প্রথমে স্ত্রী ও বড় মেয়ের গলা টিপে ধরেন। সেই দৃশ্য দেখে ছোট মেয়েটি চিৎকার শুরু করে। একপর্যায়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে সেই মেয়েকেও শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এভাবেই স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ঠান্ডা মাথায় হত্যার এমন বর্ণনা দিয়েছেন জহিরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবু। তিনি জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহের জের ধরেই তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা বসু গতকাল শনিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বাবুকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে নিহত সাবিনা ইয়াসমিন বীথির বাবা জহুরুল ইসলাম বিশ্বাস ওরফে বাবুর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
শনিবার দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে মা ও দুই সন্তানের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে সন্ধ্যায় অভয়নগর উপজেলায় নিহত সাবিনার বাবার বাড়ি সিদ্দিপাশাতে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তিনজনকে দাফন করা হয়।
জহিরুল ইসলাম বাবু জবানবন্দিতে জানান, তিনি পেশায় একজন রড মিস্ত্রী। বাড়ি যশোর সদরের জগন্নাথপুর গ্রামের বিশ্বাসপাড়ায়। বাবার নাম মশিউর রহমান বিশ্বাস। অভয়নগরের সিদ্দিপাশা গ্রামের শেখ মুজিবর রহমানের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বিথীকে বিয়ে করেন তিনি।
বাবু জানান, বিয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহ চলছিল। বিথী তার বাবার বাড়িতে থাকতে পছন্দ করতেন। আড়াই মাস আগে বিথী তার দুই মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যায়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও জহিরুল মাঝেমধ্যে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে থাকতেন। এ নিয়ে সংসারে চরম অশান্তি চলছিল।
হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে জহিরুল জবানবন্দিতে আদালতকে জানান, শুক্রবার দুপুরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। পথে স্ত্রীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে তিনি স্ত্রী ও বড় মেয়ের গলা চেপে ধরেন। তা দেখে ছোট মেয়ে চিৎকার শুরু করে। এরপর গলায় গামছা পেঁচিয়ে তিনজনকেই শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে আসার পথে চাপাতলা গ্রামে আবদুস সবুরের বাড়ির পেছনে কলাবাগান ও ঘাসের জমিতে নিয়ে স্ত্রী বিথী ও বড় মেয়ে সুমাইয়া খাতুন এবং শেষে ছোট মেয়ে সাফিয়া খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। মরদেহ তিনটি সেখানে ফেলে বাড়িতে এসে পরিবারের লোকজনকে ঘটনা জানান তিনি। এ সময় তার বড় ভাই মঞ্জুরুল ইসলাম বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ বাড়িতে গেলে বাবু আত্মসমর্পণ করেন।
এদিকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দুই পরিবারেই চলছে শোকের মাতম। একসঙ্গে মেয়ে ও দুই নাতনিকে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন শেখ মুজিবর রহমান।
তিনি বলেন, পারিবারিকভাবে ২০১১ সালে সাবিনার সঙ্গে বাবুর বিয়ে হয়। এরপর ওদের সংসারে দুটি কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই জহিরুল আমার কাছে নানান অজুহাতে টাকা দাবি করত। টাকা না দিলে সে আমার মেয়ে ও নাতিদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করত। মেয়ে ও দুই নাতির সুখের কথা চিন্তা করে ২০২১ সালের ২২ জুন এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দেই। এরপর আরও টাকা চাইলে সাবিনা ওর দুই মেয়ে ৯ বছরের সুমাইয়া ও দুই বছরের সাফিয়াকে নিয়ে আমার বাড়িতে চলে আসে।’
তিনি আরও বলেন, ১৫ জুলাই শুক্রবার সকালে জহিরুল আমার বাড়িতে আসে। পরে আমার মেয়ে ও দুই নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। পথে সে ওদের শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায়। আমি এই খুনির ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।’
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম শামীম হাসান বলেন, জহিরুল শনিবার যশোর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে নৃশংস হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। সন্ধ্যায় নিহত সাবিনার বাবার বাড়ি সিদ্দিপাশাতে তিনজনের জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।