষেত্রে বিএসসি তে ভালো মানের গবেষণা থাকতে হবে আর না হয় মাস্টার্স শেষে ভর্তি হওয়া যায়। সময় ১ থেকে ২ বছর। কোন কারণে বেশিও লাগতে পারে।

পিএইডি
মাস্টার্স শেষে কিংবা এমফিল শেষে বিদেশে কিংবা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন একজন পিএইচডিধারী গবেষকের তত্বাবধানে তিন বছর গবেষনা কাজ করে নতুন কিছুর আবিস্কার বা ধারনা প্রদান করে এই ডিগ্রি লাভ করতে পারবে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রসেস রিলেভেন্ট চাকরি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকলে তাহলে কেমিক্যাল, মেকানিক্যাল, মেকাট্রনিক্স, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন নিয়ে পড়া ভালো।

আবার যারা ইটিপি, ইসিআর কিংবা কমপ্লায়েন্স নিয়ে চাকরি করেন বা ক্যারিয়ার গড়বেন তারা কেমিক্যাল কিংবা এনভায়রনমেন্ট এ পরলে খুবই ভালো। টেক্সটাইলের ইঞ্জিনিয়ার যেহেতু অনেক তাই না পড়াই শ্রেয়। তার পরও আগ্রহ থাকতেই পারে। এই সেক্টরে ডাইং ও কোয়ালিটি ল্যাব এ কাজ করাই উত্তম। আর যারা কেমিক্যাল এ পড়াশুনা করে বিরক্ত তারা সুবিধামত অন্য যেকোন বিষয়ে পড়ে ট্র্যাক পরিবর্তন করতে পারেন। সর্বোপরি কেমিক্যাল এ পড়াই ভালো কারন প্রায় সব দিকেই কাজ করা যায় এই বিষয় থেকে।

পরামর্শ দিয়েছেন, আবু সাদাত মোঃ আহসান হাবীব আকন্দ
কেমিক্যাল বিভাগীয় প্রধান, ডানা গ্রুপ
habib.drsr@gmail.com


এসজে

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • শিক্ষা এর পাঠক প্রিয়