‘আবেগে মানুষ হত্যাও করা যায়, জানতাম না’
দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে হত্যার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে দেশের সাধারণ মানুষ, হচ্ছে প্রতিবাদ। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম (এফএইচ) হলে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, তোফাজ্জলের মৃত্যুর পর সম্প্রতি অপরাধীর একটি ভিডিও নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। যেখানে অভিযুক্ত অপরাধী জানান, মোবাইল চুরি হওয়ার আবেগে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে। এ ঘটনায় অপরাধীর নির্লজ্জ বক্তব্য সম্প্রতি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হয় যা শোনার পর ফেসবুকে ক্ষোভ ঝাড়েন চিত্রনাট্যকার মানস।
তোফাজ্জল হোসেনের মৃত্যু প্রসঙ্গে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে চিত্রনাট্যকার মানস তার ফেসবুকে দুটি ছবি পোস্ট করেন। এ ছবির ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘বউ দৌড়’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনেতা শামীম জামান ভাইয়ের মুখে একটা ডায়ালগ দিয়েছিলাম।
মানস পাল আরও লেখেন, নাটকে তার মুদ্রাদোষ (ডায়ালগ) ছিল, ‘সবই আবেগের ব্যাপার স্যাপার! মনের মধ্য আবেগ একবার ডাউনলোড হইয়া গেলে তো কিছু করার নাই।’
এরপরই ক্ষোভ প্রকাশ করে মানস পাল লেখেন, বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল ডায়ালগটা। এত দিন আবেগে অনেক কিছুই হয় জানতাম কিন্তু মানুষ হত্যাও করা যায়, জানতাম না। ছিঃ!
প্রসঙ্গত, বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ছেলে তোফাজ্জল সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করেন। স্বাভাবিক জীবনে তার ছন্দ পতন ঘটে বাবার মৃত্যু ঘটনায়। আট বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তার বাবা। এরপর স্থানীয় এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হওয়াকে কেন্দ্র করে তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। চার বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার মা। মা হারানো শোকে মানসিক সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায় তোফাজ্জলের।
এরপর তোফাজ্জলকে সুস্থ করতে চিকিৎসার উদ্যোগ নেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক পদে কর্মরত তার একমাত্র বড় ভাই। এরই মধ্যে হঠাৎ করে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার বড় ভাইও।
এক সময় পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তোফাজ্জল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বাবা, মা, ভাই, বোনহীন হয়ে প্রায়ই তাকে খাবারের খোঁজে দেখা যেত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে।
আরটিভি / এএ
মন্তব্য করুন