ঢাকা

উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করা যার শখ

ডয়চে ভেলে

শনিবার, ০৩ মে ২০২৫ , ০৩:২৩ পিএম


loading/img
মেটিওরাইট বা উল্কাপিণ্ড হাতে সার্বিয়ার ইয়োভান চুলিয়োকোভিচ

সার্বিয়ার ইয়োভান চুলিয়োকোভিচের শখ মেটিওরাইট বা উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করা। তার সংগ্রহে প্রায় ৩০টি উল্কাপিণ্ড রয়েছে। উল্কাপিণ্ড নিয়ে জানার আগ্রহ থেকে তিনি এই বিষয়ে কিছু পড়াশোনা করেছেন। তাই তিনি এখন একটি পাথর দেখলে কিছুটা ধারণা করতে পারেন যে, সেটি হয়ত উল্কাপিণ্ড হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

চুলিয়োকোভিচ বলেন, আমি যখন বাইরে যাই, প্রকৃতির মধ্যে থাকি, তখন সবসময় নজর রাখি। আমার চোখ মাটি, পাথর এবং অন্যান্য জিনিসের উপর স্থির থাকে। আমি সেগুলো দেখে চিনতে পারি, কারণ আমি সেগুলো নিয়ে পড়াশোনা করেছি। আমার প্রথম উল্কাপিণ্ড খুঁজে পাওয়ার পর আমি সেগুলো নিয়ে পড়াশোনা শুরু করি, এবং তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। এর মানে হলো, আমার চোখ একটি উল্কাপিণ্ড সনাক্ত করতে পারে- এমনকি পাথরের মধ্যেও।

চুলিয়োকোভিচ পাঁচ বছর ধরে উল্কাপিণ্ড সংগ্রহ করছেন। তার কাছে প্রায় ত্রিশটি উল্কাপিণ্ড আছে। তিনি যত জিনিস সংগ্রহ করেন তার মধ্যে উল্কাপিণ্ডই তার প্রিয়। চুলিয়োকোভিচ বলেন, আমি প্রথম যে উল্কাপিণ্ডটি খুঁজে পেয়েছিলাম, সেটিই আমার প্রিয়। দেখতে সুন্দর। আকৃতিও সবচেয়ে সুন্দর। এটিই সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত করে রাখা আছে, কারণ, আবহাওয়ার সংস্পর্শে এলে এগুলি উজ্জ্বলতা হারাতে থাকে - ম্লান হয়ে যায়। এখানে আপনি পৃষ্ঠে অলিভাইন দেখতে পাচ্ছেন। এটি যে একটি উল্কাপিণ্ড, এটি তার অন্যতম একটি লক্ষণ। মেটিওরাইট বা উল্কাপিণ্ড হলো মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে পড়া একটি শিলা। সৌরজগতের আদি যুগের হওয়ায় বিজ্ঞানীদের কাছে এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেরু বরফের চূড়ায় এবং মরুভূমিতে এগুলো সহজেই দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং আলফা অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড্রাগান গায়ইচ বলেন, অপেশাদাররা এগুলো সহজেই শনাক্ত করতে পারেন। তিনি বলেন, মেটিওরাইট বা উল্কাপিণ্ডটি যদি লৌহঘটিত হয় তাহলে আপনি একটি চুম্বক ব্যবহার করে দেখতে পারেন যে এটি লোহা কিনা, কারণ আয়রন মেটিওরাইটের ৯৬ শতাংশ লোহা ও নিকেল দিয়ে তৈরি। এভাবে আপনি আয়রন মেটিওরাইট শনাক্ত করতে পারেন। আপনি যখন বালির মধ্য দিয়ে একটি চুম্বক টেনে আনেন, তখন চুম্বকের সাথে যা লেগে থাকে - যদিও এর মধ্যে কিছু মাটির উপাদানও থাকতে পারে - সেই ক্ষুদ্র কণাগুলি হলো মাইক্রো মেটাল উল্কাপিণ্ড। যখন পাথর - যার মধ্যে বিভিন্ন ধরণও রয়েছে - বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে যায়, তখন তাদের পৃষ্ঠের স্তর অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে বার্নিশের মতো কাঁচের পর্দায় পরিণত হয়।

লক্ষ লক্ষ বছর ধরে উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে আছড়ে পড়ছে। নাসার মতে, প্রতিদিন প্রায় ৪৮.৫ টন অর্থাৎ, ৪৪ হাজার কেজি উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে পড়ে।

অধ্যাপক গায়ইচ বলেন, প্রথমত উল্কাপিণ্ড হলো এমন এক বস্তু, যা মহাকাশের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে- ছোট আকারের একটি বস্তু। এটি যখন পৃথিবীর পৃষ্ঠে প্রবেশ করে, যেহেতু এটি উচ্চগতিতে- সেকেন্ডে কমপক্ষে ১১.২ কিমি গতিতে চলে - এই গতিতেই আপনাকে এমন কিছু ছুঁড়তে হবে যেন এটি পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণরূপে উড়ে যায়। এই গতিতে, সেকেন্ডে কমপক্ষে ১১.২ কিমি গতিতে, বস্তুটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যদি সেই বস্তুটি সম্পূর্ণরূপে পুড়ে যায় এবং যা অবশিষ্ট থাকে তা হলো সেই মাইক্রোমেটিওরাইট, যা ধুলোর মতো পড়ে, তাহলে আমরা যে আলোক ঘটনাটি দেখতে পাই তা একটি উল্কা। 
যদি বস্তুটি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে সেই পথ অতিক্রম করে টিকে থাকে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠে পড়ে - সাধারণত এর একটি বড় অংশ গলে যায় বা বাষ্পীভূত হয় - তাহলেই কেবল আমরা সেটি যে উল্কাপিণ্ড তা বলতে পারি। বৈজ্ঞানিক এবং বস্তুগত উভয় দিক থেকেই উল্কাপিণ্ড খুবই মূল্যবান হতে পারে। চুলিয়োকোভিচ তার উল্কাপিণ্ডগুলির মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন, কিন্তু তিনি তা করতে আগ্রহী নন। কারণ, এটি তার কাছে প্রিয় জিনিস সংগ্রহ করার মতো আনন্দের বিষয়।

বিজ্ঞাপন
Advertisement

আরটিভি/এএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |