দশ গুণীজন পেলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার
সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন দশ গুণীজন।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি চত্বরে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- কবিতায় কবি মাকিদ হায়দার, কথাসাহিত্যে ওয়াসি আহমেদ, প্রবন্ধ ও গবেষণায় স্বরোচিষ সরকার, অনুবাদে খায়রুল আলম সবুজ, নাটকে রতন সিদ্দিকী, শিশুসাহিত্যে রহিম শাহ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণায় রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, বিজ্ঞান-কল্পবিজ্ঞানে নাদিরা মজুমদার, আত্মজীবনী-স্মৃতিকথা-ভ্রমণকাহিনি ফারুক মঈনুদ্দিন, ফোকলোরে সাইমন জাকারিয়া।
এমকে
মন্তব্য করুন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে ডালিমের লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলেন প্রধান বিচারপতি
সিনিয়র রিপোর্টার মেহেদী হাসান ডালিমের লেখা ‘হাইকোর্টের বিতর্কিত রায় ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির দপ্তরে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, এই বইটি জুলাই বিপ্লবের ঐতিহাসিক দলিল। বিচার বিভাগের ভূমিকা ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে এটি প্রথম গ্রন্থ। এই উদ্যোগকে আমি শুভসূচনা বলব।
বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সময় সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোসাইন, প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. শরিফুল আলম ভূঞা, সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মো. মাসউদুর রহমান, একুশে টিভির সিনিয়র রিপোর্টার শাকেরা আরজু শিমু উপস্থিত ছিলেন।
বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ‘ল’ টাইমস(বিএলটি)। বইটির দাম রাখা হয়েছে ৩৫০ টাকা। ৫ জানুয়ারি থেকে সুপ্রিম কোর্ট বারের বই মেলায় বইটি যাওয়া যাবে।
আরটিভি/আরএ
কবি জাহিদ নয়নের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আততায়ী অন্ধকার’
কবি ও আবৃত্তি শিল্পী জাহিদ নয়নের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আততায়ী অন্ধকার’ একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৫ উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে দ্বিমত পাবলিশার্স, আর এর নান্দনিক প্রচ্ছদ তৈরি করেছেন শিল্পী আইয়ুব আল আমিন।
জাহিদ নয়ন, যিনি দীর্ঘ এক দশক ধরে দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন ও যৌথ সংকলনে নিয়মিত কবিতা ও প্রবন্ধ লিখে আসছেন, তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে বলেন, ‘আততায়ী অন্ধকার’ বইটিতে প্রেম-বিরহ, বিদ্রোহ, বিপ্লব এবং আধ্যাত্মিক চিন্তাধারার মিশ্রণ রয়েছে। কবিতাগুলো পাঠকদের ভিন্ন ভিন্ন চিন্তার জগতে নিয়ে যাবে।
দ্বিমত পাবলিশার্স-এর কর্ণধার একরাম আজাদ জানান, বইটি একুশে বইমেলার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বইমেলাতেও পাওয়া যাবে। এছাড়া বাতিঘর, রকমারি এবং কলকাতার বুকস অব বেঙ্গল থেকে সহজেই সংগ্রহ করা যাবে।
‘আততায়ী অন্ধকার’ বইটির মুদ্রিত মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৯ টাকা। এটি শুধু মেলায় নয়, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকেও সংগ্রহ করতে পারবেন পাঠকরা।
বইপ্রেমী এবং কবিতার পাঠকদের জন্য ‘আততায়ী অন্ধকার’ হতে পারে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচনের জানালা। কবিতার ভাষায় প্রেম, বিদ্রোহ, এবং আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া যারা খুঁজছেন, তাদের জন্য এই বই অবশ্যই একটি অনন্য সংযোজন।
আরটিভি/এএইচ
বঙ্গ রাখালের প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘বিপ্লবী লীলা নাগ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’
অনুপ্রাণন প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে কবি, প্রাবন্ধিক ও গবেষক বঙ্গ রাখালের প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘বিপ্লবী লীলা নাগ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’।
বইটিতে পনেরো জন ব্যক্তির জীবন ও কর্মের বিশেষ দিক হাজির করা হয়েছে। যার মধ্যে দিয়ে তাদের সম্পর্কে পাঠকের সম্যক একটি ধারণা প্রাপ্তির সুযোগ ঘটে। লীলা নাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী। নারী জাগরণে যার রয়েছে বিশেষ অবদান। প্রবন্ধে খুঁজে পাই আমাদের সংগ্রামী অতীত। বইটিতে রয়েছে সমাজ সংস্কারে আবুল মনসুর আহমদের ভূমিকা ও প্রাসঙ্গিকতা; আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সাহিত্য সমাজের বহুরূপ; বুলবুল চৌধুরী : সহজ-সরল মানুষের অবয়ব; রাবেয়া খাতুনের ছোটগল্প : ‘অপারেশন কদমতলী’ ও ‘গণকবর’; শাহীন আখতার : প্রসঙ্গে ‘তালাশ’; বাংলার বীর জননী- রমা চৌধুরী; প্রকৃতির কবি : দ্বিজেন শর্মা; অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম : সংগ্রামী সাধকের প্রতিকৃতি; তারেক মাসুদ : প্রসঙ্গ ‘মাটির ময়না’; লুৎফর রহমানের কথাসাহিত্য: বাস্তবতার বীক্ষণ; স্বপ্নবাজ পুরুষ : ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী; মাহমুদ শাহ কোরেশী : ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির সাধক; আবেদা আফরোজা: যিনি থাকেন স্মৃতির অলিন্দে।
চিন্তক, সাংবাদিক ও গবেষক ড. কাজল রশীদ শাহীন বঙ্গ রাখালের লেখা সম্পর্কে বলেন—‘বঙ্গ রাখালকে সাধুবাদ ও স্বাগতম জানাই। উত্তর প্রজন্মের দায় ও দরদ পুরণে তিনি প্রবন্ধ সাহিত্যের মতো কঠিন ও অপ্রশংস একটি ধারাকে বেছে নিয়েছেন বলে। কেননা, প্রবন্ধ সাহিত্য চর্চা কেবল কঠিন কাজ নয়, সৃজনশীল ও মননশীল লেখালেখির মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ। কারণ, এখানে অনেক বেশি প্রস্তুতি লাগে, অনুশীলন লাগে, অধ্যাবসায় ও অবলোকন লাগে। ফলে, তার জন্য নিজেকে প্রতিনিয়ত নিঃসঙ্গতার কাছে সঁপে দিতে হয়। দেশ, জাতি, রাষ্ট্র, সমাজ, জনগণকে বুঝতে হয় তার আদ্যপান্ত সহযোগে। অনুভবে নিতে হয় তার অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যতের নিরিখে। বঙ্গ সেই কঠিন পথ বেছে নিয়েছেন স্বেচ্ছায়। আমাদের প্রত্যাশা তিনি প্রবন্ধ সাহিত্যকে ঋদ্ধ করবেন, নতুন চিন্তা, নতুন বয়ান হাজির সাপেক্ষে আমাদের জন্য যোগাবেন নতুন দিশা। যে দিশার স্বপ্ন দেখেছিলেন আবুল মনসুর আহমদ, লীলা নাগ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, ডা.জাফরুল্লাহ,র মতো মনীষিজন ।’
বইটি সম্পর্কে লেখক বলেন, কিছু পাঠক এই বই পড়ে সামান্য উপকৃত হলেই আমি সার্থক। এখানে আমি সাহিত্য বা কোনোব্যক্তির জীবন নিয়ে রীতিমতো বিশ্লেষণ করতে বসিনি। শুধু বলেছি নিজের দ্বিধা-অপূর্ণতা কিংবা আস্থাহীনতার কথা, যা বুঝেছি তাই নিজের মত করে বলবার চেষ্টা করেছি মাত্র। এই গ্রন্থে মূলত আমার ভাবনাগুচ্ছই কিঞ্চিৎ রেখাচিত্রণে রূপান্তিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, বঙ্গ রাখাল-এর জন্ম ১৯৯৩ সালের ১২ জুন ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। জাতীয় দৈনিকের পাশাপাশি দেশে-বিদেশের অনলাইনে ও লিখছেন তিনি।
লেখালেখির হাতেখড়ি কবিতা হলেও প্রবন্ধসাহিত্য নিয়েই এগিয়ে চলেছেন। কবি বঙ্গ রাখালের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে-সংস্কৃতির দিকে ফেরা (প্রবন্ধ, ২০১৫), লোক মানুষের গান ও আত্ম অন্বেষণ (গবেষণা, ২০১৬), মানবতাবাদী লালন জীবন অন্বেষণ (প্রবন্ধ, ২০১৭), হাওয়াই ডাঙ্গার ট্রেন (কবিতা, ২০১৮), মনীষা বীক্ষণ ও অন্যান্য (প্রবন্ধ, ২০১৮), অগ্রন্থিত রফিক আজাদ (সম্পাদনা, ২০১৯), পাগলা কানাই ও তার তত্ত্ব ! দর্শন (সম্পাদনা, ২০১৯), লণ্ঠনের গ্রাম (কবিতা-২০১৯), যৈবতী কন্যা ইশকুলে (কবিতা, ২০২০), কবিতার করতলে (প্রবন্ধ, ২০২০), অন্ধ যাজক (কবিতা-২০২১), ছোটবোয়ালিয়া-জয়ন্তীনগর-বসন্তপুর গণহত্যা (অভিসন্দর্ভ-২০২১)।
তিনি প্রবন্ধে পেয়েছেন-আবুল মনসুর আহমদ পুরস্কার ২০২০, জলধি সম্মাননা- (কবিতা ২০২১), অনুপ্রাণন সাহিত্য পুরস্কার-২০২২, কাব্যশ্রী সাহিত্য পুরস্কার-২০২৪ (গবেষণা)।
‘বিপ্লবী লীলা নাগ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’ বইটির প্রকাশক অনুপ্রাণন প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত। বিনিময় মূল্য রাখা হয়েছে ৩৩০ টাকা।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার গোড়াপত্তন ও কালানুক্রম
অমর একুশে গ্রন্থমেলার পেছনে রয়েছে একটি বড় ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট। স্বাধীনতার পর জাতীয় সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে সরকারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বইমেলা শুরু হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ভাষাকে নতুন করে মর্যাদা দেওয়া হয়। এই মেলাটি শুরু করার মূল উদ্দেশ্য ছিল নতুন প্রজন্মকে বই পড়তে উৎসাহিত করা এবং ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসারের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। এই ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ (বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা বই। এই বইগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পের প্রথম অবদান। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত তিনি একাই বইমেলা চালিয়ে যান। ১৯৭৬ সালে অন্যরা অণুপ্রাণিত হন। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক কবি আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি; এই সংস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা।
১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন করেন। কিন্তু স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষাভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়। ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সে বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। সেই ৩২টি বইয়ের ক্ষুদ্র মেলা কালানুক্রমে বাঙালির সবচেয়ে স্বনামধন্য বইমেলায় পরিণত হয়েছে।
