মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান দাবি করা দীপ্তিকে নিয়ে যা জানা গেল
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশ যখন উত্তাল, তখন দেশের একটি টেলিভিশন টকশোতে কথা বলছিলেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও বিএনপি নেতা গোলাম মাওলা রনি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন উপস্থাপিকা দীপ্তি চৌধুরী। প্রায় ৪৯ মিনিটের ওই টকশোতে শুরু থেকেই বেশ বুদ্ধিদীপ্ত আলোচনা ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। এরপর দেশজুড়ে সামাজিকমাধ্যমে প্রশংসায় ভেসেছিলে তিনি।
হুট করেই রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যান দীপ্তি। শহরের দেয়ালে আঁকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গ্রাফিতিতেও স্থান পায় তার মুখ। তবে আলোচনা ও প্রশংসা মন খুলে উপভোগ করতে পারছেন না দীপ্তি। সহ্য করতে হচ্ছে কটাক্ষও। টকশো শেষে বিচারপতি মানিকের ওপর ক্ষুব্ধ দীপ্তি চিৎকার করে জানিয়েছিলেন তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সেটিই যেন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই উপস্থাপিকার জন্য।
এতদিন তাকে বডি শেমিং করা হয়েছে। বয়স নিয়ে কটাক্ষও করা হয়েছে। এবার সামাজিকমাধ্যমে নেটিজেনদের অনেকেই জানতে চাইছেন তার ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান’ এই পরিচয়ের সত্যতা। বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে দীপ্তির দাবি করা ‘মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান’ কথাটিকে অনেকে চ্যালেঞ্জ করছেন! শুধু তাই নয়, এ নিয়ে দীপ্তিকে কটাক্ষ করে ছড়ানো হচ্ছে বহু গুজবে খবর! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দীপ্তি চৌধুরীকে ট্রলিং-এর মাধ্যমে বুলিং করা হচ্ছে।
এমন প্রেক্ষাপটে দীপ্তির বক্তব্য দাবিতে দেশের একটি গণমাধ্যমের নাম ও লোগোযুক্ত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দীপ্তি চৌধুরীর ছবিযুক্ত ফটোকার্ডটিতে লেখা, আমার নানীর ফুফাতো বোনের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তবে কথিত ফটোকার্ডটির কোনো সত্যতা নেই বলে সেই গণমাধ্যমটির পেইজ থেকে পোস্ট করা হয়েছে।
এদিকে, শুক্রবার (২২ নভেম্বর) অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নিঝুম মজুমদার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দীপ্তি চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, দীপ্তি চৌধুরী, আপনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান বলেছেন। আপনার পরিবারের কে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন? কোন সেক্টরে? নাম কী? আপনার সঙ্গে সম্পর্ক কী? সহজ বিষয়। এই সহজ উত্তর দিতে আপনার দেরি হচ্ছে কেন?
দীপ্তিকে নিয়ে ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডটি যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হয়েছে, বিষয়টি জাতীয় দৈনিক আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগের একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উঠে আসে।
সেই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে নানান তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে দীপ্তি চৌধুরীর পরিবার এবং মুক্তিযুদ্ধের সাথে তার পরিবারের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দীপ্তির দাদার বাড়ি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে। তার বাবার নাম শিবলী চৌধুরী। দীপ্তি চৌধুরীর দাদার নাম নুরুল ইসলাম চৌধুরী, তিনি কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের আদমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নুরুল ইসলাম চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন।
নুরুল ইসলাম চৌধুরীর বোনের কোনো সন্তান না থাকায় তার কাছেই বেড়ে ওঠেন দীপ্তি চৌধুরীর বাবা শিবলী চৌধুরী। পরে বোনের পরিবার শিবলী চৌধুরীকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে আসেন এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন।
জানা গেছে, প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, শিবলী চৌধুরীর দুই চাচা (নুরুল ইসলাম চৌধুরীর চাচাতো ভাই) কুতুব উদ্দীন চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী সরকারের সনদপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। এর মধ্যে কুতুব উদ্দীন চৌধুরী আদমপুর দেওয়ান আলী উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন এবং বর্তমানে অবসরে আছেন। গিয়াস উদ্দীন চৌধুরী প্রয়াত।
অষ্টগ্রাম উপজেলার সরকারি ওয়েবসাইটে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকায় কুতুব উদ্দীন চৌধুরী ও গিয়াস উদ্দীন চৌধুরীর নাম পাওয়া যায়।
আরটিভি/এএ-টি
মন্তব্য করুন