ঢাকাবুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

বিতর্ক নিয়ে এবার মুখ খুললেন জেনারেল আজিজ

আরটিভি নিউজ

শনিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ , ০১:২৬ পিএম


loading/img
`খালেদ মুহিউদ্দিন জানতে চায়’ শীর্ষক ইউটিউব টকশোতে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ

সেনাপ্রধানের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সদ্যবিদায়ী জেনারেল আজিজ আহমেদ। ওই প্রতিবেদনে তার এবং তার স্বজনদের বিষয়ে বিভিন্ন বিতর্কিত তথ্য প্রকাশিত হয়েছিল। গতকাল শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে ‘খালেদ মহিউদ্দিন জানতে চায়’ শীর্ষক ইউটিউব টকশোতে সেসব বিতর্কিত প্রসঙ্গে মুখ খোলেন সাবেক এই সেনাপ্রধান। এক ঘণ্টার ওই আলোচনায় কথা বলেছেন তাকে নিয়ে উঠে আসা নানা অভিযোগের বিষয়ে৷ 

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে উঠে এসেছে আল জাজিরার তথ্যচিত্র, ভাইদের বিষয়ে নানা অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বাতিল, নির্বাচনের সেনাবাহিনীর ভূমিকাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ৷     

যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বাতিলের খবর

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি বাংলাদেশে কিছু গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়েছিল, সাবেক এই সেনাপ্রধানের ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ শুরুতেই এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল তার কাছে৷ জেনারেল আজিজ সরাসরি তা অস্বীকার করেন৷ জানান, তিনিও গণমাধ্যমেই এই সংবাদ শুনেছেন৷

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কারো ভিসা বাতিল করলে তাকে তা জানানোর বিধান আছে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য দেশটির কোনো দায়িত্বশীল দপ্তরের কাছ থেকে পাননি৷ গণমাধ্যমগুলো যথাযথ সূত্র ও তথ্য-প্রমাণ উল্লেখ না করেই এই বিষয়ে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে বলে তার অভিযোগ৷ এই মুহূর্তে তার বৈধ ভিসা আছে কি না, এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, আছে৷’

‘এক দুই কোটি টাকা দেখান’

বিজ্ঞাপন

তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক কি না, এমন প্রশ্ন করেন সঞ্চালক৷ জবাবে আজিজ আহমেদ বলেন, ‘কয়েকশ কোটি নয় আমাকে সামান্য কিছুর সূত্র দিন যাতে বাকি জীবন স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারি৷ শত শত কোটি নয় যদি.. বলতে পারেন লক্ষ লক্ষ বা এক-দুই কোটি টাকা আছে তাহলে ওটা দিয়ে আমি পরিকল্পনা করব আমার ভবিষ্যতটা স্বাচ্ছন্দ্য হতে পারে কি না৷’

তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মনগড়া হিসেবে অভিহিত করেন তিনি৷ অবসর জীবন নিয়ে তিনি বলেন, রিটায়ারম্যান্টের পরে তিনি এখন দায়িত্বের চাপ থেকে মুক্ত৷ এই মুহূর্তে পোস্ট ডক্টরাল করছেন তিনি, সেই বিষয়ে গবেষণা করেই সময় কাটাচ্ছেন৷

ব্যক্তিগত সহকারীর ‘পদচ্যুতি'

সেনাপ্রধানের দায়িত্ব ছাড়ার পরপরই তার ব্যক্তিগত সহকারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে খবর বের হয়৷ এ বিষয়ে বাংলাদেশে ১৬তম সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, আমি যখন রিটায়ারম্যান্টে আসি তখন শুনেছি৷ সে অবসরে গিয়েছে৷... ডিসিপ্লিন বলে একটা কথা আছে৷ দুর্নীতির বিষয়টি আরও গভীর৷...অত সিরিয়াস যদি কোনো কিছু হতো ‘হি শুড হ্যাভ বিন ডিসক্লোজড ফ্রম দ্য সার্ভিস’৷ সে ক্ষেত্রে আমরা অনেককে জেল দিয়ে থাকি, অনেককে বরখাস্ত করে থাকি৷ ‘হি ওয়াজ গিভেন নরম্যাল রিটায়ারম্যান্ট'৷ আমি এই ব্যাপারে ‘ফারদার’ কিছু বলতে চাচ্ছি না৷’

আল জাজিরার তথ্যচিত্রে বিব্রত আজিজ

চলতি বছরের ফেব্রয়ারি মাসে এই সেনাপ্রধান ও তার ভাইদের নিয়ে একটি অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র প্রকাশ করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা৷ এ নিয়ে তখন তোলপাড় হয় বাংলাদেশে৷ এই তথ্যচিত্র প্রকাশের পর শুরুতে বিব্রত হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন আজিজ আহমেদ৷ সেই সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকলেও সেখানে এর কোন প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেন৷

