রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ খেলতে ভারতে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ছয় দেশের সাবেক ক্রিকেটারদের নিয়ে এই আয়োজনে ভিন্ন ক্রীড়া বিভাগ থেকেও অংশ নিয়েছেন খেলোয়াড়রা। সচেতনতামূলক এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন হকি কিংবদন্তি আ ন ম মামুন উর রশিদ। ইংল্যান্ডের হয়ে অংশ নিয়েছেন দেশটির হকি দলে খেলা জেমস টিনডাল। ইংলিশদের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা দলেও রয়েছেন সাবেক হকি খেলোয়াড় লয়েড নোরিস জোনস। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার ২২ গজে নেমেছেন রাগবি খেলোয়াড় দুলাঞ্জানা উইজেসিনহে।
বাংলাদেশ লিজেন্ডসের হয়ে মোহাম্মদ রফিক-খালেদ মাসুদ পাইলটদের সঙ্গে রায়পুরে অবস্থানকালে আরটিভি নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক হকি তারকা মামুন।
তিনি বলেন, ‘অসাধারণ একটি টুর্নামেন্ট। খু্বই চমৎকার আয়োজন। সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। এর অংশ হতে পেরে আমি উচ্ছ্বসিত।’
বাংলাদেশ-ভারত ছাড়াও নিরাপদ সড়কের দাবিতে এক কাতারে দাঁড়িয়েছে ইংল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটাররা।
শচিন টেন্ডুলকার-ব্রায়ান লারা ব্যাট হাতে শাসন করেছেন ক্রিকেট বিশ্বকে। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সুযোগ হয়েছে মামুনের। কেভিন পিটারসেন, যু্বরাজ সিং, মাখায় এনটিনিদের মতো ক্রিকেট বিশ্বের পরিচিত মুখদের সঙ্গেও সময় কাটাচ্ছেন বাংলাদেশ হকি দলের সাবেক এই অধিনায়ক।
‘সবগুলো দল একসঙ্গে একই হোটেলে অবস্থান করছে। সব লিজেন্ডরাই অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ। সবার সঙ্গেই আমাদের দেখা হচ্ছে, আড্ডা হচ্ছে।’ যোগ করেন মামুন।
১৯৭৩ সালের ১ আগস্ট জয়পুরহাটে জন্ম মামুন উর রশিদের। ক্লাস সিক্স পর্যন্ত স্থানীয় স্কুলে পড়েছেন। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) হকির প্রথম ব্যাচে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় তার। পরের বছর ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিংয়ে নাম লেখান এই ডিফেন্ডার। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আবাহনীর জার্সিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মাঠ। ঐতিহ্যবাহী দলটির অধিনায়কও ছিলেন তিনি।
১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সামলিয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব। ২০০০ সালে যোগ দেন ঊষা ক্রীড়া চক্রে। ২০০১ সালে জাতীয় দল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নেন। তার আগে খেলেছেন ১২০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। গোল করেছেন ২৫টি।
২০০৩ সালে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে না নামার ঘোষণা দিলেও থেমে থাকেননি। পুরান ঢাকার ক্লাব ঊষার কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। বয়স ভিত্তিক বিভিন্ন দলের পাশাপাশি জাতীয় দলের কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কাজ করছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দল ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী দলের কোচ হিসেবে।
হকির বর্তমান অবস্থা নাজুক বিষয়টি খুব ভালো করেই জানেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার জয়ী এই তারকা। বিশ্ব হকিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ র্যাংকিং ছিল ২৯। বর্তমান অবস্থান ৩৮তম। নিয়মিত লিগ নেই। জাতীয় দলের অবস্থায় আশাব্যঞ্জক নয়। অথচ নব্বইয়ের দশকে ঢাকা লিগে বিশ্ব হকির তারকারা খেলে গেছেন।
হকির এই কিংবদন্তি বলেন, ‘আমি তখন আবাহনীর অধিনায়ক ছিলাম। আমার দলের হয়ে খেলেছেন ধনরাজ পিল্লাই-মুকেশ কুমারের মতো ভারতীয় তারকারা। মোহামেডানের জার্সিতে আমাদের প্রতিপক্ষ ছিলেন পাকিস্তানের শাহবাজ আহমেদ-তাহির জামানদের মতো খেলোয়াড়রা। এখন হকির অবস্থা তলানিতে। হকি ফেডারেশনে সঠিক নেতৃত্ব না থাকায় আমাদের মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে।’
অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সম্ভব ঘুরে দাঁড়ানো। এমনটাই মনে করেন ৪৭ বছর বয়সী মামুন।
‘ফুটবলের পর হকিই ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় খেলা। এখনকার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি মনে করি নিবেদিত সংগঠক, নিয়মিত ঘরোয়া লিগ পারে হকিকে আগের অবস্থানে ফেরাতে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অনূর্ধ্ব ১৬ ও ২১ দল গঠনের জন্য প্রয়োজন পাইপলাইন। দেশের নানা প্রান্তে হকির মাঠ তৈরি করতে হবে। প্রয়োজন আছে হকি অ্যাকাডেমিরও। ঢেলে সাজানো উচিৎ ফেডারেশনকেও।’ পরামর্শ হিসেবে যোগ করেন তিনি।
ওয়াই