ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এতে যেমনিভাবে পুরুষের জন্য বিধান নাযিল হয়েছে। ঠিক তেমনি ভাবে নারীদের জন্যও। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার মাধ্যমে ঈদুল আজহার প্রথম দিন জিলহজ মাসের ১০ম দিনে পড়ে। অর্থাৎ ২৯ তারিখ ঈদুল আজহা পালিত হবে। এদিন মুমিন মুসলমান পুরুষরা দলে দলে ঈদগাহে একত্রিত হবেন। ঈদের নামাজ আদায় করে, পরস্পর কুশল বিনিময় করবেন। কিন্তু নারীরা কি ঈদগাহে যেতে পারবে বা ঈদের নামাজ আদায় করতে পারবে? নারীদের ঈদের নামাজ আদায়ের হুকুম বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
হিজরী দ্বিতীয় বর্ষে যখন ঈদের নামাজ পড়ার বিধান নাজিল হয়, তখন মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য প্রকাশ করার জন্য রাসুল (স.) ঈদগাহে মহিলাদেরও উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। হযরত উম্মে আতিয়্যাহ (রা.) বলেন, ‘ঈদের দিন আমাদেরকে বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হতো, আমরা কুমারী মেয়েদের, এমনকি ঋতুবতী মহিলাদেরও ঘর থেকে বের করতাম। অতঃপর পুরুষদের পিছেনে থেকে তাদের তাকবিরের সাথে সাথে তাকবির পড়তাম এবং তাদের দোয়ার সাথে সাথে আমরাও ঐ দিনের বরকত ও পবিত্রতা লাভের দোয়া করতাম। (বুখারী, ৯৭১)।
ঈদের জামাআতে নারীদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে প্রিয়নবি (স.) অনুমোদন দেননি বরং তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তা ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক করা হয়নি, কিন্তু তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু সমাজের ঈদগাহগুলোতে নারীদের জামাআতে অংশগ্রহণের কোনো ব্যবস্থাই করা হয় না। যে কারণে নারীরা ঈদগাহে যেতে বা ঈদের জামাআতে অংশ নিতে পারে না। যেখানে ব্যবস্থাপনা নেই সেখানে নারীদের ঈদের জামাআতে অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগও নেই। ঈদের জামাআতে অংশগ্রহণ করতে হলে অবশ্যই পর্দার ব্যবস্থা থাকতে হবে। যদি পর্দার ব্যবস্থা না থাকে তবে নারীদের ঈদের নামাজে অংশগ্রহণে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি।
রাসুলের (স.) যুগে মহিলাদের যথারীতি মসজিদে এসে জামাতের মাধ্যমে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা ছিল। তখন প্রথমে পুরুষ এরপর বাচ্চা ছেলেরা ও এরপর মহিলারা নামাজ পড়তে দাঁড়াতেন। পরবর্তীতে পর্দার হুকুম নাজিল হয় এবং মহিলাদের জামাতে আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর দাসিদের মসজিদে আসতে বাধা দিওনা, তবে তাদের জন্য নিজ ঘর-বাড়িই উত্তম স্থান।’ (আবু দাউদ, ৫৬৭)।
মহিলাদের আগমনে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, তা প্রতিরোধ করার জন্য রাসুলের (স.) নির্দেশ জারি হয় যে, কোনো মহিলা মসজিদে আসতে চাইলে সে যেন সুগন্ধির নিকটেও না যায়। অপর এক নিদের্শে বলা হয়, যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করেছে সে যেন আমাদের সাথে এশার নামাজ না পড়ে। (মুসলিম, ৪৪৩ )।
হযরত উমর (রা.) এর খিলাফতকালে পর্দার গুরুত্ব ও মহিলাদের ঘরে নামাজ পড়ার উৎসাহ ও ফজিলতপূর্ণ হাদীস শরীফের দিকে লক্ষ রেখে মহিলাদের মসজিদে এসে জামাতে নামাজ পড়তে নিষেধ করে দেন। তখন তাতে কোন সাহাবীই আপত্তি করেননি। এতে প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম (রা.) এই নিষেধাজ্ঞায় সম্পূর্ণ একমত ছিলেন। মহিলারা হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) এর নিকট গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন, তখন হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘যদি রাসুল (স.) তোমাদের এ অবস্থায় পেতেন, তবে অবশ্যই তিনিও তোমাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করতেন’ (বুখারী, ৮৬৯)।
ইমামে আবু হানীফাকে (র.) মহিলাদের মসজিদে যাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যুবতী মহিলাগণ কোনো নামাজেই যে কোনো সময়েই হোক না কেন বের হতে পারবে না। (অর্থাৎ মসজিদে জামাতে উপস্থিত হতে পারবে না) আর বৃদ্ধা মহিলাগণ ফজর ও ইশার নামাজ ব্যতীত কোনো নামাজেই উপস্থিত হতে পারবে না।
আমাদের দেশের ঈদগাহগুলোতে নারীদের ঈদের নামাজ আদায়ের আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। সেক্ষেত্রে ফেতনা ও বেপর্দার আশংকাই বেশি। আর এ কারণে নারীদের ঈদের নামাজে অংশগ্রহণ না করাই উত্তম। নারীদের যদি ঈদের জামাআতে অংশগ্রহণের জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়; সেক্ষেত্রে নারীরাও ঈদের জামাআতে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
মূলত, ইসলামের প্রথম যুগে নামাজসহ অনুষ্ঠানাদিতে মহিলাদের উপস্থিত হওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল অমুসলিদের সম্মুখে মুসলমানদের জনসংখ্যা ও জনশক্তি বৃদ্ধি করা এবং তালিম গ্রহণ করা। রাসুলের (স.) কাছে নিত্যনতুন আদেশ নিষেধ নাজিল হতো, তা যেন পুরুষ-মহিলা সকলে সমভাবে জানতে পারে, সে কারণে তাদেরও উপস্থিত হওয়ার অনুমতি ছিল।
লেখক : মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল
শিক্ষক, কলামিস্ট
প্রভাষক, চাটখিল কামিল মাদরাসা।