ঢাকাTuesday, 03 June 2025, 20 Jyoishţho 1432

নর্থ সাউথের ৪ ট্রাস্টিকে দুপুরের আগেই নেওয়া হবে আদালতে

আরটিভি নিউজ

সোমবার, ২৩ মে ২০২২ , ১০:২৮ এএম


loading/img
আদালতে নর্থ সাউথের ৪ ট্রাস্টি

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ট্রাস্টির জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ হওয়ার পর রোববার (২২ মে) রাতেই তাদেরকে হেফাজতে নিয়ে যায় শাহবাগ থানা পুলিশ। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আজ সোমবার (২৩ মে) দুপুরের আগেই তাদেরকে বিচারিক আদালতে হাজির করা হবে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

ওই চার ট্রাস্টি হলেন- রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ। তাদের আগাম জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে গতকাল রোববার এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ।  

আদালত আদেশে বলেন, আবেদনকারী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় আবেদনকারী অভিযুক্তরা আগাম জামিন পেতে পারেন না। তাছাড়া আগাম জামিন পাওয়ার মতো যৌক্তিক, গ্রহণযোগ্য কারণ তারা আদালতকে দেখাতে পারেননি। যে কারণে আগাম জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হলো। শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হলো, হেফাজতে পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন আসামিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করা হয়। 

রোববার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে এ আদেশ হয়। এ আদেশের পরপরই সুপ্রিম কোর্টের এন এক্স ভবনের তৃতীয় তলার আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে কক্ষের পাশের সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত চতুর্থ তলায় উঠে যান ট্রাস্টি বেনজির আহমেদ। তার সঙ্গে সঙ্গে দুই-তিন জনকেও উঠতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরই আবার নেমে আসেন তৃতীয় তলায়। কিন্তু আদালত কক্ষে না ঢুকে দ্রুত হেঁটে ভবনের মূল সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যান। তখন তার পেছন পেছন সংবাদকর্মীরাও ছুটতে থাকেন। ততক্ষণে বিষয়টি একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের নজরে আসে। পরে আদালতের কর্মকর্তারা তাকে আদালত কক্ষে নিয়ে আসেন।  

পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাব না দিলেও বেনজির আহমেদ ছিলেন হতবিহ্বল। আদালত কক্ষে বাকি ৩ ট্রাস্টিকেও বিমর্ষ দেখায়। এরপর পুলিশ এবং আদালতের কর্মকর্তাদের পাহারায় আদালত কক্ষেই তাদের বসিয়ে রাখা হয়। এভাবে রাত প্রায় সোয়া ১১টা পর্যন্ত সে কক্ষেই ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি মামলার আসামি এই ৪ ট্রাস্টি।  

বিজ্ঞাপন

এদিকে আদালত থেকে বের করে পুলিশ হেফাজতে নিতে সন্ধ্যার আগেই পুলিশ প্রিজন ভ্যান নিয়ে আসলেও আদালতের লিখিত আদেশের অপেক্ষায় থাকতে হয়। এভাবে প্রায় ৮ থেকে ৯ ঘণ্টার অপেক্ষার আসামিদের আদালত কক্ষ থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।  

বিজ্ঞাপন

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে হাইকোর্টের লিখিত আদেশ বের হলে ১১টার ৫ মিনিটে আসামিদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এই সময়ের মধ্যে আসামিদের আদালত কক্ষে পুলিশ প্রহরায় রাখা হয়। ’

আদালতে আসামি রেহানা রহমান ও এম এ কাশেমের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন, আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, মোহাম্মদ শাহজাহানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল। আর বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ। তাদের সহযোগিতা করেন আইনজীবী মিজান সাঈদ।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন মো. খুরশীদ আলম খান।

মামলার বৃত্তান্তে জানা যায়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গত ৫ মে মামলা করেন দুদকের উপপরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী।

আসামিরা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান এবং আশালয় হাউজিং ও ডেভেলপারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।

তাদের মধ্যে রেহানা রহমান, এম এ কাশেম, মোহাম্মদ শাহজাহান ও বেনজীর আহমেদ হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন, যা গত ১৮ মে শুনানির জন্য ওঠে। ওইদিন উভয় পক্ষের শুনানির পর পক্ষ-বিপক্ষকে তাদের বক্তব্যের সারসংক্ষেপ লিখিত আকারে জমা দিতে বলে পরদিন অর্থাৎ ১৯ মে পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রাখেন আদালত। পরে ওইদিন শুনানির জন্য উঠলে জামিন আবেদনকারীদের আইনজীবী মিজান সাঈদ শুনানির লিখিত সারসংক্ষেপ জমা দিতে প্রস্তুতির জন্য সময় চাইলে আদালত গতকাল পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। এদিন সব পক্ষের শুনানির পর আদালত আসামিদের আগাম জামিনের আবেদন সরাসরি খারিজ করে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন/সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিক্রেতার নিকট থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন এবং পরবর্তীতে নিজেরা উক্ত এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

‘অবৈধ ও অপরাধলব্ধ আয়ের অবস্থান গোপনের জন্য উক্ত অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তর মাধ্যমে অর্থ পাচারের অপরাধও করেন।’

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/১৬১/১৬৫ক ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |