মাদারীপুরের ডাসারে চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে বেঁধে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
রোববার (৬ জুলাই) সকাল থেকে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ বলছে, দেড় মাস আগে ভ্যান চুরির অভিযোগে ওই দুই কিশোরকে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানাধীন ভাঙ্গারহাট এলাকার বাসিন্দারা আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তবে কোটালীপাড়া থানার পুলিশ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয় বলে জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেঁধে পেটানো ওই কিশোরের নাম জাকির কবিরাজ (১৭) ও হাসিব হাওলাদার (১৬)। জাকির ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের পশ্চিম মাইজপাড়া এলাকার বেলায়েত কবিরাজের ছেলে ও হাসিব একই ইউনিয়নের দক্ষিণ মাইজপাড়া গ্রামের কুদ্দুস হাওলাদারের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক মাস আগে ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের একটি বাড়িতে রাতের আধারে চুরি করতে যায় ওই দুই কিশোর। টের পেয়ে স্থানীয় লোকজন ওই দুই কিশোরকে আটক করে প্রথমে হাত বেঁধে রাখে। পরে সকাল হলে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে ওই দুই কিশোরকে একটি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লাঠিসোঁটা দিয়ে মারধর করে। এরপরই ওই দুই কিশোরকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে স্থানীয় লোকজন।
এ ঘটনায় ধারণ করা ১০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, হাত বাঁধা অবস্থায় দুই কিশোরকে বেঁধে মারধর করছেন স্থানীয় জনতা। পরে তাদের একটি খুঁটির সঙ্গেও বেঁধে রাখতে দেখা যায়।
এদিকে কাজীবাকাই ইউনিয়নের পুর্বমাইজপাড়া এলাকায় মহিউদ্দিন মাতুব্বরের বাড়িতে এক সপ্তাহ আগে একটি চুরির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ডাসার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারে এই চুরির সঙ্গে ওই কিশোর জাকির জড়িত। পরে পুলিশ জাকির কবিরাজের ঘরে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন ধরনের চোরাই মালামাল উদ্ধার করে। এরপর ওই মালামাল স্থানীয় এক ব্যক্তির জিম্মায় রাখেন। এ ঘটনার পর থেকে জাকির ও হাসিব পুলিশের গ্রেপ্তার আতঙ্কে পলাতক রয়েছে।
মারধরের ঘটনা জানতে চাইলে কিশোর জাকির কবিরাজ মুঠোফোনে বলেন, আমি কোনো চুরির সঙ্গে জড়িত নই। বিনা অপরাধে আমার ওপর চুরির দায় চাপানো হচ্ছে। আমাকে ও আমার এক বন্ধুকে বিনা কারণে শুধু মাত্র সন্দেহের জেরে বেঁধে রেখে মারধর করা হয়েছে। হাত বেঁধে মারধরের ঘটনা আরও আগের। এখন আবার নতুন করে আমার ঘরে চোরাই মাল পাওয়া গেছে অভিযোগ তুলে হয়রানি শুরু করেছে। এ কারণে আমি এলাকায় নাই।
জাকিরের বন্ধু হাসিব হাওলাদার বলেন, আমাদের দুজনের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমাদের বিনা কারণে মারধর করে সেই ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দিয়ে আমাদের চোর বানানো হচ্ছে। সমাজে হেয়প্রতিপণ্ন করা হচ্ছে। অথচ কোনো চুরির সঙ্গে আমরা কেউ জড়িত না।
কাজিবাকাই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন মাতুব্বর বলেন, হাসিব ও জাকির দুজনই ছিঁচকে চোর। আমার ঘরেও চুরি হয়েছে। আমার ঘরের মালামাল পুলিশ জাকিরের ঘর থেকে উদ্ধার করেছে। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করে ওই দুই চোরকে গ্রেপ্তার করলেই চোরাই সব মালামাল উদ্ধার করতে পারবে।
মাইজপাড়া এলাকার বাসিন্দা শাহাদাত আকন বলেন, হাত বেঁধে দুই কিশোরকে মারধরের ভিডিওটি দেখেছি। প্রকাশ্যে এভাবে নির্যাতন আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া। সমাজে এ ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। তবে চুরি ডাকাতি বন্ধে প্রশাসনকে আরও তৎপর ভূমিকা রাখতে হবে।
এ বিষয়ে ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ এহতেশামুল ইসলাম বলেন, হাত বেঁধে মারধরের ভিডিওটি আমি দেখেছি। দেড় মাস আগে ডাসারের পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানাধীন ভাঙ্গারহাট এলাকায় ভ্যান চুরি করতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে আটক হয়েছিল জাকির ও হাসিব। তখন তারা কিভাবে যেন ছাড়া পেয়ে যায়। তখন স্থানীয় লোকজন তাদের হাত বেঁধে মারধর করেছিল কিনা তা আমাদের জানা নেই। ডাসার থানাধীন কোনো এলাকায় তাদের বেঁধে পেটানো হয়নি।
তিনি আরও বলেন, জাকির ও হাসিব দুজনই স্থানীয় চোর। তাদের বিরুদ্ধে ডাসার থানায় চুরির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযানও চলমান রয়েছে।
আরটিভি/এএএ -টি