এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. হাসান। সকাল ১০ তার পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা। এর আগেই সকাল ৭টায় বাড়িতে এল প্রায় দুই মাসে আগে মারা যাওয়া প্রবাসী বাসার লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি। বুকে পাথর চেপে বাড়ির আঙিনায় বাবার লাশ রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় হাসান।
রোববার (২৭ এপ্রিল) কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ইউছুফপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। প্রায় দুই মাস আগে সৌদি আরব মারা যাওয়া ওই প্রবাসীর নাম মো. হানিফ মিয়া। তার ছেলে হাসান স্থানীয় ইউছুফপুর আইডিয়াল হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৮ সালে জীবিকার তাগিদে হানিফ মিয়া সৌদি আরবে পাড়ি জমান। দীর্ঘ সময় প্রবাস জীবন কাটানোর পর কর্মরত অবস্থায় হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তিনি। প্রায় আড়াই মাস পর নানা আনুষ্ঠানিকতা আর জটিলতা শেষে শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে দেশে আসে তার নিথর দেহ।
রোববার ভোরে হানিফ মিয়ার মরদেহ নিয়ে লাশবাহী গাড়িটি বাড়িতে পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন পুরো পরিবারের সদস্যরা। বড় ছেলে হাসান বারবার মূর্ছা যাচ্ছিল। একই দিন তার পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষা। দায়িত্ববোধের কঠিন ভার মাথায় নিয়ে চাচাতো ভাই আরফিনের সহায়তায় পরীক্ষা দিতে রওনা হয় সে।
বাবার লাশ বাড়িতে রেখে বুক ভরা কান্না চেপে পরীক্ষার হলে বসে হাসান। চোখের কোণে অশ্রু নিয়ে উত্তরপত্র লিখতে হয় তাকে। পরীক্ষা শেষে ছুটে আসে বাড়িতে। তারপর বাদ জোহর গ্রামের মসজিদে বাবার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
হাসান বলে, বাবা আমাদের মানুষ করার জন্য বিদেশে অনেক কষ্ট করেছেন। আমরা ভাইবোনেরা এতিম হয়ে গেলাম। আমার বাবা খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। আমি বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. বাবু কাউছার সরকার বলেন, এমন দুর্বিষহ সময়ে হাসানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ শুধু দায়িত্বের নয়, এক অসাধারণ মানসিক শক্তির প্রমাণ।
আরটিভি/একে