উঁকি দিচ্ছে মোহনীয় সৌন্দর্যের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’
নভেম্বর শুরু না হতেই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে উত্তরাঞ্চল। সবুজ ঘাসে জমে থাকা শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। প্রতিবছরের মতো এবারও দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের উত্তরাকাশে জেগে উঠেছে বিশ্বের তৃতীয় সবোর্চ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। বিকেল হলেই তেঁতুলিয়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিষ্কারভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত শীতের আগে মেঘমুক্ত নীলাকাশে ভেসে ওঠে তুষার শুভ্র হিমালয় পর্বত ও কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে এবার চলতি বছরে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সেপ্টেম্বরের শেষ দিকেই দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার।
ভোরে দূর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার নয়নাভিরাম নৈসর্গিক মনোরম দৃশ্য দেখতে জেলার আশপাশ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা এখানে আসতে শুরু করেন পঞ্চগড়ে। অনেকে পরিবার নিয়ে তেঁতুলিয়া সদরের ডাকবাংলো অথবা স্থানীয় সরকারি বেসরকারি রেস্ট হাউসে রাত যাপনের চেষ্টা করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। নতুন বছরে পর্যটক বরণে সাজানো শুরু করেছে হোটেল ও রিসোর্টগুলো। গত বছরগুলোতে পর্যটকের আগমন কিছুটা কম থাকলেও চলতি মৌসুমে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ীসহ পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে বিভিন্ন স্থান থেকে এ কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরুপ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এখন থেকেই দেশের অন্য জেলা থেকেও ট্যুরিস্টরা পঞ্চগড়ে আসছেন। অনেকে পরিবার নিয়ে তেঁতুলিয়ায় থেকে আগাম শীতের আমেজে রুপালি কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। এখানকার মানুষজন বেশ আন্তরিক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভালো। তাই ভ্রমণপিাসু আর পর্যটকরা অনায়াসেই এসে ঘুরে যেতে পারেন উত্তরের শুরুর এলাকা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া।
পর্যটক আসিফ মাহমুদ জানান, গত বৃহস্পতিবার পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন তিনি। পিকনিক কর্নার, ঐতিহাসিক ডাকবাংলো, মহানন্দা নদী, সমতলের চা-বাগান ও বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরেছেন। সকাল-বিকাল কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপও দেখেছেন। সোমবার ঢাকায় ফিরবেন তারা।
তেঁতুলিয়া উপজেলার কাঠের বাড়ি গেস্ট হাউজের মালিক হুমায়ুন কবির উজ্জ্বল বলেন, প্রতিবছর কাঞ্চনজঙ্ঘাকে ঘিরে পর্যটকরা আসেন। নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যটকরা বেশি আসেন। তবে চলতি বছর অক্টোবরের শেষের দশক থেকেই পর্যটক আসা শুরু হয়েছে। আমরা হোটেল, আবাসিক ও রিসোর্ট মালিকরা নিজেদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভিন্ন আঙ্গিকে সাজিয়েছি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বী বলেন, এই উপজেলায় প্রতি বছরে শীত আগেই শুরু হয়। তেঁতুলিয়ার নানান নান্দনিক দৃশ্য উপভোগে পর্যটকদের মনোনিবেশ বাড়ে অক্টোবরের শেষের দিক থেকে। কাঞ্চনজঙ্গা পর্যটকদের হ্রদয়কে বেশি আকর্ষণ করে, যার কারণে নভেম্বরে পর্যটকদের ভিড়ও বাড়ে। পর্যটকদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেই দিকটা নজরে নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নজরদারি।
কীভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে পঞ্চগড় কিংবা তেঁতুলিয়া অথবা বাংলাবান্ধায় সরাসরি দূরপাল্লার (দিবারাত্রি) বাস রয়েছে। রাজধানী থেকে সরাসরি তেঁতুলিয়ায় যাওয়ার একাধিক পরিবহন রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে নীলফামারীর সৈয়দপুর হয়ে বাস, মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কারে চড়েও তেঁতুলিয়া যাওয়া যায়। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে করে সরাসরি পঞ্চগড় নামতে পারবেন। যাত্রাপথে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। বাস ভাড়া পড়বে নন-এসি ১,০০০-১,১০০ টাকা এবং এসি ১,৩০০-১,৯০০ টাকা। ট্রেনে খরচ পড়বে শোভন চেয়ার ৬৯৫ টাকা এবং কেবিন ২৩৯৮ টাকা। সেই সঙ্গে থাকা-খাওয়ার জন্য নিজে যা খরচ করবেন।
রাত্রি যাপনের জন্য তেঁতুলিয়ায় সরকারি তিনটি ডাকবাংলোর পাশাপাশি কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। ডাকবাংলোগুলোতে অবস্থান করতে হলে আপনাকে আগেভাগেই উপজেলা বা জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। তবে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোতে থাকলে সেখান থেকেই আপনি দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ রূপ।
আরটিভি/এসএপি
মন্তব্য করুন