প্রিয় মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী,
যথাবিহীত সম্মান জানিয়ে সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি খোরশেদ আলম ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। আমি ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষাসহ মোট ৩টি বিসিএস পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছি; কিন্তু বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আমাকে ‘পদ স্বল্পতা’র কারণে নন-ক্যাডার হিসেবে সুপারিশ করে।
আজ পর্যন্ত নন-ক্যাডার থেকে চাকরির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হইনি। তাই ৩৫তম বিসিএসে নন-ক্যাডার থেকে চাকরির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হবো কিনা জানিনা। অনেকটা নিরুপায় হয়ে আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, গণতন্ত্রের মানস কন্যা, জননেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার দ্বারস্থ হলাম।
অসহায়, গরীব-দুঃখী এবং সম্বলহারা মানুষের দুঃখ, দুর্দশা দূর করতে আপনি যেভাবে সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, আমরা আশাবাদী, আমাদের মতো অসহায়, বেকার এবং মানসিক হতাশাগ্রস্ত নন-ক্যাডারদের বেলায়ও এমন দৃঢ় পদক্ষেপ নেবেন।
আমরা আরো আশাবাদী, আপনি সকল নন-ক্যাডারদের নিয়োগ প্রদানে প্রয়োজনীয় সুব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধিদপ্তর সমূহকে জাতির জনকের মতোই বজ্রকণ্ঠে নির্দেশ দিবেন। এ বিষয়ে মমতাময়ী মায়ের কাছে আমরা ছেলে হিসেবে মানবিক আকুতি তুলে ধরছি।
(১) বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহান সংবিধানে উল্লেখ আছে, রাষ্ট্রের প্রতিটি নারী-পরুষ চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে সমান সুবিধা পাবে। আমরাও মহান সংবিধানে রক্ষিত সেই সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার দাবিদার।
(২) বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন প্রতিটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল দেয়ার সময় দেখা যায় ‘পদ স্বল্পতা বা শূন্য পদের সংখ্যা কম’ থাকায় সকলকে ক্যাডার হিসাবে সুপারিশপ্রাপ্ত না করে নন-ক্যাডারে সুপারিশ করে।
কিন্তু শূন্য পদের সংখ্যা কম বা পদের স্বল্পতা হলে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কিভাবে পরবর্তী বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন করে? পূর্বের বিসিএসে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের পরবর্তীতে সৃষ্ট শূন্য পদের জন্য ক্যাডার হিসাবে সুপারিশ না করে কেন আরেকটি বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে?
(৩) যারা আগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো তারা কিভাবে নিশ্চিত হবে যে, পরবর্তী বিসিএসে তারা আবার ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি, ৯০০ নম্বরের লিখিত এবং ২০০ নম্বরের ভাইবায় উত্তীর্ণ হবে? এছাড়া এতো নিরলস পরিশ্রম আর নির্ঘুম অধ্যবসায়ের পরও যদি কোনো প্রার্থী ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত না হয়, তাহলে তার মানসিক আর সামাজিক অবস্থা কেমন হয় তা কেবল নন-ক্যাডার হিসাবে সুপারিশপ্রাপ্তরাই অনুধাবন করে। ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয় যখন ক্যাডার থেকেও একটি চাকরি যখন ভাগ্যে না জোটে।
(৪) বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বর্তমানে প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তরসমূহে শুধু ‘প্রথম শ্রেণি’ পদ মর্যাদার ৩৯,০০০ (ঊনচল্লিশ হাজার) এবং ‘দ্বিতীয় শ্রেণি’ পদ মর্যাদার ৪০,০০০(চল্লিশ হাজার) হাজার পদ শূন্য আছে। আমরা কি শূন্য থাকা ৩৯,০০০ (ঊনচল্লিশ হাজার) প্রথম শ্রেণি পদ মর্যাদার মধ্যে একটি চাকরিও পাওয়ার যোগ্য নই?
পত্রিকা মারফত আমরা আরো জানতে পারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তরসমূহ বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন প্রেরিত পত্রের সাড়া দিচ্ছে না! অথচ বর্তমান সরকার নন-ক্যাডার থেকে প্রথম শ্রেণি নিয়োগের উদ্দেশ্যে ‘নন-ক্যাডার নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা ২০১০’ এবং পরে সেই বিধিমালা সংশোধন করে প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে নিয়োগের জন্য ‘নন-ক্যাডার নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা ২০১৪’ প্রণয়ন করে। বিসিএসে উত্তীর্ণ সবাই কেন চাকরি পাচ্ছে না?
(৫) ৩৫তম বিসিএস ছাড়াও সকল বিসিএসে উত্তীর্ণদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রদান করলে দেশের আপামর সাধারণ জনগণের জন্য সরকারের দৈনন্দিন সেবা পাওয়া সহজ হবে। এতে আমাদের অনেকেরই মনের লালিত স্বপ্ন সত্যি হবে, অনেকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। একইসঙ্গে উপকৃত হবে চাকরি পাওয়া ব্যক্তি, তার পরিবার, সরকার, সর্বোপরি রাষ্ট্র। সেইসঙ্গে উত্তরোত্তর বাড়বে বর্তমান সরকারের সুনাম-আস্থা এবং সাধারণ মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসা! আমরা আপনার ভিশন ২০২১ এবং ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবো ইনশাল্লাহ।
অতএব, উপরের বিষয়গুলো সদয় সুবিবেচনায় নিয়ে আপনার সুপ্রজ্ঞার একটি মানবিক পদক্ষেপ আর সংশ্লিষ্ট সকলকে যুগোপযুগী সাবলীল নির্দেশনাই পারে আমাদের মনোবাসনা পূর্ণ করতে ও জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে। আমারা পেতে পারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সুবর্ণ সুযোগ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ও সাহসী সৈনিক হিসেবে দেশমাতৃকার মহান দায়িত্ব পালন করার সুযোগ দিলে আমরা আপনার নিকট চিরকৃতজ্ঞ থাকবো।
-৩৫তম বিসিএসে নন-ক্যাডারদের পক্ষে খোরশেদ আলম
এম/ এসজেড