বাংলা একাডেমি চত্বরে স্থান সংকুলান না-হওয়ায় ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ বছর ২৯৯টি অংশগ্রহণকারী প্রকাশকের মধ্যে ২৩২টিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
কয়েক বছর পূর্বেও প্রতি বছর পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গ্রন্থমেলা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হতো। এরপর ক্রেতা, দর্শক ও বিক্রেতাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারির শেষ দিন অবধি এই মেলা বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মেলা নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে। প্রকাশনীসমূহের স্টলগুলো প্রকাশক এলাকা, প্রকাশক-বিক্রেতা এলাকা, শিশু কর্ণার, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং লিটল ম্যাগাজিন ইত্যাদি এলাকায় বিভাজন করে স্থান দেয়া হয়। এছাড়া মেলা চত্বরকে ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউর এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ প্রমুখ ব্যক্তিত্বের নামে ভাগ করা হয়।
মেলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারেরও বহু রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান, যেমন—বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ইত্যাদি তাদের স্টল নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও অংশ নেয়। মেলায় বেশ জনপ্রিয়তার সাথে স্থান করে নিয়েছে লিটল ম্যাগাজিনও। মেলার মিডিয়া সেন্টারে থাকে ইন্টারনেট ও ফ্যাক্স ব্যবহারের সুবিধা। এ ছাড়া থাকে লেখক কর্ণার এবং তথ্যকেন্দ্র। মেলা প্রাঙ্গণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত। মেলায় বইয়ের বিক্রয়ে ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় থাকে। এ ছাড়া মেলায় শিক্ষাসহায়ক পরিবেশ ও তথ্যের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স রাখা হয়, যারা বইয়ের কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব আইন লঙ্ঘন করেছে কি না, তা শনাক্ত করেন ও যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেন।
আসছে এম এম মুজাহিদ উদ্দীনের দুটি বই
অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে আসছে জনপ্রিয় তরুণ লেখক এম এম মুজাহিদ উদ্দীনের দুটি বই। রকমারিতে বই দুটির প্রি-অর্ডার শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বইমেলায় প্রকাশনীর স্টলেও বই দুটি পাওয়া যাবে।
বই দুটির একটি ছাত্রজীবন থেকে ক্যারিয়ার প্রস্তুতির যাবতীয় গাইডলাইন নিয়ে লেখা ‘ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার’। বইটি প্রকাশ করছে অন্বেষা প্রকাশন। অন্যটি বিশ্বের সাড়া জাগানো বইগুলোর লাইফ লেসন নিয়ে লেখা ‘লেসন ফ্রম বুকস’। বইটি প্রকাশ করছে বাংলার প্রকাশন।
‘ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার’ বইটির মুদ্রিত মূল্য ৪০০ টাকা এবং ‘লেসন ফ্রম বুকস’ বইটির মুদ্রিত মূল্য ২৭০ টাকা রাখা হয়েছে।
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার বই সম্পর্কে লেখক বলেন, ‘জীবনে বড় হওয়ার জন্য একজন মেন্টরের দরকার হয়। যার পরামর্শ দেওয়ার মতো কেউ নেই; বইটি তার জন্য মেন্টরের ভূমিকা পালন করবে। তিনি আকাশ ছোঁয়ার দুরন্ত স্বপ্ন দেখবেন।’
