যেসব ঘরোয়া উপায়ে গজাবে নতুন চুল
চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকেই। অল্প বয়সেই মাথায় টাক পড়ে যাচ্ছে নারী-পুরুষ উভয়েরই। নানা কারণে চুল পড়তে পারে। ধুলাবালু, বায়ুদূষণ ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেও চুল পড়ার হার বেড়ে যায়। দিনে একশোটা পর্যন্ত চুল পড়া কিন্তু স্বাভাবিক। সারাদিনে ৫০-১০০টা চুল পড়তেই পারে। আবার সেই জায়গায় নতুন চুলও গজিয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা দেখা যায় তখনই, যখন চুল পড়ার পর আর নতুন করে চুল ওঠে না, বা অত্যাধিক চুল পড়তে থাকে।
এই চুল পড়া বন্ধ করার জন্য নানা পদ্ধতি আমরা মেনে চলি। কখনও দামি দামি প্রোডাক্ট ব্যবহার করি। কখনও বা ঘরোয়া উপায়ও কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। আসলে চুল পড়া বন্ধ করার জন্য আমাদের আগে জানা প্রয়োজন যে, চুল পড়ার কারণ। সেই মতো ঘরোয়া উপায় কাজে লাগিয়ে চুল পড়া বন্ধ করতে পারেন আপনি।
যেভাবে বুঝবেন অত্যধিক চুল পড়ছে:
- মাথার সামনের দিকে এবং স্ক্যাল্পে চুলের ঘনত্ব কমতে শুরু করেছে।
- ১০০টা পর্যন্তও চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু চুল পড়ার পরিমাণ আগের তুলনায় বাড়লেই মুশকিল।
- ভ্রুর চুল কিংবা চোখের পাতা, সর্বত্রই চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
- মাথার ত্বকে খুশকির সমস্যা বেড়েছে বা স্ক্যাল্প ইনফেকশন দেখা দিচ্ছে।
তবে কয়েকটি ঘরোয়া উপায়েই সমাধান হতে পারে এই চুল পড়ার সমস্যা। জেনে নিন সেই উপায়গুলো কী কী—
ঘি এবং অলিভ অয়েল: প্রথমে ছোট একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ ঘি এবং ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ভালো করে মিশিয়ে নিন। এ বার এই মিশ্রণটি হালকা গরম করে নিন। খুব গরম তেল কিন্তু মাথার ত্বকে মাখা যাবে না। এ বার মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে ভালো করে চুল আঁচড়ে নিন। তারপর আঙুলের ডগা দিয়ে মাথার ত্বকে এই মিশ্রণ মেখে নিন। বিশেষ করে মাথার যে যে অংশ একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছে, সেখানে ভালো করে মাসাজ করুন। আধ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
ঘি এবং অলিভ অয়েল থেকে যা পাওয়া যায়: খাঁটি ঘিয়ের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে। অন্য দিকে ভিটামিন ই এবং কে-র পাশাপাশি অলিভ অয়েল মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ। এই সমস্ত উপাদান চুলের জন্য ভালো। মাথার ত্বকের আর্দ্রতা, পিএইচের সমতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে। ফলে চুল মজবুত হয়। রক্ত চলাচলও স্বাভাবিক থাকে।
নারিকেল তেল, কালোজিরা ও মেথির মিশ্রণ: কালোজিরা এবং মেথি কড়া রোদে শুকিয়ে একসঙ্গে গুঁড়া করে নিন। এরপর নারিকেল তেলের সঙ্গে গুঁড়ো করা মেথি ও কালোজিরে মিশিয়ে মিশ্রণটিকে কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নিন। মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর একটি কাঁচের বোতলে রেখে দিন। এটি অন্তত তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকবে। মিশ্রণটি চুলে লাগানোর আগে এর সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশ্রিত করে মাথার ফাঁকা স্থানে লাগিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করবেন। কয়েক মাসের মধ্যেই হাতেনাতে ফল পাবেন। এসব উপকরণ চুল পড়া বন্ধ করবে দ্রুতই।
নিম পাতার রস: নিমপাতার উপকারিতার কথা কম-বেশি সবারই জানা। এটি প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক যা নতুন চুল গজাতে এবং চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি চুলের গোড়া শক্ত করে এবং খুশকি দূর করে। নিমপাতা ভালো করে ধুয়ে পেস্ট করে নিন। এরপর সেই পেস্ট থেকে রস বের করে মাথার পুরো অংশে, চুলের গোড়াতে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। চাইলে পেস্টটি সরাসরি ব্যবহার করতে পারেন। কমপক্ষে ৩০ মিনিট রেখে তারপর হালকা গরম পানি ও শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন। এভাবে সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চারদিন করুন। চুল পড়ার সমস্যা দূর হবে মাসখানেকের মধ্যেই।
নিম পাতার পানি: আরেকটি উপায়ে ব্যবহার করতে পারেন নিমপাতা। পাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে পানিতে ফুটিয়ে নিন। এই পানি ঠান্ডা করে তা দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এভাবেও উপকার পেতে পারেন।
দীর্ঘস্থায়ীভাবে চুল পড়া রোধ করতে ঘরোয়া উপায়ে যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি অগোছালো জীবনযাত্রার পরিবর্তন করতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম, পরিমাণমতো পানি পান ও সময়মতো খেতে হবে। তালিকায় রাখুন স্বাস্থ্যকর সব খাবার। তাজা ফল ও শাক-সবজি থাকুক পাতে। চুল সুস্থ ও সুন্দর রাখতে প্রচেষ্টা থাকতে হবে আপনারই।
আরটিভি/এফআই
মন্তব্য করুন