বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে দেশের লাখো তরুণ চাকরির জন্য তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। নিঃসন্দেহে তাদের বিসিএস প্রথম পছন্দ। তাদের থাকে হাজারো সোনালি স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে হয় এই পরীক্ষায়। আড়াই লাখের বেশি পরীক্ষার্থীদের ৩টি স্তরে যাচাই-বাছাই করে যোগ্য আর মেধাবীদের দেশকে সেবার উদ্দেশ্যে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করে পিএসসি। পিএসসিকে এতো বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থীদের চাপ সামলাতে প্রায়শই হিমশিম খেতে হয়।
প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবীরাই লিখিত পরীক্ষার টিকিট পান। আগ্নেয়গিরিসম লিখিত পরীক্ষার বৈতরণী পার হলে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুবর্ণ সুযোগ মিলে। শতকরা ৫০ ভাগ নম্বর পাওয়া মেধাবীরাই মৌখিক পরীক্ষার জন্য পিএসসিতে যাবার সৌভাগ্য রাখেন। মৌখিক পরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতা শেষে পিএসসি মেধাবীদের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে। চূড়ান্ত ফলাফলের সময় পিএসসি ক্যাডার আর নন-ক্যাডার ভিত্তিক তালিকা প্রকাশ করে। যারা একটু বেশি নম্বর পেয়ে ক্যাডার তালিকায় জায়গা পান, তারা গেজেটেড অফিসার হিসাবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। আর যারা নন-ক্যাডারের তালিকায় থাকেন তারাই যতো বিড়ম্বনা, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হন। এই বৈষম্যের শুরু পিএসসি’র ক্যাডার আর নন-ক্যাডার বিভাজনের ফলাফল ঘোষণা থেকে।
বিসিএস’র ফলাফল বৈষম্য অনুক্ষণে নন-ক্যাডারদের বাড়ায় হতাশা। নিমেষেই নন-ক্যাডারদের স্বপ্নগুলোর অপমৃত্যু হয়। একদিকে প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লাখ লাখ পদ খালি থাকার জন্য প্রশাসনিক স্থবিরতার সৃষ্টি হয় অন্যদিকে বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও চাকরির জন্য মেধাবী নন-ক্যাডারদের চরম হতাশাই বিসিএসে বৈষম্যের বিষয়টি দৃশ্যত স্পষ্ট হয়ে উঠে। কেনো ক্যাডার, নন-ক্যাডার বিভাজন? কেনোইবা এই বৈষম্য!
ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদের নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করলে বিসিএসে উত্তীর্ণ নন-ক্যাডাররা হতাশার সাগরে হাবুডুবু খেতেন না। এমনিভাবে প্রতিটি বিসিএসে মেধাবীরা উত্তীর্ণ হলেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি চাকরির স্বাদ। পিএসসি মেধাবীদের বাছাই করলেও চাকরির জন্য সুপারিশ না করেই নির্বিকারে আয়োজন করছে একটি পর একটি বিসিএস পরীক্ষা! অবশ্য পিএসসির সুপারিশ ছাড়া করার কিছুই থাকেনা।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি নন-ক্যাডার নিয়োগের জন্য বরাবর আন্তরিকতা দেখালেও মন্ত্রণালয়গুলোর অনীহা ও জটিলতার কারণে পিএসসির আন্তরিকতায় ভাটা পড়ে। অথচ প্রশাসন এই বিষয়টিকে আমলে নিলেও কর্ণপাত করছে না। সরকারের বিভিন্ন মহল নন-ক্যাডারদের নিয়োগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলেও তারা নন-ক্যাডার বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত নয়!
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করে বিসিএসে উত্তীর্ণ হলেই ক্যাডার হিসাবে নিয়োগ পাওয়া যায়। কিন্তু বিরাজমান বাস্তবতা একেবারেই আলাদা। বিপিএসসির ইতিহাসে ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সর্বোচ্চ সংখ্যক নন-ক্যাডার প্রার্থীকে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। ৩৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ৩ হাজার ৩৫৯ জন মেধাবী নন-ক্যাডাররা একটি চাকরির জন্য আসুমদ্রহিমাচল পর্যন্ত হেঁটেছেন। উদয়-অস্ত কড়া নেড়েছেন সবার দ্বারে দ্বারে।
অবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নন-ক্যাডারদের অন্তরের আকুল আকুতি ও দীর্ঘদিনের প্রত্যাশাকে আমলে নিয়েছেন। তাদের নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। বিসিএসে উত্তীর্ণ সব মেধাবীকে শূন্য পদ সৃষ্টি হওয়া সাপেক্ষে ক্যাডার হিসাবে নিয়োগ দেয়ার পরে আরেকটি বিসিএসের আয়োজন করার উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন।
আমাদের এ প্রত্যাশা পিএসসিসহ সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে আমলে নেবেন। দেশের স্বার্থে, সময়ের প্রয়োজনে আর তারুণ্যের শক্তি-সম্পদকে কার্যকরের বিষয়টি ভাববার তাগিদ এসেছে এখনই। ফলে একই প্রার্থীকে বারবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না, হতাশায় অমানিশায় আচ্ছন্ন হতে হবে না। আর এতে করে কোনো মেধাবীই বৈষম্যের শিকার হবে না। কারণ বিসিএসের মতো তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি না পাওয়া সত্যিকার অর্থেই দুঃখজনক, কষ্টদায়ক, বেদনাদায়ক আর যন্ত্রণাদায়ক।
আমরা চাই আর যেনো কোনো মেধাবীকে বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও বৈষম্যের শিকার হতে না হয়। দুঃখের দহনে যেনো পুড়তে না হয়। বিসিএসে উত্তীর্ণ সব মেধাবীর একটি সম্মানজনক চাকরির সুব্যবস্থা হবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
খোরশেদ আলম
৩৫তম বিসিএস’র নন-ক্যাডার