ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ, হুমকিতে পরিবেশ

শিপলু জামান

রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ০৯:১৯ এএম


ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ, হুমকিতে পরিবেশ
ছবি: আরটিভি

ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করার কথা কয়লা। কিন্তু লোক দেখানো কিছু কয়লা ভাটার পাশে রেখে গোপনে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। অনেকে আবার খোলামেলাভাবেই তাদের ভাটায় ইট পোড়াতে কাঠ ব্যবহার করছেন। এ দৃশ্য চোখে পড়বে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বেশকিছু ইট ভাটাতে। কালীগঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির দেওয়া তথ্য মতে, উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা মোট ১৬টি। এদিকে সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে এসব কাঠ সংগ্রহ করায় হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। 

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বলাকান্দোয় অবস্থিত কাজী ব্রিকসে গিয়ে দেখা যায়, প্রকাশ্যে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। ভাটায় কাঠ পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট কালো ধোয়া আশপাশের পরিবেশকে করছে দূষিত। ভাটাটিতে ইট পোড়ানো চুল্লীর চারপাশ ফেলে রাখা হয়েছে বিপুল পরিমাণ কাঠ। 

কাজী ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী কাজী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কয়লা দিয়েই ইট পোড়ায়। খড়ি দিয়ে শুরু করেছি মাত্র। এ রাউন্ড শেষে কয়লা দিয়ে পোড়াবো। পরিবেশ অধিদপ্তরে ছাড়পত্র ব্যতীত সব কাগজপত্রই আমার ইট ভাটায় আছে। আপনার ইটভাটা বৈধ কিনা জানতে চাইলে, কালীগঞ্জের ইটভাটা কোনটাই বৈধ নয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

বিজ্ঞাপন

ইটভাটা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে এক টন কয়লার দাম ১৭ থেকে ১৯ হাজার টাকা। অপরদিকে, এক মণ খড়ির দাম মাত্র ১৬০ টাকা। একটি ইটের ভাটায় ১ লাখ পরিমাণ ইট পোড়াতে ১৬ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ কয়লা দিয়ে এক লাখ ইট পোড়াতে খরচ দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। 

অপরদিকে, একই পরিমাণ ইট কাঠ দিয়ে পোড়াতে ১৬০০ মণ কাঠের প্রয়োজন হয়। এতে খরচ হয় ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। অর্থাৎ কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ালে ১ লাখ ইটের জ্বালানি খরচ সাশ্রয় হয় মাত্র ১৬ হাজার টাকা। আর প্রথম শ্রেণির ১ লাখ ইটের বিক্রয় মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা। কিন্তু ইট পোড়াতে সামান্য এই অর্থ সাশ্রয় করতে যেয়ে অসামান্য ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। আবার প্রতিটি ভাটায় ইট পোড়াতে ২৪ ঘণ্টায় সাত থেকে আট টন কাঠের প্রয়োজন। এসব কাঠের অধিকাংশই আসছে স্থানীয়  ব্যক্তিমালিকানাধীন বন থেকে। অথচ জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো নিষিদ্ধ। এরপরও অবাধে চলছে এ কাজ। আর এসব দেখভাল করার দায়িত্ব যাদের তারা যেন সবকিছু দেখেও কিছুই দেখছেন না। যদিও ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে, ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার বেআইনি। তবুও অবৈধ ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে নেওয়া হয় না কোন ব্যবস্থা। ইটভাটা মালিকগণ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই প্রকাশ্যে এসব চালিয়ে যাচ্ছেন। 

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন

এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে বন। আবার ইটের ভাটা চালানোর কারণেই কোথাও মাঠের পর মাঠ থেকে কেটে সাফ করে দেওয়া হচ্ছে খেজুর গাছ। শীতকালে তাই গ্রামবাংলায় আর আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না খেজুরের রস, পাটালি বা খেজুর গুড়। কোথাও আবার সরু রাস্তায় মাটিবোঝাই ট্রাক বা ট্রাক্টর ঢুকে ভাঙছে রাস্তাঘাট। গাড়ি থেকে রাস্তায় পড়ে যাওয়া মাটি থেকে কাদা হয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা।

0

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইটভাটা মালিক জানান, ইটের ভাটার ব্যবসা এখন তেমন একটা লাভজনক নয়। এ ব্যবসায় ঝামেলা বেশি। ভাটা মালিকদের ওপর বহুমুখী চাপ রয়েছে। তার ওপর আবার মাটি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের মত। জাতীয় বিভিন্ন দিবসে সরকারি অফিসে আমাদেরকে বাধ্যতামূলক খরচ দিতে হয়। এ বছর স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও ইটভাটা মালিকদের খোঁজখবর নিচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা বেশ বিপাকে। 

কালীগঞ্জ ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন চুন্নু বলেন, বন ধ্বংস করে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো সমিতি সমর্থন করে না। এরই মধ্যে ভাটার মালিকদের ডেকে কাঠ দিয়ে ইট পোড়াতে নিষেধ করা হয়েছে। কালীগঞ্জে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা কতটি জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

ঝিনাইদহ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুনতাসির রহমানের সঙ্গে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার এবং অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে কি না এ বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। 

তিনি বলেন, আমি একটি ইটভাটায় অভিযানে রয়েছি। বিকেলে ফোন দেন। বিকেলে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালানো হবে। পরিবেশের ক্ষতি করে কোনকিছু করার সুযোগ নেই। সরকারি বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে খরচ নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয় বলেও তিনি যোগ করেন।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission