• ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১
logo

একনজরে জামায়াতের উত্থান-পতন

আরটিভি নিউজ

  ০১ আগস্ট ২০২৪, ১৬:১৪

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পূর্বনাম ছিল ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’; এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল। দেশে ইসলামি শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন দলটির মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানো এই দলটি ‘পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী’র একটি শাখা। দলটি মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড-এর আদর্শ ধারণ করে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন হলো ইসলামী ছাত্রশিবির, পূর্বে এটির নাম ছিল ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ।’

দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী। তিনি ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট লাহোরের ইসলামিয়া পার্কে সামাজিক-রাজনৈতিক ইসলামি আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘জামায়াতে ইসলামী হিন্দ’ নামে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। জামায়াত ভারতের মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল। দলটি ১৯৪৬ সালের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় দল মুসলিম লীগকে সমর্থন করেনি। স্বাধীনতা ও ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর মওদুদী ভারত থেকে পাকিস্তান চলে যান। বর্তমান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মূলত পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক জাতীয় পার্টির অংশ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল।

জামায়াত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার এবং পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধিতা করেছিল। প্রায়শই জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার পেছনে ভারতীয় আধিপত্যের আশঙ্কা এবং ইসলামী আন্দোলনের স্বার্থকে সামনে আনে। বলা হয়ে থাকে, দলটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষ, বুদ্ধিজীবী এবং সংখ্যালঘু হিন্দুদের হত্যায় সহযোগিতা করেছিল।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর নতুন সরকার জামায়াতকে রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং দলের নেতারা পাকিস্তানে নির্বাসনে চলে যান। পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর এবং কয়েকটি সামরিক অভ্যুত্থানের পর ১৯৭৭ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে জামায়াতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। দলটির নেতাকর্মীরা ফিরে আসার অনুমতি পান এবং ১৯৭৯ সালের মে মাসে তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা আব্বাস আলী খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৮০-এর দশকে জামায়াত গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের জন্য বহুদলীয় জোটে যোগদান করে। এ সময় দলটি আওয়ামী লীগ ও সমসাময়িক বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে পরবর্তীতে দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আন্দোলন করে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে বিএনপির সঙ্গে মিলিত হয়ে আরও অন্য দুটি দলসহ চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট জয়লাভ করলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে জামায়াতের দুজন সদস্য মন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের পর থেকে নেতৃবৃন্দ আটক পরবর্তীতে বিতর্কিত আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালের রায়ে দণ্ডিত হওয়ায় দলটি কিছুটা দূর্বল হয়ে যায়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি ৩০০টি আসনের মধ্যে মাত্র ৫টি আসন লাভ করে।

২০১০ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে; ২০১২ সালের মধ্যে দুজন বিএনপি নেতা ও জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান সদস্যসহ ৮ জন নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত জামায়াতের সাবেক সদস্যসহ মোট চার জনকে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

কয়েকটি ইসলামি সংগঠনের ২৫ জন সদস্য জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের হাই কোর্ট একটি রুল জারি করে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদ এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলে আদালতের বেঞ্চ। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রুলের রায় ঘোষণা করে এতে সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ এবং সংগঠনটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা ফাঁসিতে ঝুলেছেন, এবং বহু নেতা কারাগারে ও আত্মগোপনে আছেন। এ কারণে দলের তৎপরতা গত এক দশক ধরে অনেকটাই নেতিয়ে পড়েছে। ঢাকার মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বহু বছর ধরে তালাবদ্ধ। এর মধ্যে দলেও ভাঙন ধরেছে। বহু বছরের বিতর্কের পর বিএনপির জোটেও আর জামায়াত নেই।

সবশেষ গত বছর আপিল বিভাগে নিবন্ধন বাতিলের রায় বহাল থাকায় ভোটের রাজনীতিতেও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে জামায়াত।

নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পরও এতদিন দলটি ঝটিকা মিছিল বা জমায়েত হয়ে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকার সুযোগ পাচ্ছিল জামায়াত। নির্বাহী আদেশে দলটি নিষিদ্ধ ঘোষণা হলে সেসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এমনকি জামায়াতকে কোনোভাবে সহযোগিতা বা অর্থায়ন করার পথও আইনিভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।

সবশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামায়াত ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের জড়িত থাকার অভিযোগ করে আসছিলেন সরকারের মন্ত্রীরা। এ প্রেক্ষিতে গত সোমবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত হন ওই জোটের শীর্ষ নেতারা। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সেই বৈঠক হয়। জোটের বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।

২৯ জুলাই ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণাকে বেআইনী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

বিবৃতিতে ডা. শফিকুর বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম। একটি রাজনৈতিক দল বা জোট অন্য একটি রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বাংলাদেশের আইন ও সংবিংধান কাউকে এ এখতিয়ার দেয়নি। কোনো দল বা জোট অন্য কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার ধারা চালু হলে এক দল অন্য দলকে নিষিদ্ধ করতে থাকবে। তখন রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বলে কিছু থাকবে না।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারের নির্বাহী আদেশে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির ও তাদের অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • রাজনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
স্বৈরাচারের দোসরদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকুন: জামায়াত সেক্রেটারি
ভারতের রান পাহাড়, দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ৩ উইকেট
আইন হাতে তুলে নেওয়া দেশের জন্য অশনিসংকেত: জামায়াত সেক্রেটারি
বাংলাদেশকে ফলোঅন না করিয়ে ব্যাটিংয়ে ভারত, শুরুতেই দুই ওপেনারের বিদায়