তথ্যচিত্রে, অভিযোগ করা হয়েছিল ইসরায়েল থেকে স্পাইওয়্যার ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ক্রয় প্রক্রিয়ায় জেনারেল আজিজ প্রভাব খাটিয়েছেন৷ এর উত্তরে তিনি দাবি করেন কেনাকাটাগুলো যখন হয় তখন সেনাপ্রধান হিসেবে এর সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না৷ যদিও তিনি দায়িত্ব নেওয়ার একদিন পর নজরদারি প্রযুক্তি ক্রয়ের স্বাক্ষর হয়, তিনি দাবি করেন, প্রক্রিয়াগুলো আগেই সম্পন্ন হয়েছিল৷

তিনি বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি কেউ যদি কোনো একটা ‘এভিডেন্স' দিতে পারে যে আমি বিজিবিতে থাকাকালে, আমি সেনাপ্রধান থাকাকালীন আমার কোনো ভাই বা আত্মীয়কে বিজিবি বা সেনাবাহিনীর কোনো ‘আর্মস, ইকুয়েপমেন্ট, অ্যামুনেশন প্রক্রিউরম্যান্ট, কন্ট্রাক্ট’ দিয়েছি এটা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে ‘আই উইল অ্যাকসেপ্ট অ্যানিথিং৷ আই অ্যাম রেডি৷ আই এম গিভিং এ চ্যালেঞ্জ৷’

ভাইদের জাতীয় পরিচয়পত্র

বাংলাদেশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জেনারেল আজিজের দুই ভাই  হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ নতুন নাম আর ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন৷ এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘কত লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি লোকজন বিদেশে আছে তাদের কি নিজস্ব নাম পিতৃপরিচয় বা ঠিকানা কি একচুয়েলটা ইউস করছে?’

নাম-পরিচয় পরিবর্তনে তিনি প্রভাব খাটিয়েছিলেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘একটা উদাহরণ দেন কোন জায়গায় আমি কাউকে টেলিফোন করেছি কি না, যে আপনি একে নির্দেশ দিয়েছেন যে এটা করে দেও৷ এ রকম কোনো এভিডেন্স কি আপনাদের কাছে আছে? প্রমাণ দেন৷’

আবেদনপত্রের কোন পর্যায়ে তার অধীন কোন বিজিবি অফিসার যুক্ত ছিলেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এই ধরনের কোনো কিছু হয়েছে কীনা আমার কিছু জানা নেই৷ আর এ ধরনের স্বাক্ষর করার প্রসঙ্গ এসেছিল কি না, আমার ঠিক মনে পড়ছে না৷’

কোর্সমেটের সঙ্গে ফোনালাপ

আল জাজিরার তথ্যচিত্রে জেনারেল আজিজ ও তার একজন কোর্সমেটের কথোপকথন ফাঁস করা হয়৷ এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আজিজ আহমেদ দাবি করেন অডিওটি সঠিক নয়৷ ‘ইট ওয়াজ এ কাট অ্যান্ড পেস্ট৷ ইট ওয়াজ টেম্পার্ড৷...অনেক কিছু করা হয়েছে’ বলেন তিনি৷

এই বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ বলেন, ‘এতদিন আমি ইউনিফর্মে ছিলাম, এটার ব্যাপারে যদি আমি কোন লিগ্যাল অ্যাকশনের বা ব্যবস্থা নিতাম অনেকে প্রশ্ন করত যে আই এম এক্সারসাইজিং মাই অথরিটি৷ আই এম মিসইউজিং মাই পাওয়ার৷ আমি কিন্তু এখন ইউনিফর্মের বাইরে আসছি৷ আগামী জুনের ২৫ তারিখের পর আমার সম্পূর্ণ রিটায়ারম্যান্ট শুরু হবে৷ তখন আমি চিন্তা করব হোয়াট কাইন্ড অব লিগ্যাল অ্যাকশন আই শুড টেক এগেইন্সট দিস কাইন্ড অব প্রপাগান্ড অ্যান্ড আদার থিংস৷’

নির্বাচন প্রসঙ্গ

বাংলাদেশের সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন করা হয় তাকে৷ জবাবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী কী দায়িত্ব পালন করবে তার পরিষ্কার নির্দেশনা ছিল৷ ‘চাইলেই সেনাবাহিনী যা করার এখতিয়ার নাই,’ বলেন তিনি৷

নির্বাচন কেমন হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ভালো নির্বাচন হয়েছে৷

সূত্র- ডয়েচে ভেলে

কেএফ/টিআই

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |