• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
logo

ধ্বংস, মৃত্যু আর ক্ষুধার মধ্যেই গাজাবাসীর ঈদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

  ১০ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:০৬
ধ্বংস, মৃত্যু ও বেদনার মধ্যেই গাজাবাসীর ঈদ

ঈদ মানে উৎসব। আর ঈদ মানেই নতুন জামা, সকালের নামাজ, স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করা হলেও গাজাবাসীর দিনটি কাটবে স্বজন হারানোর বেদনা, বোমায় বিধ্বস্ত মসজিদের দুঃসহ স্মৃতির মধ্যে। ক্ষুধা, বাবা-মা, ভাই-বোনের মৃত্যুর শঙ্কা এই উপত্যকার মানুষের পিছু ছাড়ছে না।

গাজাবাসীরা রাস্তায় নেমে তাকবির পাঠ করে মাহে রমজানের সমাপ্তি এবং ঈদুল ফিতরকে স্বাগত জানিয়েছেন। বাস্তুচ্যুতও স্বজন হারানো ফিলিস্তিনিদের অনেকে ঈদ ঘিরে টুকটাক কেনাকাটা করেছেন। ঈদের আগে হাজারো ফিলিস্তিনি গাজার কিছু অংশে বাজারগুলোতে ভিড় জমান।

সাধারণত ঈদ বলতে পরিবারের সদস্যদের জমায়েত এবং এই উৎসব পালন করতে বিশেষ ধরনের খাবার তৈরি করাকে বোঝায়। কিন্তু এ দুটিরই অনুপস্থিতি ও চলমান যুদ্ধের কারণে শিশুদের শুধুমাত্র তাদের আগের স্মৃতি ধারণ করেই থাকতে হবে। পুরো গাজা ভূখণ্ড জুড়ে সতের লাখ বাস্তুচ্যুত লোক কঠোর পরিস্থিতিতে বাস করছে এবং খাদ্য ও পানির তীব্র সংকটে তারা ত্রাণ সহায়তার উপর নির্ভর করে।

গাজা ভূখণ্ডে যত মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, তাদের মধ্যে এক শতাংশ শিশু অনাথ হয়েছে অথবা তাদের দেখাশোনা করার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক কেউ নেই বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ।

সংস্থাটি ধারণা, গাজা ভূখণ্ডে অন্তত ১৭ হাজার শিশু সঙ্গীহীন অবস্থায় রয়েছে অথবা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাবা -মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা হয়ে পড়েছে।

ফিলিস্তিনি সংগীতশিল্পী মুসাব আল ঘামরি বলেন, ঈদের দিনটি আমরা হারাতে দিতে পারি না। বোমাবর্ষণ, ভয়, মৃত্যুর মধ্যেও ঈদের উদযাপনে শিশুদের আনন্দ দিতে চাই।

এদিকে ফিলিস্তিনিদের সামর্থ্য ও অবিচলতার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে টেলিগ্রামে বিবৃতি দিয়েছে হামাস। এতে সংগঠনটি বলেছে, পশ্চিম তীর, জেরুজালেম, অধিকৃত (ঐতিহাসিক) ফিলিস্তিনে এবং সারা বিশ্বের বাস্তুচ্যুতি শিবিরে থাকা জনগণ আমাদের সঙ্গে এবং গাজার জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে।

এতে বলা হয়েছে, ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে আমরা আরব ও ইসলামিক দেশগুলোকে অভিনন্দন জানাই। আমরা আশা করি, ফিলিস্তিনিদের জন্য এবং ইসরায়েলি দখলদারত্বের অবসানের লক্ষ্যে প্রকৃত সমর্থন বাড়তে থাকবে।

লায়ান ও তার ১৮ মাস বয়সী বোন সিয়ার। পরিবারের বাকি সদস্যরা গাজায় অক্টোবরের বোমা হামলা থেকে বাঁচতে শহরের আল আহলি হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছিলো। সে সময় তারা নিহত হয়। লায়ান সেই রাতে তার পরিবারের ৩৫ সদস্যকে হারায়। তাদের মধ্যে বাবা–মা ও নিজের পাঁচ ভাই বোন ও ছিলো।
তাদের পরিবারে একমাত্র তারাই এখন বেঁচে রয়েছে।

এগার বছর বয়সী লায়ান বলে, এই ঈদ অন্য কোন ঈদের মতো নয় কারণ যুদ্ধ চলছে। আমরা আমাদের পরিবার হারিয়েছি। আমাদের পরিবার হাসপাতালে পৌঁছানোর মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে দুইটা ক্ষেপণাস্ত্র আমাদের ওপর আঘাত করে। আমি জেগে উঠে দেখলাম, আমার পরিবারের সব সদস্যরা টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ৪৩ হাজারের বেশি শিশু বাস করে যাদের একজন বা বাবা-মা উভয়ই নেই।

গাজাবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, গাজায় দুর্ভোগের কারণে অনেক অস্ট্রেলীয় মুসলিমের ঈদ দুঃখে কাটবে। এটি অনেকের জন্য কষ্টদায়ক এবং আতঙ্কের সময়। আমি আশা করি, আপনারা পরিবার ও বন্ধুদের মধ্যে কিছু সান্ত্বনা এবং শক্তি এবং বিশ্বাসের অভিব্যক্তি খুঁজে পাবেন।

এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডেনিস ফ্রান্সিস গাজায় অকল্পনীয় চ্যালেঞ্জের বিষয়টি স্বীকার করে ঈদবার্তায় সমবেদনা ও সংহতির আহ্বান জানান।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনির স্বাধীনতাকামি সংগঠন হামাস। এতে এক হাজার ১৩৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ সময় ২৫০ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করে হামাস। হামলার জবাবে গাজায় নজরবিহীন হামলা চালাতে শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৩৬০ ফিলিস্তিনির প্রাণ নিয়েছে তারা। আহত হয়েছেন অন্তত ৭৫ হাজার ৯৯৩ জন।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
আবু সাঈদ মারা যায়নি, আছেন ফ্রান্সে: ফ্যাক্ট চেক যা বলছে
ইসরায়েলি বর্বরতায় গাজায় একদিনে আরও ৫৮ প্রাণহানি
সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে মানা
চকরিয়ার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদী গ্রেপ্তার