নরসিংদীর মনোহরদী পৌর এলাকায় স্ত্রী মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হবেন, এমন অন্ধ বিশ্বাস থেকে মৃত্যুর ৬ দিন পরও ঘরের মধ্যেই লাশ রেখে দিয়েছেন। কিন্তু ৬ দিনেও লাশ জীবিত হয়নি। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়। খবর পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে খাটের নীচ থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একই সঙ্গে নিহতের স্বামী, চার মেয়েসহ সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আটক করা হয়। পরে চিকিৎসার জন্য সবাইকে মনোহরদী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শনিবার (১০ জুন) রাতে নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভার বাজারের পাশে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষককের পরিবারে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, মনোহরদী পৌরসভার বাজারের পাশেই নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার। সঙ্গে তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা নাজমা (৫৫), চার মেয়ে, দুই নাতি ও এক নাতনি থাকতেন। তারা সবাই আটরশি পীরের ভক্ত ছিলেন। তারা কেউই বাসা থেকে খুব একটা বের হতেন না। নিজের বাড়িতে অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে থাকতেন। এ সব নিয়ে প্রতিবেশীরা তাদের জিজ্ঞেস করলেও কোনো সদুত্তর দিতেন না। তারা প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে ভোর পর্যন্ত জিকির করতেন।
মৃত শামীমা সুলতানা নাজমা তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের বলে গিয়েছিলেন, যদি কোনো সময় তিনি মারা যান। তাহলে তার লাশ ঘরে রেখে যেনো অপেক্ষা করা হয়। তিন থেকে চারদিন পর তিনি পুনরায় জীবিত হবেন। গত সোমবার শামীমা সুলতানা নাজমা মারা গেলে তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি কউকেই জানায়নি। তারা সকলেই মায়ের জীবিত হওয়ার আশায় মরদেহ খাটের নিচে রেখে দেয়। এরই মধ্যে মরদেহে পচন ধরে। ধীরে ধীরে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। দুর্গন্ধ তীব্র হলে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া দেয়নি। পরে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে যায় পুলিশ। সেখানে পরিবারের সকলকেই ঘরেই অবস্থান করতে দেখে। ওই সময় খাটের নিচে নাজমার মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পরিবারের সদস্যদের থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে তাদের মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার খন্দকার আনিসুর রহমান বলেন, থানা থেকে তাদের রাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রেশার বেশি থাকায় তাদের চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের শারীরিক কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন বলেন, পরিবারটি এক পীরের মুরীদ ছিলেন। তারা জিকিররত অবস্থায় নাজমার মৃত্যু হয়েছে বলে আমাদেরকে জানিয়েছে। পুনরায় জীবিত হবে এই ধারণায় তারা লাশ খাটের নীচে রেখে দিয়েছিল। আমরা নিহতের স্বামী, চার মেয়ে, দুই নাতী ও এক নাতনিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এটি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক মৃত্যু তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর বলা যাবে।
মনোহরদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ বলেন, শামীমা সুলতানার লাশটি একটি তোশকে পেঁচিয়ে খাটের নিচে রেখে ঘরটিতে অবস্থান করছিলেন তারা। লাশ পচে-গলে বিকৃত হয়ে গেছে ও পোকায় ধরেছে। এতেও ভ্রুক্ষেপ ছিল না তাদের। ওই বাড়ির লোকজন দাবি করেছেন যে তারা দুর্গন্ধ টের পাননি। লাশ উদ্ধারের সময় তাদের খাবার টেবিলে রান্না করা খাবার ছিল। তাদের আচরণও স্বাভাবিক ছিল।