ভারতীয় ক্রিকেটে খুবই পরিচিত সাবেক ক্রিকেটার এবং কোচ হলেন সঞ্জয় বঙ্গার। তার সন্তান অনন্যা বঙ্গারও ছিলেন একজন ক্রিকেটার। এক সময় খেলেছেন যশস্বী জয়সওয়াল ও মুশির খানের মতো ক্রিকেটারদের সঙ্গে। কিন্তু হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি ও লিঙ্গ নিশ্চিতকরণে অস্ত্রোপচার করায় থমকে গেছে অনন্যা বঙ্গারের।
সম্প্রতি ভারতীয় নারী দলে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি। আর সে ব্যাপারে আবেদন করছেন আইসিসি এবং বিসিসিআইয়ের কাছে। একটি রিপোর্ট পেশ করে রূপান্তরিত হওয়ার প্রমাণও প্রকাশ্যে এনেছেন অনন্যা।
রূপান্তরিত ক্রিকেটারদের নারী ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। ২০২৩ বিশ্বকাপের পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইসিসি। তবে এই রিপোর্ট তুলে অনন্যা তুলে ধরেছেন, রূপান্তরিত হলেও তিনি কেন মহিলাদের ক্রিকেটে খেলার যোগ্য।
সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন অনন্যা। সেখানে তিনি বলেছেন, রূপান্তরিত মহিলা ক্রীড়াবিদ হিসাবে আমার যে যাত্রা, তার একটি বিজ্ঞানভিত্তিক রিপোর্ট প্রথমবার সবার সামনে প্রকাশ করছি। গত কয়েক বছরে হরমোনের চিকিৎসার পর পরিকল্পিতভাবে শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে আমার। এই রিপোর্টে আমার রূপান্তরের বাস্তব প্রভাব দেখানো হয়েছে। কারও মতামত বা অনুমান নয়, স্রেফ তথ্য রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা এবং আশা নিয়ে এই রিপোর্ট আমি বিসিসিআই এবং আইসিসির কাছে পাঠাব। তথ্যের ভিত্তিতে ওদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে চাই। নিজের জন্য জায়গা করে নিতে চাই।
এর আগে এক সাক্ষাৎকারে লিঙ্গ রূপান্তরের যাত্রার অনেক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে অনন্যা অভিযোগ করেছিলেন, অনেক ক্রিকেটার তাকে মোবাইল ফোনে ন্যুড ছবি পাঠাতেন। অনন্যা আগে আরিয়ান নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি একজন ক্রীড়াবিদ এবং সঞ্জয় বঙ্গারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছেন।
লিঙ্গ পরিবর্তন নিয়ে অনন্যা বলেন, আমার বয়স যখন ৮ বা ৯ বছর, আমি আমার মায়ের আলমারি থেকে পোশাক বের করে পরতাম। তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে বলতাম, আমি একটি মেয়ে। আমি একটি মেয়ে হতে চাই।
ক্রিকেট খেলা নিয়ে তিনি বলেন, আমি মুশির খান, সরফরাজ খান, যশস্বী জয়সওয়ালের মতো এখনকার কিছু পরিচিত ক্রিকেটারের সঙ্গে খেলেছি। আমাকে আমার পরিচয় গোপন রাখতে হয়েছিল, কারণ বাবা একজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। ক্রিকেট বিশ্ব নিরাপত্তাহীনতা ও পুরুষালি বিষাক্ততায় পূর্ণ!
অনন্যাকে এরপর জিজ্ঞেস করা হয়, লিঙ্গ নিশ্চিতকরণ অস্ত্রোপচারের পর তার সতীর্থ ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল। অনন্যা বলেন, সমর্থনও ছিল, আবার কিছু হয়রানিও ছিল। হয়রানির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, কিছু ক্রিকেটার আমাকে যখন-তখন তাদের নগ্ন ছবি পাঠিয়েছে।
তিনি আরও বলেছিলেন, এক ব্যক্তি ছিল যে সবার সামনে খারাপ ভাষা ব্যবহার করত। সেই একই ব্যক্তি এরপর আমার পাশে এসে বসত এবং আমার ছবি চাইত। আরেকটি ঘটনা ছিল, যখন আমি ভারতে ছিলাম, তখন একজন পুরোনো (প্রবীণ) ক্রিকেটারকে আমার পরিস্থিতির কথা বলেছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, চলো গাড়িতে যাই, আমি তোমার সঙ্গে ঘুমোতে চাই।
বর্তমানে ম্যানচেস্টারে বসবাস করছেন অনন্যা এবং ইনস্টাগ্রামে খুব সক্রিয়। এবার ভারতের নারী দলে খেলার জন্য আবেদন করেছেন তিনি।
আরটিভি/এসআর