ভুল ম্যাসেজে বিপদ মারাত্মক! পরামর্শ বিশেষজ্ঞর
আজকাল ব্যাঙের ছাতার মতো চারপাশে পার্লার, সেলুনের দেখা পাওয়া যায়। আর এসব বেশিরভাগ জায়গার কর্মীগুলো হয় অদক্ষ। যাদের ম্যাসেজের কারণে ঘটতে পারে মারাত্মক বিপদ। গা-হাত-ঘাড় ম্যাসাজ করাতে গিয়ে এমন বিপদ কখন যে কার জীবনে আসবে কেউ জানেন না। যে কারও সঙ্গেই হতে পারে। তাই যে কোনো বিউটি সেলুনে যাওয়ার আগে অবশ্যই জেনে নিন কিছু বিষয়।
চলুন জেনে নিই ভুল মালিশের কি ধরনের বিপদ হতে পারে—
শরীর হালকা ব্যথা, ঘাড় ও কাঁধে যন্ত্রণার সমস্যায় অনেকেই পার্লার সেলুনে গিয়ে ম্যাসাজ করিয়ে থাকেন। এতে প্রাথমিকভাবে কিছুটা স্বস্তি মিললেও কিন্তু অধিকাংশ সময় দেখা যায়, ম্যাসাজ করা ব্যক্তিগুলো প্রশিক্ষিত না হওয়ায় তাদের ভুলের কারণে ম্যাসাজ করা ব্যক্তির জটিল সমস্যা হয়ে থাকে।
কখনো কখনো ম্যাসাজে ভুল কৌশলের কারণে অল্প সময়ের মধ্যে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া আবার অনেক সময় দেখা যায় বন্ধু মহলে দেখা হলে ঘাড়ে-কাঁধে জোরে একটা চাপড় দেয়া হয়। কেউ কেউ আবার পিঠেও চাপড় দিয়ে থাকেন। এসব তাৎক্ষণিক জটিল সমস্যা না করলেও পরে সমস্যার কারণ হতে পারে। এ জন্য ছোট ছোট এই ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি।
কেন এমন হয়?
ডাক্তারি ভাষায় মূলত এই ধরনের কেসে ভার্টিব্রাল আর্টারি ডিসেকশনের কারণে স্ট্রোক হয়। ঘাড়ের দু’ধারে থাকা মোটা দুটো রক্তবাহী ধমনী হলো ভার্টিব্রাল আর্টারি। আচমকা সেখানে কোনও জোর ধাক্কা লাগলে ধমনীর ভিতরের অংশ ছিঁড়ে যেতে পারে বা প্রায়ই আঘাতপ্রাপ্ত হতে হতে ধমনীর পথ সরু বা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। যার ফলে রক্ত জমাট বেঁধে বা রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্রেনে রক্ত পৌঁছতে না পারায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্রেন হেমারেজ শুরু হয়ে যায়।
আকস্মিক এমন পরিস্থিতি ছাড়াও কানেকটিভ টিস্যু ডিজঅর্ডারের (নন-ট্রমাটিক) কারণে ব্যক্তির এই ধমনীর ভিতরের অংশ সোজা না থেকে কাঁপা কাঁপা বা দুর্বল হতে পারে। তাদেরও আঘাত লেগে এই বিপদ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অনেক সময় ধমনির ভিতরের পাতলা আস্তরণ ছিঁড়ে ব্রেনের যে সব অংশে রক্ত পৌঁছনোর কথা নয়, যেখানে ফ্লুইড থাকে সেখানেও রক্ত গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
কারা করবেন ম্যাসাজ?
