শত কোটি টাকার সেতুতে জ্বলে না বাতি

সাইফুর রহিম শাহীন

বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ , ০১:৩৮ পিএম


শত কোটি টাকার সেতুতে জ্বলে না বাতি
ছবি: আরটিভি

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার-খুরুশকুল সংযোগ সেতুতে উদ্বোধনের পর দিন থেকেই জ্বলে না কোন বাতি। সন্ধ্যার পর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় ব্যয়বহুল ও আধুনিক এ সেতুটি। 

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় মানুষের দীর্ঘ প্রত্যাশিত হলেও সন্ধ্যা নেমে রাত হলেই ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় সেতুটি। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই অন্ধকারে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয় এই সেতু এবং আশপাশের এলাকা। তাই পথচারীরা থাকে আতঙ্কে।

স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলা স্বাভাবিক থাকে সেতুর পরিবেশ। দৃষ্টিনন্দন সেতুতে বৈকালিক ভ্রমণে যান পর্যটকসহ স্থানীয়রা। কিন্তু রাতের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভয়েও কেউ সেখানে যাননা। কারণ সেতুর বাতিগুলো আছে কিন্তু আলো জ্বলেনা। কখনও সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। পথচারীরা ছিনতাইয়ের শিকার হন। অভিযোগ আছে, রাতে বাতি বিহীন সেতুতে জমে উঠে মাদকসেবীদের আড্ডা। নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও লিপ্ত হচ্ছে এ মাদকসেবীরা। 

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয় খুরুশকুলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের কক্সবাজার-খুরুশকুল সেতুর নির্মাণ কাজ। পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবরে। এরপর একই সালের ১১ নভেম্বর সেতুটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিলো। 

উদ্বোধনের দিন সড়ক বাতি জ্বললেও পরে সেতুর বাতি ও বৈদ্যুতিক তার নিরাপত্তার স্বার্থে খুলে নিয়ে যায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যার ফলে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অন্ধকারাছন্ন এই সেতু দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ছিনতাই ও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।

সেতুটি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এলজিইডির তথ্যমতে জানা যায়, ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ এই সেতুতে ৩টি ৬৫ মিটার গভীরে স্প্যান এবং ৫০ মিটারের ১০টি স্প্যান রয়েছে। এতো দীর্ঘ সেতু আগে কখনও দেশীয় নকশায় তৈরি হয়নি দাবি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন কক্সবাজার শহর থেকে বাড়িতে ফিরতে অনেকেরই অনেক রাত হয়ে যায়। পুরো সেতু ও সড়কজুড়ে কোন লাইট না থাকায় পুরোটা পথ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। কারণ পুরাতন ব্রিজ দিয়ে যাওয়া আসা করতে ১ ঘণ্টার মতো সময় লেগে যেতো। এখন তা লাগে ১০ মিনিট। স্বল্প সময়ে যাতায়াতের কারণে সেতুটি বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে এতো টাকা খরচ করে সেতু করলেও সড়কজুড়ে বাতি থাকলেও জ্বলে না। এটাই দুঃখজনক। 

খুরুশকুল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল আমিন বলেন, সেতুতে উঠার পর থেকে ছিনতাইয়ের আতঙ্কে থাকতে হয় পথচারীদের। সন্ধ্যা হলেই পুরো সেতু ও সড়কটি অন্ধকার হয়ে যায় বাতি না জ্বলার কারণে। এলজিআরডি কর্তৃপক্ষের উচিত সড়ক বাতি দিয়ে সেতুর সৌন্দর্য ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। 

এ নিয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থা এলজিইডি কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ তৌহিদুল বেলাল বলেন, আমরা বিদ্যুৎতের লাইনের জন্য আবেদন করেছি। বিদ্যুতের লাইন পেলে বাকি কাজগুলো করে দেবো। ওখানে চুরি রাহাজানি বন্ধে আমাদের সিকিউরিটি গার্ড রয়েছে। আমাদের সিকিউরিটি গার্ডদের কারণে অলরেডি এসব চুরি রাহাজানি মতো কাজ বন্ধ হয়েছে। 

সচেতন মহলের দাবি, কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র তিন মিনিটের দূরত্বে নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন এ সেতু। সেতু–সড়কের পাশেই বাঁকখালী নদী আর কয়েকটি জলাভূমি। এই সেতু নির্মিত হওয়ায় অর্থনীতিতে এক দারুণ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেতুটি শুধুমাত্র দুই পাড়ের সংযোগ ঘটায়নি, নতুন করে সংযোগ স্থাপন করেছে খুরুশকুলের অর্থনীতিতে। 

তবে ২৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতুটি যদি রাতে আলোকিত করা না হয়, তাহলে তা জনসাধারণের কোনো উপকারেই আসবে না।

আরটিভি/এমকে/এআর

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission