সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় এসএসসি পরীক্ষার্থী ইমন হোসেনকে লাঠির আঘাতে সম্প্রতি হত্যা করার ঘটনা দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। এসএসসি পরীক্ষায় খাতা না দেখানোর জন্য ইমনকে হত্যা করা হয়েছে এমন খবর এতদিন প্রচারিত হলেও তা সত্য নয় বলে জানিয়েছে র্যাব। ইমন হত্যার ২৮ দিনের মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করেছে বলে দাবি করেছে সংস্থাটি।
শুক্রবার (১৬ মে) বেলা ১১টায় সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে র্যাব-১২ এর সদর দপ্তরের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১২ এর অধিনায়ক মো. আতিকুর রহমান মিয়া।
ইমন হত্যার ঘটনায় র্যাব-১২ ও র্যাব-৪ এর যৌথ একটি দল তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন পশ্চিম মানিকদি এলাকা থেকে হত্যায় জড়িত মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে ৯ মে মামলার ২ নম্বর আসামি সাকিবকেও গ্রেপ্তার করে র্যাব-১ ও র্যাব-১২।
র্যাব-১২ এর অধিনায়ক মো. আতিকুর রহমান মিয়া বলেন, হত্যাকাণ্ডের চার দিন আগে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল হোসনা মার্কেট এলাকায় ইমনকে তার ছোট বোনের সঙ্গে দেখে মাসুদ রানা কটূক্তি করে এবং তাদের সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ইমন বিষয়টি অপমানজনক মনে করে। পরে দুপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর ইমন ও তার বন্ধুরা মাসুদ রানাকে চড়থাপ্পড় মারে এবং পকেটে থাকা ৩৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে মাসুদ রানা তার বন্ধু স্বাধীন ও সাকিবসহ আরও কয়েকজনকে ডেকে নেয়।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন ১৮ এপ্রিল বিকেলে মাসুদ রানা দৌলতপুর কলেজ মাঠে বসে থাকা অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবক তাকে শহীদ মিনারের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইমনসহ আরও ৫-৬ জন। ইমন ও তার বন্ধুরা মাসুদকে মারধর করে এবং আলামিনের খোঁজ জানতে চায়। মাসুদ কিছু না জানার কথা বললে তারা তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে আনে। একপর্যায়ে মাসুদ তাদের হাত থেকে পালিয়ে নিজ বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে মাসুদ রানা তার বন্ধুদের ফোন করে ঘটনাটি জানান। তারা সবাই মাসুদের বাড়িতে একত্র হয় এবং ইমনকে খুঁজতে বের হয়।
আতিকুর রহমান মিয়া বলেন, একপর্যায়ে বেহাপাড়া এলাকায় ইমনকে দেখতে পেয়ে তারা ঘিরে ধরে। মাসুদ রানা তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ইমনের মাথায় সজোরে আঘাত করে। স্থানীয়রা সেখানে গিয়ে মাসুদ রানা ও সাকিবকে আটক করে একটি ঘরে আটকে রাখে এবং ইমনকে হাসপাতালে পাঠায়। আহত অবস্থায় ইমনকে প্রথমে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিছু দিন চিকিৎসার পর সে বাড়ি ফিরে আসে। তবে ২৫ এপ্রিল ভোরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত ইমনের বাবা ২৭ এপ্রিল বেলকুচি থানায় মামলা করেন। এরপর থেকেই মাসুদ রানা ও তার সহযোগীরা পলাতক ছিল।
র্যাব অধিনায়ক আরও বলেন, আসামিদেরকে বেলকুচি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
আরটিভি/এমকে/এআর