মনে রাখবেন সেলুন, স্পা-পার্লার-বাড়িতে ম্যাসাজ করতে আসা অপেশাদারদের দিয়ে কখনওই কাঁধ-ঘাড়, পিঠের উপরের অংশ ও মাথায় ম্যাসাজ করাবেন না। শরীরের কোন অংশে কতবার, কতটা চাপ দেওয়া উচিত, কতটা স্পিডে করা উচিত, কোন শিরায় কতটা জোর দিলে শিয়রে মৃত্যু এসে দাঁড়াতে পারে তা নাপিত-হেয়ার স্টাইলিস্টরা জানেন না। হয়তো সেই নাপিত ঘাড়-কাঁধের ব্যথা কমানোর ম্যাসাজের মোটামুটি টেকনিক রপ্ত করেছেন।
কিন্তু সমস্যা সব সময় কেউ কতটা জানে, তা দিয়ে হয় না। কতটা জানে না, তা থেকে হয়। তাই ব্যথা-যন্ত্রণা হলে প্রথমেই নিউরো রিহ্যাবলিটেশন বিশেষজ্ঞর কাছে যান। তিনি সমস্যা বুঝে নিউরো-ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে পাঠাতে পারেন। অ্যানাটমি, ফিজিওথেরাপি, প্যাথোলজি নিয়ে সঠিক জ্ঞান ও ডিগ্রি আছে এমন ব্যক্তি সঠিকভাবে এইসব যন্ত্রণার উপশম করতে পারেন। পড়াশোনা করা, পেশাদার ম্যাসিওর, কায়রোপ্র্যাক্টর কিছুটা তবু জানেন।
বিপদ বুঝবেন কীভাবে?
ভুলভাল পদ্ধতিতে ম্যাসাজ করানোর জন্য ভার্টিব্রাল আর্টারি ডিসেকশন একটু একটু করে শুরু হতেও পারে। সেক্ষেত্রে লক্ষণ হিসাবে যেদিকের ভার্টিব্রাল ধমনীর ভিতরে সমস্যা তৈরি হয় সেদিকের মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। দু’দিকের শিরায় সমস্যা হলে গোটা মাথাজুড়েই অসহনীয় যন্ত্রণা হবে। ব্যথা নিচ থেকে মাথার মাঝের দিকে উঠতে থাকবে। মাইগ্রেন ভেবে অবহেলা করবেন না। এটা শনাক্ত করতে সিটি অ্যাঞ্জিওগ্রাম করতে হবে। ফেলে রাখলে পরিস্থিতি হবে আরও জটিল। এছাড়া ব্যালেন্সের সমস্যা হয়, হাঁটাচলায় অসুবিধা হবে। কথা বলতে, দেখতে অসুবিধা হবে। কখনও কখনও একটা চোখ নেমে যায়।
সেলুনে সতর্ক
- নামীদামি বা এলাকার সেলুনে গিয়ে ঘাড়-কাঁধ-মাথায় ম্যাসাজ করাবেন না।
- সেলুনে শ্যাম্পু করতে গিয়েও ভার্টিব্রাল আর্টারি ডিসেকশন হতে পারে। চুল ধোয়ানোর সময় সিঙ্কে ঘাড়ের চাপ লাগে। তখন বিপদ ঘটতে পারে। একে বলে ‘বিউটি পার্লার স্ট্রোক সিন্ড্রোম’।
- চুল ধোয়ার সময় খেয়াল রাখুন আপনার ঘাড় কমফর্টেবল পজিশনে রাখা আছে কি না। ঘাড় পিছন দিকে ২০ ডিগ্রির বেশি ঝোঁকানো উচিত নয়। ঝুঁকি কমাতে অ্যাডিশনাল নেক সাপোর্ট চেয়ে নিন।
- অতিরিক্ত হাই প্রেশার বা স্ট্রোক হওয়ার অন্যান্য ঝুঁকি থাকলে আগে থেকে সেলুনে জানিয়ে রাখুন। সেক্ষেত্রে শ্যাম্পুর সময় মাথা ওপর বা পিছনের দিকে না ঝুঁকিয়ে রেখে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখুন।
আরটিভি/এফআই
মন্তব্য করুন