ঢাকাসোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

মেয়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে ১২ ঘণ্টা ধরে থানায় বাবা

রংপুর প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫ , ০৫:৩৮ পিএম


loading/img
ছবি: সংগৃহীত

রংপুর নগরীর সরেয়ারতল এলাকায় যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় স্বামীর বিরুদ্ধে গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, মরদেহ নিয়ে থানায় এসে এজাহার দিলেও পুলিশ মামলা নিতে রাজি হয়নি। ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন জানিয়ে আদালতে মামলা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন থানার ওসি। তবে মামলা করতে মেয়ের মরদেহ বাড়িতে রেখে এসে থানার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ভুক্তভোগীর বাবা ও তার স্বজনরা। 

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৪ জুন) দুপুর ১২টায় নগরীর মাহিগঞ্জ থানায় গিয়ে দেখা যায়, গৃহবধূ রেজোয়ানার পরিবারের সদস্যরা থানার সামনে অপেক্ষা করছেন।

আরও পড়ুন

জানা যায়, গত ৮ জুন দুপুরে গৃহবধূ রেজোয়ানার গায়ে আগুন দেওয়া হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে মারা যান। রাত ১২টার দিকে মরদেহ নিয়ে থানায় আসেন নিহতের পরিবার। শনিবার দুপুর পর্যন্ত থানায় অপেক্ষা করছেন তারা।

ভুক্তভোগী পরিবার জানিয়েছে, ঈদের পরদিন দুপুরে ঘরের দরজা বন্ধ করে হাত বেঁধে গৃহবধূ রেজোয়ানা দিল আফরোজের গায়ে আগুন দেয় তার স্বামী আব্দুল করিম। এ সময় রেজওয়ানার বাবা তার বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের অভিযোগ কয়েক মাস ধরে যৌতুকের ৬ লাখ টাকার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন স্বামী আব্দুল করিম।

বিজ্ঞাপন

নিহতের বাবা রেজাউল করিম জানান, ঈদের দিন রাতে মেয়ের বাড়িতে কোরবানির মাংস নিয়ে যান তিনি। পরদিন দুপুরে তিনি খাওয়া-দাওয়া করে রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এ সময় তার মেয়ে, জামাই ও তার মা খেতে বসেন। তিনি শুনতে পান তার মেয়ে বলছিলেন ‘আমার খেতে বসেও শান্তি নাই। তিনি ঘর থেকে বের হয়ে দেখেন তার মেয়ে-জামাই সেখানে নেই। একটু পর ঘরের ভেতর থেকে তার মেয়ে চিৎকার করে ‘আমাকে বাঁচাও’। এ সময় তিনি ঘরের দরজা খোলার চেষ্টা করলে দেখেন ভেতর থেকে লক করা। পরে বেলকনিতে গিয়ে গিয়ে দেখেন তার মেয়ের শরীরে আগুন জ্বলছে। তার মেয়ে নিজেকে বাঁচাতে সেখানে ঘুরছেন। পরে স্থানীয়রা সেখানে এসে বেলকনির বাইরে থেকে পানি ঢেলে আগুন নিভিয়ে ফেলে। পরে তাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান। ঢাকা মেডিকেলে ৪ দিন ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার ভোরে তার মেয়ে মারা যান। 

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

ভুক্তভোগী রেজোয়ানার মামা মনির হোসেন বলেন, অ্যাম্বুলেন্সযোগে মরদেহ নিয়ে আসার সময় ফোন করে পুলিশ তাদের নগরীর মাহীগঞ্জ থানায় ডাকেন। এ সময় হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তার জামাই আব্দুল করিম, তার বোন পারভীন ও দুলাভাই ফখরুল তাদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন। রাত ১২টার দিকে মরদেহ নিয়ে থানায় আসার পর অভিযুক্ত তিনজনকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। কিন্তু আধাঘণ্টা পর পুলিশ পারভীন ও তার স্বামী ফখরুলকে ছেড়ে দেয়। পরে তারা থানার গেট থেকে তাদের আটক করে আবারও পুলিশের কাছে দেন। এ ঘটনায় মামলার এজাহার দেওয়া হলেও পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। তারা পরিবারের লোকজন ১২ ঘণ্টা থেকে মামলা দিতে থানায় অবস্থান করছেন বলে জানান।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন মাহিগঞ্জ থানার ওসি মো. আব্দুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, এজাহারে কিছু ভুল থাকায় মামলা গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে। 

তবে তদন্তের আগে ওই গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন এমন কথা তিনি কীভাবে জানলেন, এ প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এ সময় থানায় উপস্থিত সহকারী পুলিশ কমিশনার (মাহিগঞ্জ জোন) মারুফ আহমেদ বলেন, এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। আটক ৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। 

ওসির বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত করে এ রকম কোনো ঘটনা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

আরটিভি/এমকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |