ঢাকাবৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

পানির ওপর সোলার সিস্টেম

ডয়চে ভেলে

বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫ , ১১:৫৩ পিএম


loading/img
ছবি : সংগৃহীত

ভাসমান সোলার সিস্টেমের বিশাল সম্ভাবনা আছে। পানিতে এমন সিস্টেম স্থাপনের অনুমোদন দিতে জার্মানিতে একটি আইন করা হয়েছে। সোলার সিস্টেম পানির বাস্তুতন্ত্রের ওপর কী প্রভাব ফেলে তা জানার চেষ্টা চলছে।

বিজ্ঞাপন

ভূমিতে স্থাপিত সোলার সিস্টেমের তুলনায় এই সিস্টেম স্থাপন বেশি ব্যয়বহুল, কিন্তু পানির শীতল প্রভাবের কারণে এগুলো বেশি কার্যকর। জার্মানিতে ২০১৯ সালে সাবেক এক খনি এলাকায় প্রথম ভাসমান সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছিল। জার্মানির পূর্বাঞ্চলের একটি উন্মুক্ত খনি এলাকায় সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি নির্মিত হচ্ছে। কয়েক দশক ধরে সেখানে লিগনাইট খনন করা হয়েছে। এর আকার ২০টি ফুটবল মাঠের সমান। প্রায় আট হাজার পরিবার সেখান থেকে বিদ্যুৎ পায়।

জার্মানিতে হোলমানস নুড়িপাথর কারখানা এক্ষেত্রে অন্যতম পথিকৃৎ। সেখানকার ভাসমান সোলার সিস্টেমের আকার: ৩.৩ হেক্টর - প্রায় পাঁচটি ফুটবল মাঠের সমান। সেখান থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ দিয়ে নুড়িপাথরের কাজ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

হোলমানস গ্রাভেল ওয়ার্কস এর ইয়ুর্গেন ফ্র্যোলিশ জানান, এই ধরণের নুড়িপাথরের কারখানায় সূক্ষ্ম নুড়িপাথর থেকে বালি ও মোটা নুড়িপাথর আলাদা করতে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলো বিদ্যুতে চলে। এই প্ল্যান্টটি প্রায় ৪০ শতাংশ স্বয়ংসম্পূর্ণ, যার মানে, আমরা প্রায় ৪০ শতাংশ স্বাধীন। এইরকম সময়ে, যখন রোদ কম থাকে, তখন আমাদের গ্রিড থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ কিনতে হয়। সোলার সিস্টেম সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করে, যেটা ঋতু এবং দিনের নির্দিষ্ট সময় ভেদে পরিবর্তিত হয়। কারখানাটি যেহেতু সপ্তাহান্তে চলে না, তাই উৎপাদিত বিদ্যুৎ আবার গ্রিডে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু গ্রিডে বিদ্যুৎ দেওয়া আমাদের জন্য আর্থিকভাবে কোনো অর্থ বহন করে না। তাই বর্তমানে আমরা, সংরক্ষণ প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করা আরও ভাল কৌশল হয় কিনা, তা বিবেচনা করছি, বলেন ফ্র্যোলিশ।

ভাসমান সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরিতে হোলমানস কোম্পানি তাদের নিজস্ব অর্থ থেকে পাঁচ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে। সরকার কোনো ভর্তুকি দেয়নি। অনুমোদন প্রক্রিয়ায় এখনও কিছু বাধা রয়ে গেছে, যা সম্পন্ন হতে প্রায় দুই বছর লাগে।

ফ্রাউনহফার ইনস্টিটিউটের কারোলিন বালটিনস বলেন, এটি এমন এক প্রক্রিয়া যেখানে অনেক কর্তৃপক্ষ নিজেই জানে না যে, কীভাবে সমস্যাটি মোকাবেলা করতে হবে। জার্মানিতে ২০২৩ সালে একটি আইন পাস করে শুধুমাত্র কৃত্রিম হ্রদে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। হ্রদের মাত্র ১৫ শতাংশ ঢাকা সম্ভব, আর তীর থেকে দূরত্ব কমপক্ষে ৪০ মিটার হতে হয়।

বিজ্ঞাপন

বালটিনস বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, নেদারল্যান্ডসে এই নিয়মগুলি নেই, যেমন, তাদের এমনও লেক আছে যার প্রায় ৭০ শতাংশ সোলার সিস্টেমে ঢাকা। তার মানে, তারা পরিস্থিতির পুরো সুবিধা নিতে চায়।

কেন্দ্রীয় পরিবেশ সংস্থার উলরিকে ভ্যুরফ্লাইন জানান, এমনও হতে পারে যে, যদি পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়, তাহলে শৈবালের বৃদ্ধি হ্রাস পাবে, কিংবা মারা যাবে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন মারা যাবে, এবং মাছ আর পর্যাপ্ত খাবার পাবে না। হয়তো তাদেরও পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকবে না, আমরা ঠিক জানি না।

হোলমানস প্ল্যান্ট নির্মাণের অন্যতম একটি শর্ত ছিল, হ্রদে কী পরিবর্তন হচ্ছে সেগুলো নথিভুক্ত করা। ফ্র্যোলিশ বলেন, এটা করার জন্য আমরা একটি বায়োলজিক্যাল প্রকৌশল সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছি। অ্যাকুয়াটিক ইকোলজির অন্তর্ভুক্ত প্রায় সবকিছুর উপরই আমাদের নজর রাখতে হবে। আমাদের ভাসমান সোলার সিস্টেমের কারণে জলের রসায়ন, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, ঝিনুক, জলজ উদ্ভিদ, তলদেশে বসবাসকারী নুড়ি শৈবাল এবং পাখির উপর কী প্রভাব পড়ছে তার তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। এবং পাঁচ বছর ধরে এর ফলাফল উপস্থাপন করতে হবে। ভাসমান সোলার সিস্টেম প্রায় ২০ বছর টিকে থাকে। বিমা আর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম। ভবিষ্যতে বায়ু বা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিকে একত্রিত করে এমন ভাসমান সোলার সিস্টেম স্থাপনেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। সমুদ্রে এই প্রযুক্তি স্থাপন করতে পারলে ভালো হবে। তবে সেক্ষেত্রে তাকে প্রচণ্ড বাতাস, ঢেউ আর লবণ পানি সহ্য করতে হবে।

আরটিভি/এএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |