ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নিতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার মুখে পড়েছেন বাংলাদেশের কিংবদন্তি দাবাড়ু রানী হামিদ। কারণ, বাংলাদেশ দলের এক দাবাড়ুকে ভারতের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ঢুকতে না দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে পুরো দল। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ৭৯ বছর বয়সী রানী হামিদ। যিনি ওই দাবাড়ুর সঙ্গে এক কক্ষে থাকার কথা ছিল।
বার্ধক্যের কারণে ৮২ বছর বয়সী এই দাবাড়ু একজন সঙ্গী নিয়ে ভ্রমণ করেন। যথারীতি দিল্লির দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নিতে ঈদের আগের দিন সফরসঙ্গী নিয়ে ভারতে রওনা দেন। কিন্তু তার সফরসঙ্গী আছিয়া সুলতানাকে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই আটকে দেওয়া হয়। পরদিন তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
রানী হামিদ বাংলাদেশের দাবা ইতিহাসে অন্যতম উজ্জ্বল নাম। বহুবার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তার মতো অভিজ্ঞ দাবাড়ুর এমন ভোগান্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ক্রীড়ামহল।
আছিয়া সুলতানা নিজেও একজন দাবাড়ু। দিল্লি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু জানা গেছে, আগের এক সফরে চিকিৎসা ভিসা নিয়ে কলকাতায় দাবা টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করায় ভারতীয় রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে। কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় রাতভর বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন সেন্টারে আটকে রেখে পরদিন দ্বিগুণ মূল্যে টিকিট কিনে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে দেশে পাঠায় ভারত।
এ ঘটনায় রানি হামিদ সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, আমি খুবই মর্মাহত। যে মেয়েটি আমার সঙ্গে এসেছিল, তাকে ঢুকতেই দেয়নি। পুরো রাত সে ইমিগ্রেশনে বসে ছিল। লাগেজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। পরদিন তাকে বাধ্য করা হয় দ্বিগুণ মূল্যে টিকিট কিনে দেশে ফিরতে।
এ বিষয়ে আছিয়া জানান, আমার মেডিক্যাল ভিসা ছিল। তখন কাশ্মীরে একটি টুর্নামেন্টে খেলেছিলাম। চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় খেলে চলে এসেছিলাম। বিষয়টি ইমিগ্রেশন কর্তাদের ব্যাখ্যা দিলেও তারা কিছু শোনেননি। ভারতের দাবা সংগঠনের লোকজনও সহযোগিতা করেছেন, জরিমানা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু কিছুই কাজে আসেনি।
আছিয়া সুলতানা দেশের দাবা অঙ্গনে নতুন হলেও আন্তর্জাতিক রেটিং রয়েছে। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে গত দু-তিন বছর ধরে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। তিনি সম্প্রতি রানি হামিদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাতেও খেলেছেন।
এদিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন রানি হামিদ। তিনি জানান, আমি কখনো একা ভ্রমণ করি না। বয়স হয়েছে। আছিয়া ছিল আমার সঙ্গে, ওকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর আমি একা পড়ে গেছি। খেলায় মনোযোগ দিতে পারছি না।
রানি হামিদের ছেলে কায়সার হামিদ বলেন, মা একা বিদেশে থাকতে পারেন না। আছিয়া তার সঙ্গে কয়েকটি টুর্নামেন্টে সফর করেছে। এখন সে না থাকায় মা অনেক বিপদে পড়েছেন। আমরা খুবই চিন্তিত।
উল্লখ্য, দিল্লি টুর্নামেন্ট শেষে রানি হামিদের মুম্বাইয়ে আরেকটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও আছিয়ার অনুপস্থিতিতে সেটি এখন অনিশ্চিত। দিল্লি গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্টের বিশেষ অতিথি ছিলেন রানী হামিদ। এই কিংবদন্তির দিল্লিতে এমন বিড়ম্বনায় পড়া এবং সঙ্গী আছিয়ার দেশে ফেরত আসার বিষয়টি ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে।
আরটিভি/এসকে/এআর