ঢাকামঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

ক্যানসারের চেয়েও ভয়াবহ রোগ সেপসিস

লাইফস্টাইল ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২০ , ০৮:১১ পিএম


loading/img
ফাইল ছবি

যে সব রোগে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়, তার মধ্যে সেপসিস বা রক্তদূষণ অন্যতম৷ ব্যাকটেরিয়ার ছোট্ট সংক্রমণ থেকে শুরু হয়ে অতি দ্রুত রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এই দূষণ৷ 

বিজ্ঞাপন

বিশ্বজুড়ে বছরে এক কোটি ১০ লাখ মানুষ সেপসিসে মারা যাচ্ছেন। যে সংখ্যা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার চেয়েও বেশি। যার অর্থ বিশ্বজুড়ে বছরে যত মানুষ মারা যান, তাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ এই সেপসিস। সেপসিসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। তবে ধনী দেশগুলোকেও এই সেপসিস মোকাবেলায় কাজ করতে হচ্ছে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন, এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে।

সেপসিস কি?

বিজ্ঞাপন

সেপসিস এক ধরনের গুপ্তঘাতক। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অতিরিক্ত কাজ করার ফলে এই সেপসিস হতে পারে। এই প্রতিরোধ ক্ষমতা কেবল সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিবর্তে শরীরের অন্য অংশগুলোতেও আক্রমণ শুরু করে। একপর্যায়ে মানুষের অঙ্গ অকেজো হয়ে যায়। এমনকি বেঁচে থাকা মানুষকেও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি ও অক্ষমতা নিয়ে চলতে হতে পারে।

সেপসিস হলো ইনফেকশন সম্পর্কিত বিষয়। এর মানে হচ্ছে মানুষ যখন অসুস্থ হয়, যেমন রক্তচাপ কমে যাচ্ছে, হার্ট রেট বেড়ে যাচ্ছে, জ্বর হচ্ছে, শ্বাসের সমস্যা হচ্ছে, এমন অবস্থাকেই সেপসিসের সংক্রমণ বলা হচ্ছে। সেপসিস যখন আক্রমণ করে যেমন—ফুসফুস অকার্যকর, ফুসফুসে সমস্যা, কিডনি অকার্যকর, হার্ট অকার্যকর-তখন বলা হয় জটিল অবস্থায় আছে সেপসিস। রোগীর প্রেসার নেমে যায়, যে শকে চলে যায়, তখন তাকে বলা হয় সেপটিক শক। এই মরণঘাতক জীবনকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়।

বিজ্ঞাপন

গবেষক, সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টিনা রুড বলেছেন, উগান্ডার গ্রামাঞ্চলে কাজ করেছি এবং সেপসিসের ঘটনা আমরা প্রতিদিনই দেখি। তিনি বলেন, সেপসিসে আক্রান্ত হন সবচেয়ে বেশি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মানুষ। আর সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে শিশুরা। পাঁচ বছরের কম বয়সী ১০ জন শিশুর মধ্যে চারজনের সেপসিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

বিজ্ঞাপন

তবে যুক্তরাজ্যের জন্য সেপসিস একটি চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। স্পেন, ফ্রান্স ও কানাডার মতো দেশের চাইতে ব্রিটেনে সেপসিসে মৃত্যুর হার বেশি। এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতি বছর যুক্তরাজ্যে সেপসিসের কারণে প্রায় ৪৮ হাজার মানুষ মারা যান।

সেপসিস কী কারণে হয়?

যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়াল, ভাইরাল বা ফাঙ্গাল সংক্রমণ থেকে সেপসিস হয়। তলপেটের সংক্রমণ, কিডনির সংক্রমণ, রক্তস্রোতের সংক্রমণ, ত্বকের সংক্রমণ, নিউমোনিয়া।

সেপসিস কি ছোঁয়াচে?

সেপসিস ছোঁয়াচে নয়। সংক্রমণের স্থান থেকে এটা রক্তস্রোতের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়াতে পারে।

সেপসিসের লক্ষণ ও উপসর্গ

হার্ট রেট বেশি (নাড়ির গতি), ঠাণ্ডা লাগা ও কাঁপুনিসহ জ্বর, খুব বেশি ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, অপ্রত্যাশিত মানসিক অবস্থার পরিবর্তন, প্রসাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, অচেতন অবস্থা, দুর্বলতা ও রক্তচাপ কমে যাওয়া।

কাদের ঝুঁকির হতে পারে?

এটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খুবই কম বয়সী বা প্রবীণদের হয়। অবশ্য, যেকোনো কারোরই ঝুঁকির কারণ দেখা যেতে পারে।

সেপসিসের লক্ষণ

প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে

১. অস্পষ্ট কথা।

২. চরম কাঁপুনি বা পেশিব্যথা।

৩. সারাদিনে কোনো প্রস্রাব না হওয়া।

৪. মারাত্মক শ্বাসকষ্ট

৫. দ্রুত হৃৎস্পন্দন এবং শরীরের তাপমাত্রা অনেক বা কম হওয়া।

৬. ত্বকের রঙ একেক জায়গায় একেক রকম বা ছোপ ছোপ দাগ।

শিশুদের মধ্যে

১. চেহারা দেখতে নীলচে বা ফ্যাকাসে হয়। ত্বকের রঙ একেক জায়গায় একেক রকম দেখায়।

২. খুব অলস থাকে বা ঘুম থেকে জাগানো কঠিন হয়ে যায়।

৩. শিশুর শরীর স্পর্শ করলে অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা অনুভূত হয়।

৪. খুব দ্রুত শ্বাস নেয়া।

৫. ত্বকে এক ধরনের ফুসকুড়ি হওয়া, যা আপনি চাপ দিলেও মুছে যায় না।

৬. হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়া বা খিঁচুনি

সেপসিস প্রতিরোধে করণীয়

সংক্রমণের সংখ্যা কমিয়ে আনার মাধ্যমে সেপসিসে আক্রান্তের সংখ্যা কমানো যেতে পারে। অনেক দেশের ক্ষেত্রে সেপসিস প্রতিরোধের উপায় হলো- সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি ও সঠিক সময় সঠিক টিকার যোগান।

অন্যান্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি হলো, দেরি হওয়ার আগেই সেপসিস আক্রান্ত রোগীদের ভালোভাবে চিহ্নিত করা এবং দ্রুত তাদের চিকিৎসা শুরু করা। সূত্র: বিবিসি, ডয়েচেভেলে, ডব্লিউএইচও

এস/পি

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |