বিশ্বের সবেচেয়ে উঁচু যে মিনার!
এক বিশাল সমুদ্র। যার তীরে দাঁড়িয়ে এক বিশাল মসজিদ। এই মসজিদের মিনার পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু। উপরে তাকালে দেখা যায় ২১০ মিটার উচ্চতার এক বিস্ময়, যা প্রায় ৬০ তলা ভবনের সমান! মিনারের চূড়ায় স্থাপিত লেজার বিম প্রতিনিয়ত কাবা ঘরের দিকে আলোক রশ্মি ছড়িয়ে দেয়, যা ৩০ কিলোমিটার দূর থেকেও চোখে পড়ে। আর সেই মসজিদে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন ১ লাখ ৫ হাজার মানুষ। বলছি মরক্কের ভাসমান মসজিদ দ্বিতীয় হাসান মসজিদের কথা।
মসজিদটি বিশ্বের মুসলিম স্থাপত্যের এক অতুলনীয় নিদর্শন। এটি মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কায় আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত, এবং এর একটি অংশ সমুদ্রের পানিতে ভাসমান। যখন মুসল্লিরা মসজিদের কাঁচের মেঝেতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন, তখন তাদের পায়ের নিচে সমুদ্রের ঢেউয়ের ছোঁয়া। এক মুহূর্তে মনে হতে পারে, যেন প্রকৃতি আর ধর্ম একসঙ্গে মিলে গেছে এই মসজিদের প্রতিটি কোণে।
এই মহান স্থাপনার পেছনে আছেন মরক্কোর রাজা দ্বিতীয় হাসান, যিনি ক্যাসাব্লাঙ্কায় একটি অনন্য ‘ল্যান্ডমার্ক’ স্থাপনা নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ১৯৮৬ সালে ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনসোর নকশায় মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়, এবং ১৯৯৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়। রাজা দ্বিতীয় হাসানের উদ্দেশ্য ছিল একটি এমন মসজিদ নির্মাণ করা, যা মরক্কোকে বিশ্ব মানচিত্রে স্থাপত্যশৈলীর শীর্ষে তুলে ধরবে।
দেশটির ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প ছিল এই মসজিদ। প্রথম দিকে এর বাজেট ধরা হয়েছিল ৮০০ মিলিয়ন ডলার, যা পুরোপুরি দেশের সাধারণ মানুষের অনুদান থেকে সংগ্রহ করা হয়। প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ এই প্রকল্পে স্বেচ্ছায় অর্থ প্রদান করেন। তাদের সবাইকে মরক্কো সরকারের পক্ষ থেকে একটি করে অনুদানের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, কিছু আরব রাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোও আর্থিকভাবে সাহায্য করেছে।
দ্বিতীয় হাসান মসজিদে প্রায় ২৫,০০০ মুসল্লি ভেতরে এবং বাইরের প্রাঙ্গণে আরও ৮০,০০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের মহিলাদের জন্য পৃথক বারান্দা রয়েছে, যেখানে একসঙ্গে ৫,০০০ নারী নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের ভেতরের বিশাল আয়তাকার হলটি প্রায় ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০০ মিটার চওড়া। এছাড়া মসজিদের ছাদটি খোলা যায়, যা দিনের বেলা সূর্যের আলো ও রাতের চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়।
মিনারটির উচ্চতা ২১০ মিটার, যা মরক্কোর সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা এবং বিশ্বের সর্বোচ্চ মিনার। মিনারটির চূড়ায় থাকা লেজার বিম কাবা ঘরের দিকে আলোর রশ্মি ছড়ায়, যা গভীর সমুদ্র থেকেও দেখা যায়। এর বিশেষ ধরনের কনক্রিট ব্যবহার করা হয়েছে, যা শক্তিশালী ঝড় ও ভূমিকম্পের প্রভাব সহ্য করতে পারে।
যদিও খুব শীঘ্রই এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মসজিদের রেকর্ড হারাবে, তবুও এর সৌন্দর্য এবং বিশালত্ব দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে মুগ্ধ করে রাখবে।
আরটিভি/এফআই
মন্তব্য করুন