ইরানের রাজধানী তেহরানসহ দেশটির সামরিক স্থাপনা, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থাপনায় গত ১২ জুন দিনগত রাতে হামলা চালায় ইসরায়েল। হামলায় ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান কমান্ডার হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদরদপ্তরের কমান্ডার ও বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ ও ৬ জন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভয়াবহ এই হামলার পরেও দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির অধিকাংশ এখনও অক্ষত রয়ে গেছে।
নিউইয়র্ক টাইমস ধারণা করছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের নাতাঞ্জের বৃহত্তম ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের একটি ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। তবে, ইরানের বোমা তৈরিতে সক্ষম গ্রেডের (নিয়ার বম্ব গ্রেড ইউরেনিয়াম) পারমাণবিক জ্বালানির সবচেয়ে সম্ভাব্য মজুতস্থলে আঘাত হানেনি।
আন্তর্জাতিক পরিদর্শকদের মতে, এই মজুত ইস্পাহান এক বিশাল কমপ্লেক্সে সংরক্ষিত আছে। ইসরায়েলের ১০০টি যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা ইস্পাহান থেকে বেশ দূরে ছিল। কিন্তু এটি দেশের বৃহত্তম পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর একটি এবং পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরানের গোপন অস্ত্র গবেষণা কর্মসূচির অন্যতম কেন্দ্র।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী জানায়, প্রথম দফায় হামলা না চালালেও দ্বিতীয় দফায় তারা ইস্পাহানে আঘাত হেনেছে, তবে জ্বালানি মজুতস্থলে নয়। এর পরিবর্তে তারা ইউরেনিয়াম গ্যাসকে ধাতুতে রূপান্তর করার ল্যাবরেটরিগুলোতে মনোযোগ দিয়েছে। এটি অস্ত্র তৈরির শেষ ধাপগুলোর একটি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বলেন, ইরান নয়টি আণবিক বোমার জন্য যথেষ্ট উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করেছে। এই মজুত যে বিপদ সৃষ্টি করেছে, তা তিনি বিশ্বাস করেন। ইরানকে যদি থামানো না হয়, তবে তারা ‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইসরায়েল ইচ্ছা করেই ইস্পাহান এড়িয়ে গেছে। বোমা হামলা তেজস্ক্রিয়তার ঘটনা ঘটাতে পারে, সেই চিন্তা থেকেই হয়তো হামলা চালানো হয়নি। বর্তমান অবস্থায় জ্বালানি মজুতস্থলে বোমা হামলায় হয়তো পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটাবে না। তবে এটি জ্বালানি পরিবেশে ছড়িয়ে দিতে পারে, যা তেজস্ক্রিয় বিকিরণের বিপদ সৃষ্টি করবে।
আরটিভি/আরএ/এস