বাবা মানেই এক আকাশ ভালোবাসার নাম, আবেগের নাম। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সন্তানরা বাবাকে বিভিন্ন শব্দে ডাকেন। এভাবে দেশ ভেদে বাবা ডাক বদলে যায়। কিন্তু, কখনো বদলায় না বাবা ও সন্তানের সম্পর্ক কিংবা রক্তের টান। আমরা যখন বিপদে পড়ি, সবার আগে হয়তো বাবার কথা মনে পড়ে। তখন এটা ভেবে শান্তি পাই যে, 'বাবাতো আছেন।' এই যে ভরসার জায়গা, এটাই হলো বাবা ও সন্তানের মধ্যকার অদৃশ্য টান। আর তখন বাবারা সন্তানের পাশে দাঁড়ান। মাথায় হাত রেখে বলেন, 'ভয়ের কিছু নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।' বাবাদের এটুকু বলাতেই সন্তানরা যেন বিশ্ব জয়ের শক্তি পেয়ে যায়। এটাই হলো বাবাদের শক্তি। তাই বাবারা হলেন সন্তানের সত্যিকারের সুপার হিরো।
জীবনের প্রথম ‘সুপার হিরো’ হিসেবে বেশিরভাগ মানুষই নিজের বাবার কথা উল্লেখ করেন। বাবা হলেন সেই বটবৃক্ষ যার অক্সিজেনে আপনি নিশ্চিন্তে বেঁচে থাকতে পারেন।যিনি সকল রোদ, বৃষ্টি কিংবা ঝড়ে সন্তানকে আগলে রাখে পরম মমতায়।
বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য আলাদা কোনও দিবসের প্রয়োজন হয় না। তবে যে মানুষগুলো জীবনের সবকিছু দিয়ে সন্তানদের আগলে রাখে, সে মানুষটাকে স্পেশাল অনুভব করানোর জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য একটা বিশেষ দিন হলে তা মন্দ হয় না।
আজ রোববার, ১৬ জুন ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্ববাসী বাবা দিবস হিসেবে পালন করে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে বাবা দিবস পালনের প্রচলন হয়। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই যার শুরু। মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে উদ্যাপন করা হয় বাবা দিবস। নানা আয়োজনে সন্তান উদ্যাপন করে বাবার অবদান। দিনটিতে বাবাদের নানাভাবে শুভেচ্ছা জানানো বা স্মরণ করা হয়।
বাবা দিবস সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম চালু হয় এবং এর শুরু নিয়ে বেশ কয়েকটি ঘটনা প্রচলিত আছে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ঘটনাটি হলো, ওয়াশিংটনের সনোরা স্মার্ট ডড নামের এক নারী এই দিন উদ্যাপন শুরু করেন। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তার মা মারা গেলে বাবা তাকে এবং আরও পাঁচ ভাইবোনকে বড় করেন। ১৯০৯ সালে সনোরা গির্জার একটি বক্তব্যে মা দিবসের কথা জানতে পারেন। তখন তার মনে হলো, বাবার জন্যও এ রকম একটি দিবস থাকা উচিত।
তখন স্থানীয় বেশ কয়েকজন ধর্মযাজক সনোরার এই ভাবনাকে সমর্থন করেন। ধারণা করা হয়, ১৯১০ সালের ১৯ জুন প্রথমবারের মতো বাবা দিবসটি উদ্যাপন করা হয়, যদিও তা আনুষ্ঠানিক ছিল না। ১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি. জনসন সিদ্ধান্ত নেন, প্রতিবছর জুনের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস হিসাবে উদ্যাপন করা হবে। এর ছয় বছর পর ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এটিকে আইনে পরিণত করে দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন।
সন্তানেরা প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবাকে বিশেষভাবে সম্মান জানাতে বাবা দিবস উদ্যাপন করে। তবে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে মার্চের ১৯ তারিখ বাবাদের বিশেষভাবে সম্মান জানিয়ে থাকে। আর অস্ট্রেলিয়া ও ফিজিতে পালন করা হয় সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম রোববার।
বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের এই বিশেষ দিবসে সন্তানরা বাবাদের কোনও না কোনও উপহার দিতে পছন্দ করে। বিশ্বের অনেক দেশে ঘটা করে বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। সমাজ, সংস্কৃতি, দেশভেদে উদযাপনে কিছুটা বৈচিত্র্য দেখা যায়। কোনও দেশে হয়তো সন্তান বাবাকে ফুলের তোড়া ও কার্ড উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়, আবার কোনও দেশে নেকটাই, টুপি, মোজা ও বিভিন্ন স্পোর্টস সামগ্রী উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়।
তবে দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি কিংবা উপহার ভিন্ন হলেও বাবার প্রতি সন্তানদের ভালোবাসায় নেই কোনও ভিন্নতা। যেখানে প্রকাশভঙ্গি নয়, ভালোবাসা প্রকাশই মুখ্য বাবাকে ভালোবাসতে কোনো দিন লাগে না। সন্তানরা বাবাকে প্রতিদিনই ভালোবাসেন। বাবা ও সন্তানের এই ভালোবাসা চিরন্তন। বাবা দিবসে পৃথিবীর সকল বাবাকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।