পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলা ঘিরে টানা দুই সপ্তাহ ধরে চলা শঙ্কার মধ্যেই পাকিস্তানে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ভারত। জবাবে ভারতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসলামাবাদ, এমন দাবি দিল্লির। দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর দাবি করছে। এই পরিস্থিতিতে ইরান ও আফগানিস্তান কার পক্ষ নেবে এ নিয়ে অনেকের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, কাশ্মীরের পহেলগামে হামলার পর আফগানিস্তান এক বিবৃতিতে হামলার জন্য নিন্দা জানায়। একইসঙ্গে এ ধরনের ঘটনা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত করে বলেও জানায় তারা।
এরপর ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়েও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও একটি বিবৃতি দেয় এবং এই সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দুই দেশকে আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা অবসানের আহ্বান জাননো হয়।
তবে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ চলছে। পররাষ্ট্র বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কামার আগা বলেন, আফগানিস্তানের কোনো সরকারই পাকিস্তানের সঙ্গে তার সীমানা অর্থাৎ ডুরান্ড লাইনকে স্বীকৃতি দেয়নি। তাই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে অনেক পুরনো সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। ভারত-পাকিস্তান সংঘাত চরম আকার ধারণ করলে আফগানিস্তানকে ভারতের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাবে।
এ ছাড়া আফগান রাজা ও ব্রিটিশ শাসিত ভারতের বিদেশ মন্ত্রী স্যার মর্টিমার ডুরান্ডের ১৮৯৩ সালে একটি চুক্তির পর আফগানিস্তানের কিছু অংশ ব্রিটিশ-ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর অনেক আফগান শাসক ডুরান্ড চুক্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বলছেন, দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের সঙ্গেই ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে এবং এই সংঘাত বাড়লে এই দেশগুলোর উদ্বেগ বাড়বে।
ইরানের অবস্থান কী?
চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি চলতি সপ্তাহে পাকিস্তান ও ভারত সফর করেছেন। ইরান পহেলগাম হামলার নিন্দা করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে মধ্যস্থতার প্রস্তাবও দিয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পহেলগাম হামলার নিন্দা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেছিলেন এবং ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গেও কথা বলেছেন।
ইরান ও পাকিস্তান প্রতিবেশী এবং দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। কামার আগা বলেন, ইরান যত দ্রুত সম্ভব ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের অবসান দেখতে চায়, কারণ এ অঞ্চলে সংঘাত বাড়লে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত থাকার ফলে তাদের দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
অন্যদিকে ভারত ও ইরানের মধ্যে ঐতিহাসিক, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক কারণে বাণিজ্যিক সম্পর্কও বেশ মজবুত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত ও ইরানের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫০ কোটি ডলার। ভারত ইরানের শীর্ষ পাঁচটি বাণিজ্যিক অংশীদারের অন্যতম। প্রতি বছর ইরানে প্রায় ১০০ কোটি ডলার মূল্যের চাল পাঠায় ভারত।
ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতে ইরানের তেল রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৯ সালের আগে ভারত তার তেলের চাহিদার ১০ শতাংশ মেটাত ইরানের তেল থেকে।
এ ছাড়া ইরানের চাবাহার বন্দরে ভারত প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। ভারত চাবাহার দিয়ে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার বাজারে প্রবেশ করতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা জানান, দুই দেশের সঙ্গেই ইরানের সম্পর্ক রয়েছে এবং তারা দ্রুত এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে চায় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে চায়।
আরটিভি/আরএ/এআর