লেসন ফ্রম বুকস বই সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ্বের সাড়া জাগানো বইগুলোর লাইফ লেসন নিয়ে মূলত বইটি লেখা হয়েছে। যে জীবনের পাঠ সুন্দর অভ্যাস, টাকা অর্জন-বিনিয়োগ, খ্যাতি, সম্মান ও সফল জীবন গঠনের সহায়ক হবে। ব্যস্ত জীবনে অনেকেরই এতো বইপড়ার সুযোগ হয় না। তারা সহজেই বইটি থেকে লাইফ লেসন শিখে জীবনে সফল হতে পারবেন।
ইতোপূর্বে তিনি ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি বইটি লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। তিনি নিয়মিত দেশের প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে কলাম এবং ফিচার লেখেন। তরুণদের ক্যারিয়ার বিষয়ক পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা দেন।
আরটিভি/এএএ
বইমেলায় ফরিদুল ইসলাম নির্জনের উপন্যাস ‘আগুনজনম’
এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে কথাসাহিত্যিক ফরিদুল ইসলাম নির্জনের উপন্যাস আগুনজনম। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে চিত্রায়ন করা হয়েছে উপন্যাসটি।
চোখের সামনে প্রিয়তমের লাশ জলে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, অন্তঃসত্ত্বা নারীকে নিয়ে ছোটাছুটি নৌকায়, সাপ-ব্যাঙ, মুরগি একই ঘরের চালে। গ্রামে ছনের ঘর, পাটখড়ির ঘের সব তছনছ হয়ে গেছে। একটু আশ্রয়ের খোঁজে বিশ্বরোডে ছোট ছোট খুপড়িতে সবাই, কেউ জলের ওপর নৌকাতে, খাবারের জন্য অপেক্ষা, ঘরের ভেতর বাঁশের মাচাতে এমন অসংখ্য দৃশ্য। ১৯৮৮ সালের বন্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বেদনাদায়ক অধ্যায়। শহর-গ্রাম সবখানে জলের অভরায়ণ্য।
তারপর নব্বই দশক। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় আনন্দময় অধ্যায়। আবহমান সংস্কৃতি, ব্যান্ডসংগীত, সিনেমা, নাটক, যাত্রাপালা, খেলাধুলা, ক্যাসেট প্লেয়ারে গান শোনা, পালকিতে বিয়ে, ঢেকিতে ধান ভানা, টিউবয়েলের পানি নিতে ভোরের লাইন, আরবি শিখতে মক্তবে যাওয়ার স্মৃতিসহ অসংখ্য গল্প রয়েছে। পারস্পরিক সম্প্রতিসহ সংস্কৃতির উত্থান। গ্রাম ও শহরের দুটি পরিবারকে উপজীব্য করে এবং তার চারপাশের মানুষের গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে উপন্যাসটি। গ্রামের গৃহিণী সুফিয়ার স্বামী ৮৮’র বন্যায় মারা যায়। শুরু হয় জীবনপাঠে নতুন অধ্যায়, যেখানে লড়াই সংগ্রামে নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়! স্বামীহীন সংসারে দুই কন্যা নিয়ে জীবন,পরবর্তীতে কি পারে, সুফিয়া তার গন্তব্যে পৌঁছাতে?
বইটি সম্পর্কে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ এর প্রকাশক আদিত্য অন্তর বলেন, ‘আগুনজনম এর মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম অনেক কিছু জানতে পারবে। হারিয়ে যাওয়া শৈশব, নব্বই দশকের প্রেম, মানুষের জীবনযাপন সহ অসংখ্য বিষয় উঠে এসেছে। তরুণ প্রজন্মকে নতুন করে ভাবতে শেখাবে বইটি।’
বইটি সম্পর্কে লেখক বলেন, ‘আমি কথাসাহিত্যর মাধ্যমে নিজের দেশের মা-মাটিকে ধারণ করি। এই বইটির মাধ্যমে অনেক অজানা অধ্যায় তুলে এনেছি। নতুন প্রজন্মকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলবে। বইটির মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া অনেক স্মৃতি চোখের সামনে ভাসবে। তাছাড়া বর্তমান সময়ে অনেক কিছু তুলে আনার চেষ্টা করেছি। বইটি নিয়ে ভীষণ আশাবাদী।’
বর্তমান সময়ের তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল লেখক ফরিদুল ইসলাম নির্জন জন্ম ১০ অক্টোবর, ১৯৮৭ সিরাজগঞ্জ জেলায় উল্লাপাড়ায়। সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শেষে আইসিএমএবিতে সিএমএ কোর্সে অধ্যয়নরত। জাতীয় দৈনিকের পাশাপাশি দেশে-বিদেশে অনলাইনেও লিখছেন সরব।
বর্তমানে দৈনিক সমকাল এর পাঠক সংগঠন সমকাল সুহৃদ সমাবেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্বরত। সাহিত্য বিষয়ক কাগজ ‘সুহৃদ বন্ধন’ সম্পাদনা করেছেন।
দৈনিক সমকালের পাঠক সংগঠন সমকাল সুহৃদ সমাবেশ বগুড়া জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক থাকা অবস্থায় দেশের সেরা সংগঠন পুরস্কার-২০১১, সমকাল সুহৃদ সমাবেশ থেকে দেশের সেরা সুহৃদ একাদশ (সৃজনে) পঞ্চম স্থান, আত্মবিকাশ পাঠচক্র রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান, বাংলাদেশ নারী লেখক সোসাইটি থেকে গ্রন্থ সম্মাননা হিসেবে শুভেচ্ছা স্মারক-২০২২, বাসপ সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩,অনুপ্রাণন পাণ্ডুলিপি পুরস্কার ২০২৪ (গল্প বিভাগ), বুকওয়ার্ম লেখক সম্মাননা ২০২৫ অর্জন করেন।
প্রকাশিত হয়েছে শিশু-কিশোর গল্পগন্থ ‘স্কুল মাঠে ভূতের মেলা’, রম্য গল্পের বই ‘প্রেমের নাম হাসপাতাল’ ও বড়দের ‘সে শুধু আড়ালে থাক’, উপন্যাস ‘আজো খুঁজি তারে’, ‘আশ্রয়’, ‘আপনজন’, ‘জীবনবিলাস’ এবং ‘আগুনজনম’। দৈনিক মানবকণ্ঠ ঈদসংখ্যা ’২৪-এ প্রকাশিত হয় উপন্যাস ‘পরীতমা’।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্রর কাব্যগ্রন্থ ‘বাংলা বিভাগের মেয়ে’
এবারের বইমেলায় আসছে তরুণ কবি ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্রর প্রথম কবিতার বই ‘বাংলা বিভাগের মেয়ে’র দ্বিতীয় মুদ্রণ। প্রকাশ করছে হরকরা প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন তৌহিদ আহাম্মেদ লিখন।
‘বাংলা বিভাগের মেয়ে’ সম্পর্কে ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র বলেন, এই বইয়ের কবিতাগুলোতে প্রেমের আড়ালে কিংবা মোড়কে রাষ্ট্রের দহন, দুর্বৃত্তায়ন এবং কলুষিত সমাজব্যবস্থার মুখোশ খুলে দিতে চেয়েছি। বইয়ের নাম চরিত্র ‘বাংলা বিভাগের মেয়ে’—আদতে ফ্যাসিস্ট দানবী। এ সিরিজের কবিতাগুলো ২০২৩ সালের রাজনৈতিক টালমাটাল সময়ের অস্থিরতায় রচিত। এপ্রিলে প্রথম প্রকাশের পর, অগাস্টে সেই ফ্যাসিস্ট দানবীর পতন এবং পলায়ন—এই ঘটনাপ্রবাহ আমাকে এক অন্যরকম তৃপ্তি দিয়েছে। প্রথম সংস্করণের সীমিত মুদ্রণ অল্প সময়েই শেষ হয়ে যায়। এবারের বইমেলায় আসছে দ্বিতীয় সংস্করণ পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত আকারে; নতুন প্রচ্ছদে। বইটিতে রাজনৈতিক কবিতা ছাড়াও রয়েছে প্রেম ও দ্রোহের কবিতা।
ইস্রাফিল আকন্দ রুদ্র'র জন্ম একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কোনো এক বোশেখের দশম দিনে; গাজীপুরের শ্রীপুরে। শৈশব, কৈশোর, বেড়ে ওঠা সেখানেই। লেখালেখির হাতেখড়ি চতুর্থ শ্রেণিতে। বর্তমানে পড়াশোনা করছেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে, লোকপ্রশাসন বিভাগে। সম্পাদনা করেন শিল্প ও সাহিত্যের মাসিক পত্রিকা ‘রোটেশন’। কবিতাতেই নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিয়েছেন, কবিতাই তার ধ্যান-জ্ঞান।