ডাবের ভেতরে পানি কোথা থেকে আসে জানেন কি?
ডাব শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ডাব খেতে ভালবাসেন প্রায় সকলেই৷ কিন্তু, ডাবের পানি খেতে খেতে কি কখনও মনে হয়েছে এতো উঁচু গাছে ডাব তার মধ্যে পানি আসে কী ভাবে বা কোথা থেকে?
সকলেই জানেন ডাবের পানিতে পেট ঠান্ডা হয়। একে প্রাকৃতিক স্যালাইন ওয়াটাও বলা হয়। গরমে ডাব শরীরকে স্বস্তি দেয়৷
-
আরও পড়ুন : বলিউড নিয়ে মীরার বিস্ফোরক মন্তব্য
আসলে ডাবের ভিতর যে পানি আসে তা গাছের এন্ডোস্পার্মের অংশ। নারকেল গাছ তার ফলকে পানি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করে।
নারকেল গাছ শিকড় দিয়ে নিজের ভেতরে পানি টেনে নেয়। এই প্রক্রিয়াকে অভিস্রবণ বলা হয়। এর মাধ্যমে ডাব গাছের প্রতিটি অংশে পানি পৌঁছায়।
-
আরও পড়ুন : স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে স্বামীর আত্মহত্যা
এন্ডোস্পার্ম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই পানি ডাবের ভেতরে যায়। এই পানির কিছু অংশ থেকে ধীরে ধীরে শাঁস তৈরি হয়। পরে এটি নারকেল হয়ে যায়। তবে পরিপক্ক নারকেল হয়ে গেলেও এতে কিছুটা জল থেকেই যায়।
মন্তব্য করুন
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে দূষণমুক্ত করতে নতুন প্রযুক্তি
পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি ব্যবহারের পথে বাস্তব জগতে নানা বাধা রয়েছে। সহজেই সেই পথে এগোনোর কোনো সমাধান সূত্র বিশাল পরিবর্তন আনতে পারে। দক্ষিণ আমেরিকায় এমনই এক প্রকল্পকে ঘিরে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।
চিলের আটাকামা মরুভূমিতে সেরো দোমিনাদোর নামের টাওয়ারের ওপর ১০,৬০০ আয়না সূর্যের আলো নিক্ষেপ করছে৷ সেই আলো প্রায় দশ হাজার সূর্যের শক্তির সমান। সোলার প্যানেলের বদলে আয়না সূর্যের আলো একত্র করে গলানো লবণ উত্তপ্ত করছে। পাম্পের সাহায্যে সেই মিশ্রণ টাওয়ারের উপরে পাঠানো হয়।তাপমাত্রা ৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছুঁতে পারে।
এই প্রণালীর বৈশিষ্ট্য হলো- লবণ সেই উত্তাপ ধারণ করতে পারে এবং এভাবে টাওয়ারের নিচে টার্বাইনগুলির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে৷ এমনকি আকাশে সূর্যের আলো না থাকলেও সেই প্রক্রিয়া চলতে পারে।
সেরো দোমিনাদোরের প্রতিনিধি ইবান আবেইয়া বলেন, এটা এমন এক প্রযুক্তি, যার সাহায্যে আমরা দীর্ঘ সময়ের জন্য জ্বালানি ধারণ করতে পারি৷ দিনে ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে সাত দিন সেই শক্তি কাজে লাগাতে পারি। সেই প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা বিশেষ করে গ্যাস ও কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করতে পারি।
পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির তুলনায় জীবাশ্ম জ্বালানির একমাত্র সুবিধাও তরল লবণ কেড়ে নিতে পারে। গ্যাস ও কয়লার মতো সেটিও স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য জ্বালানির উৎস, যা প্রকৃতির অস্থিরতায় ভারসাম্য আনতে পারে৷ লবণের মিশ্রণের অনুপাতের উপর সেই সাফল্য নির্ভর করে।
আন্তোফাগাস্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে গবেষকরা এখনো আদর্শ মিশ্রণ তৈরির লক্ষ্যে পরীক্ষানিরীক্ষা করছেন।স্টোরেজ ক্ষমতার আরো উন্নতি করাই তাঁদের লক্ষ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মাউরো এনরিকেস বলেন, বর্তমানে এমন এক মিশ্রণ ব্যবহার করা হচ্ছে, যাকে সোলার সল্ট বলা হয়। তার মধ্যে সোডিয়াম নাইট্রেট এবং পটাসিয়াম নাইট্রেট রয়েছে৷ উত্তাপ সঞ্চয়ের জন্য সেটি উপযুক্ত। সৌর শক্তি না থাকলেও ২৪ ঘণ্টাজুড়ে সেই লবণ শক্তির জোগান দিতে পারে।
গ্রিন এনার্জি এখনো পর্যন্ত অর্থনৈতিক গুরুত্বহীন অঞ্চলকেও সোনার খনিতে রূপান্তরিত করতে পারে৷ এমনকি বিশ্বব্যাপী শক্তির ভারসাম্যেও পরিবর্তন আনতে পারে৷ অনাড়ম্বর এক কন্টেইনার চিলেকে গ্রিন এনার্জির ক্ষেত্রে শীর্ষে পৌঁছতে সাহায্য করতে পারে৷ ছোট হলেও এটাই বিশ্বের একমাত্র ভ্রাম্যমাণ হাইড্রোজেন উৎপাদন কেন্দ্র৷ সেই পরীক্ষামূলক কেন্দ্রটিকে মরুভূমির মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে বড় কারখানার জন্য আদর্শ জায়গার সন্ধান চালানো হচ্ছে। সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গার সন্ধান চলছে।
সিসিটেম প্রকল্পের প্রধান লিন্ডলে ম্যাক্সওয়েল বলেন, আমাদের প্রধান কাজ হলো এমন এক মানচিত্র তৈরি করা, যার মধ্যে উচ্চ মানের দক্ষতাসম্পন্ন হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত জায়গা চিহ্নিত থাকবে৷ সেখানে এমন জোন আঁকা থাকবে, যার মধ্যে হাইড্রোজেনের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বিশেষভাবে কার্যকর হবে৷ পানি ভেঙে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন তৈরি করতে হলে শুধু অনেক জ্বালানির প্রয়োজন হয় না।সব জায়গায় বাতাস ও পানি মোটেই একই রকমের নয়।
ম্যাক্সওয়েল মনে করিয়ে দেন, যে বাতাসের চাপ, তাপমাত্রা ও জলবায়ু পরিস্থিতি সেই প্রক্রিয়ার দক্ষতার উপর প্রভাব রাখে। চিলেতে এখনো পর্যন্ত বিদ্যুতের সিংহভাগ কয়লা চালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসে।ভবিষ্যতে কয়লা ছাড়াই সেগুলো চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
আন্তোফাগাস্তার উত্তরে আনগামোস-এ প্রথমবার এমন এক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে লবণ দিয়ে চালানোর উপযুক্ত করে তোলার কাজ চলছে। গ্রিনার ক্যাপাসিটি সংস্থার কর্ণধার হোয়াকিন মেলেন্দেস বলেন, এটা গোটা বিশ্বের কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আদর্শ। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের রূপান্তরের পরেও কনট্রোল রুম, টার্বাইন, জেনারেটর আগের মতোই কাজে লাগানো হয়৷ সেটাই এই প্রকল্পের বড় সুবিধা।
তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী তরল লবণের কল্যাণে ভবিষ্যতেও একই টার্বাইন চালু থাকবে। সৌরশক্তি সেই লবণকে দিনের বেলায় উত্তপ্ত করবে। এমন রূপান্তরকে বিপ্লব বলা চলে, গোটা বিশ্বের উপর যার প্রভাব পড়বে।
এইএস আন্দেসের ম্যানেজার বানি বোজ্জো বলেন, সেটা সত্যি চললে ভবিষ্যতে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। শুধু প্রযুক্তির নিরিখে দেখলে যে কোনো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকে লবণ চালিত কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে।
তবে চিলের পরিবেশ বাকি বিশ্বের সঙ্গে হুবহু মেলে না।তা সত্ত্বেও সেখানে নতুন করে ভাবনার যে প্রক্রিয়া চলছে, তার ফলে বিশাল মাত্রায় বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, প্রযুক্তিগত সমাধান সূত্র এবং অবশ্যই বিনিয়োগের সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে। দক্ষিণ আমেরিকার বাইরেও তার প্রভাব পড়তে বাধ্য।
আরটিভি/এএইচ
চাঁদের নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে বসতি নির্মাণের পরিকল্পনা
মানুষ ভবিষ্যতে চাঁদ ও অন্যান্য উপযুক্ত গ্রহ-উপগ্রহে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু নির্মাণ ও জ্বালানি উৎপাদনের উপকরণ পৃথিবী থেকে নিয়ে যাওয়া অবাস্তব হবে। তাই চাঁদের উপকরণ কাজে লাগানোর মহড়া চলছে।
চাঁদের ধূলিকণা কাজে লাগিয়ে কীভাবে কাঁচ বা ইট তৈরি করা সম্ভব, বার্লিনে গবেষকরা তা জানার চেষ্টা করছেন। কারণ পৃথিবী থেকে চাঁদে এমন উপকরণ নিয়ে যাওয়ার ব্যয় মারাত্মক রকম বেশি।
এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রো. এনরিকো স্টল বলেন, অনেক সংস্থা সত্যি চাঁদে মালপত্র সরবরাহ করতে চায়। চাঁদে এক কিলো মাল পাঠানোর জন্য তারা দশ লাখ ইউরো মাসুল চাইছে। পৃথিবীর বুকে চাঁদের ধূলিকণার মতো পদার্থ সৃষ্টি করার জন্য প্রয়োজনীয় বেজাল্ট এবং ফেল্ডস্পারের মতো উপকরণ আগ্নেয়গিরির কাছে পাওয়া যায়। তবে সেগুলি যতটা সম্ভব শুকনা হতে হবে। এক ভ্যাকুয়াম চেম্বারের মধ্যে ১,৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম করলে সেই উপকরণ অনেকটা লাভার মতো রূপ নেয়। গলানো সেই পদার্থের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিমন স্টাপারফেন্ড বলেন, এর বিশেষত্ব হলো, এর আগে কেউ এমনটা করেনি। আমরাই প্রথম ভ্যাকুয়ামের মধ্যে সেটা করতে পেরেছি। এটা সত্যি বড় সাফল্য৷ প্রাথমিক স্তরে আমরা বাসস্থান, অর্থাৎ, বাড়িঘর, সোলার সেলের কাঠামো ইত্যাদি গড়ে তুলতে চাই। তবে এর কোনো সীমা নেই। মুনডাস্ট আরো দানাদার৷ পৃথিবীর মতো সেই ধূলিকণা তত মিহি নয়।
বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ুলিয়ান বাশ জানান, আমাদের হাতে দুটি মৌলিক উপাদান রয়েছে, অর্থাৎ, বেসাল্টিক উপাদান এবং অ্যানোর্টোসাইট উপাদান। কিন্তু দুইয়ের মিশ্রণে চাঁদের জন্য উপযুক্ত নির্দিষ্ট বেস সৃষ্টি করা যায়। মুনডাস্টের মধ্যে একেবারেই কোনো পানি নেই। তা সত্ত্বেও দেড় হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সেটি দিয়ে ইট তৈরি করা সম্ভব।
বার্লিন প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেফান লিংকে বলেন, যে চুলায় সেই ইট উৎপাদন করা হবে, সেটি আমাদের পৃথিবী থেকে নিয়ে যেতে হবে। এমন ওভেনের ওজন সম্ভবত ১০০ কিলোর মতো হবে। কিন্তু ভেবে দেখুন, সেটি কত টন উপাদান প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদন করতে পারবে। চাঁদের বুকে জ্বালানি উৎপাদনও অন্তত কাগজেকলমে সম্ভব। সেখানে সূর্যের আলো বেশ প্রখর, আকাশে কোনো মেঘ নেই৷ ফলে সোলার সেল ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে।
বার্লিনের ছাত্ররা ইটের পাশাপাশি কাঁচও সৃষ্টি করতে সফল হয়েছেন। সেই কাঁচের মধ্য দিয়ে যতটা সম্ভব আলো চলাচল জরুরি। সেটিকে তখন সোলার সেলে রূপান্তরিত করা যাবে। পট্সডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই কাজ চলছে৷ কাচ যতটা সম্ভব চিকন ও স্বচ্ছ হতে হবে।
সেখানকার পদার্থবিদ ফেলিক্স লাং বলেন, আমরা মুনগ্লাসের উপর পেরোভস্কাইট সোলার সেল তৈরি করতে চাই। অর্থাৎ সেখানেই উপাদান গলিয়ে কাঁচ উৎপাদন করা হবে এবং তার উপর শুধু এক মাইক্রো-মাইক্রোমিটার পেরোভস্কাইট স্তর বসানো হবে। পেরোভস্কাইট এমন এক কৃত্রিম স্ফটিকের মতো উপাদান, যা একটি দ্রাবকের মধ্যে দ্রবীভূত করা যেতে পারে। কোনো ভ্যাকুয়াম চেম্বারে সেটিকে কাচের উপর সমানভাবে স্প্রে করাও সম্ভব। তারপর আরো কম তাপমাত্রায় তামাও প্রয়োগ করা হবে। প্রচলিত সিলিকনের তুলনায় পেরোভস্কাইটের অনেক সুবিধা রয়েছে।
ফেলিক্স লাং বলেন, মহাকাশে মহাজাগতিক রশ্মি প্রতিবারই একটি পরমাণুকে তার অবস্থান থেকে ছিটকে বার করে দেয়। সেটা আসলে একটা ত্রুটি। এর ফলে সোলার সেল বিকল হয়ে যায়। পেরোভস্কাইট এতই নরম, যে একটি পরমাণু ছিটকে বেরিয়ে গেলেও আবার সেটি আগের অবস্থানে ফিরে আসে। ফলে মহাকাশে কয়েক দশক ধরে এর কার্যকারিতা অটুট থাকে।
চূড়ান্ত সোলার সেল দুটি কাচের প্লেট দিয়ে তৈরি, যার মাঝে পেরোভস্কাইটের একটা স্তর রয়েছে। এবার সেটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখার পালা। ভ্যাকুয়ামের মধ্যে সেই সোলার সেল কৃত্রিম সূর্যের দিকে তাক করা হলো। কয়েক মূহূর্ত পর সেটি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করলো।
পট্সডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ ফেলিক্স লাং বলেন, আমরা এক কিলো পেরোভস্কাইট চাঁদে নিয়ে যেতে পারলে, সেটা দিয়ে ৪০০ বর্গ মিটার বড় স্তর সৃষ্টি করা যাবে, যা তিনটি ভলিবল কোর্টের সমান। সেখানে ৫০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। চাঁদের বুকে মানুষের প্রথম পদার্পণের প্রায় অর্ধ শতাব্দী পর মানুষ আরো বড় স্বপ্ন দেখছে। তারা চাঁদে বসবাস করতে চায়।
আরটিভি/এএইচ