• ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

‘তোমাকে বিয়ে করবো ময়না অপেক্ষা করো’, ছাত্রীকে শিক্ষক 

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:৩৫
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বাংলাদেশ অ্যান্ড মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের ছাত্রীর সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

অভিযোগপত্রে যা লেখা আছে হুবহু তুলে ধরা হলো:

‘২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন মাস তিনি (শিক্ষক) আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক করার জন্য মানসিক অত্যাচার করে। পরবর্তীতে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না চাইলে ও সব জায়গা থেকে তাকে ব্লক দিলে তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কল দিয়ে বলতেন তোমাকে পেলে আমি সুস্থ হয়ে যাব। পরে তিনি আমার মায়ের নাম্বার জোগাড় করে ফোন দিয়ে বলেন, পৃথিবীর সব সুখ আমি আপনার মেয়েকে দিবো, কোনো স্বামী এই পৃথিবীতে দিতে পারবে কি না আমি জানি না, তা-ও আমার মা সেটা নিষেধ করে দেন।’

অভিযোগপত্রে আরও লেখা আছে, এমন করে করে তিনি আমাকে গিল্টির মধ্যে ফেলে দিতেন এবং মানসিকভাবে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি। একটা পর্যায়ে ভাবতে থাকি আমার কারণে একটা মানুষ এতো কষ্ট পাচ্ছে। ২০২৩ সালের ১১ মার্চ তিনি তার পিএইচডি ছেড়ে আমার কারণে দেশে চলে আসেন এবং বলেন আমার আশপাশে থাকলেই তিনি ভালো থাকবেন। আমার একাডেমিক লাইফে ক্ষতির সম্ভাবনা, মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি ও জোরাজোরি এবং নানান বিষয়ে ডিপ্রেশনে থাকার কারণে আমি উনার সঙ্গে সম্পর্কে যেতে রাজি হই। আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে। এর মধ্যে কয়েকদফা তিনি আমাকে একা একা বিয়ে করে ফেলার কথা বলেন, কিন্তু আমি বলেছি ফ্যামিলিকে জানাও তারপর বিয়ে করবো। ২০২৪ সালের কোরবানি ঈদের সময় থেকে তিনি পরিবারে জানান এবং তার ভাষ্যমতে তার পরিবার রাজি হয় না। এই মধ্যে আমি আমার পরিবারকে জানাই এবং সকলে সম্মতি প্রকাশ করে আমাদের বিয়ের জন্য। কিন্তু বেশ কিছু দিন যাবত তিনি আমাকে বোঝাতে থাকেন উনার পরিবার অন্যত্র উনার জন্য পাত্রী দেখছেন, কিন্তু তিনি আমাকেই চান।

‘গত ৮ এবং ৯ অক্টোবর আমার খালার সঙ্গে কথা বলেন মোস্তাফিজ এবং বলেন যে সে তার ফ্যামিলি ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবেন, আমাকে আগামী ২ থেকে ৩ বছরেও স্ত্রী বলে পরিচয় দিবেন না কোথাও এবং ছাত্রীকে বিয়ে করার কারণে যদি তার চাকরি যায় আমি আয় করে উনাকে খাওয়াতে হবে, আমার পরিবারকে উনার দায়িত্ব নিতে হবে এবং তিনি এখন একাই বিয়ে করবেন আমাকে কাজী অফিসে। কিন্তু কেউ যেতে পারবে না আমার পরিবারের। আমার পরিবার আমার দিকে তাকিয়ে তার সব শর্তে রাজি হয়। পরবর্তীতে শুক্রবার (১১ অক্টোবর) তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে ঢাকা যেতে বলেন। আমি তার কথা বিশ্বাস করে ঢাকা যাই। কিন্তু তিনি নানা টালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাবা অসুস্থ বলে আমার থেকে তড়িঘড়ি বাড়ি যাবে বলে বিদায় নেয়। আমাকে বিদায় দেওয়ার সময় জড়িয়ে ধরে কপালে চুম্বন করে বলে আমি আমার বাবাকে দেখে এসে তোমাকে বিয়ে করবো ময়না, আমার জন্য অপেক্ষা করো, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ওই বিয়েটা ভাঙানোর, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। পরবর্তীতে জানতে পারি তার বাবা অসুস্থ হয়নি। বরং ১৩ অক্টোবর রোববার চট্টগ্রামে তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন যার সঙ্গে তার ৩ মাস আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।’

ভুক্তোভুগী শিক্ষার্থী অভিযোগ পত্রে আরও লেখেন, তার বিয়ের সংবাদ পেয়ে আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়ি। পরে ১৪ তারিখ আমি চট্টগ্রাম চলে যাই এবং উনার বউয়ের ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে রাত ৯টা ৩০ মিনিট থেকে ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ উনার এবং উনার বউয়ের সঙ্গে আমার দেখা হয় আগ্রাবাদ জাম্বুরী পার্কের সামনে। শেষ দিকে উনার বউ আমার বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছিল এমন সময় মোস্তাফিজ আমাকে বলে যে, একটু কাছে আসো, তুমি কি চাও? আমি বললাম আমি তোমাকে চাই। উনি বললো, তুমি আমার বউয়ের কাছে যা যা বলে গেছ এরপর ও আর আমাকে রাখবে না, ও আমাকে ছেড়ে দিলে তুমি আমাকে গ্রহণ করবা তো? আমি বললাম হ্যাঁ করবো। সেখান থেকে আসার পর ১৫ অক্টোবর সকাল থেকে আমি মানসিক ভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং উনার বউকে কল দিয়ে উনাকে ছেড়ে দিতে বলি। কিন্তু তারা একসঙ্গে বলে তারা কেও কাওকে ছাড়বে না। দুপুরের দিকে আমার শারীরিক অবস্থার খুবই অবনতি ঘটে এবং আমাকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতাল ভর্তি করায় আমার বান্ধবীর পরিবার। সেখানে আমার পরিবার আসে এবং আমাকে ১৬ তারিখ ডিসচার্জ করা হয়। বাসায় আসার পর অবস্থার আরও অবনতি হয়।’

ভুক্তভোগী ছাত্রী এই ঘটনার বিচার চেয়ে বলেন, আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে এমন প্রতারণায় আমি এবং আমার পরিবার মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমি এর বিচার চাই।

উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দিতে এসে ভুক্তভোগীর মা সাংবাদিকদের বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক আমার মেয়ের সঙ্গে যা করেছে সেটা অন্যায়। বিগত কয়েকদিন আমাদের পরিবারের কারও চোখে ঘুম নেই। মেয়েটার টেনশনে আমরা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তিনি যদি আমাদেরকে কোনোভাবে বলতেন তিনি অন্যত্র বিয়ে করবেন তাহলে আমরা আমাদের মেয়েকে বুঝিয়ে বলতাম। তাকে সে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমরা এর উপযুক্ত বিচার চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমানের মুঠোফোনে বারবার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও নিজের আইডি ডিজেবল করে রেখেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ আমি বিস্তারিত শুনেছি এবং অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি নির্মূল কমিটি রয়েছে। তারা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। অপরাধ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরটিভি/এমএ

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • ক্যাম্পাস এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
জাবি ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি
স্কুলে যাওয়ার পথে সড়কে প্রাণ গেল প্রধান শিক্ষকের
সমন্বয়ক ট্যাগ দিয়ে ববি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হেনস্তার অভিযোগ
নড়াইলে মদপানে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু