ওসি যখন খতিব!
সাধারণত শুক্রবার জুমার নামাজের আগে বয়ান করেন নির্ধারিত মসজিদের ইমাম। আর এটাই স্বাভাবিক। নিয়মও তাই। কিন্তু চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার আন্ডারে অবস্থিত মসজিদগুলোতে এই কাজটি করছেন সেই থানারই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
প্রতি শুক্রবারই ভিন্ন ভিন্ন মসজিদে গিয়ে বয়ান করছেন ইমামের মতোই। তার বয়ানে উঠে আসছে বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ সম্পর্কে ধর্মীয় অবস্থান। আর এসব কিছুই তিনি কুরআন হাদিসের আলোকে আলোচনা করেন। ভিন্নধর্মী এই পুলিশিং করে চট্টগ্রামে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন। শুধু এই মসজিদ পুলিশিংই নয়; জনবান্ধব বিভিন্ন সৃজনশীল উদ্যোগের মাধ্যমে চট্টগ্রামে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘দেশের ৯০ শতাংশ মুসলমানের মধ্যে প্রায় শতভাগ মুসলমানই ধর্মভীরু। তারা অন্যান্য কথার চেয়ে মসজিদের কথাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমি অপরাধ দমনে এই সুযোগটাই নিয়েছি। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের আগে কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিভিন্ন অপরাধ- মাদক, ইভটিজিং, সন্ত্রাস ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করি। এই মসজিদ পুলিশিংয়ের ভালো সুফলও পাচ্ছি।’
মসজিদ পুলিশিং
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন প্রতি শুক্রবার জুমার খুতবার আগে মসজিদে জঙ্গিবাদ ও মাদকের কুফল সম্পর্কে সাধারণ মুসলমানদের সচেতন করেন। ইতোমধ্যেই অর্ধশতাধিক মসজিদে তিনি এই কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ থেকে শুরু করে শহরের ছোট ছোট মসজিদগুলোতে তিনি উগ্রবাদ বিরোধী প্রচারের জন্য কাজ করছেন। এসব মসজিদে কুরআন হাদিছের আলোকে জঙ্গিবাদ, মাদক, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধের কুফল ও পরিণতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। এতে মসজিদ পুলিশিংয়ের সুফলও মিলছে হাতেনাতে। মসজিদভিত্তিক এলাকাগুলোতে এখন জুয়া, ইভটিজিং, মাদক সংক্রান্ত কোনও ঘটনা ঘটলেই স্থানীয়রাই পুলিশের সহযোগিতায় তা প্রতিরোধ করছে। এ বিষয়ে পাথরঘাটা আব্দুছ ছোবাহান জামে মসজিদের খতিব নুরুল আফছার আল ক্বাদেরী আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আগে মসজিদের পাশেই স্থানীয় কিশোরেরা ইভটিজিং করতো। ওসি সাহেব মসজিদে একদিন বয়ান করার পরপরই বন্ধ হয়ে যায়।
স্কুল পুলিশিং
বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ কমাতে তিনি স্কুল পুলিশিং শুরু করেছেন। এর অংশ হিসেবে তিনি নগরীর বিভিন্ন স্কুলে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, গ্যাং, ইভটিজিং ও মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রচার চালাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি স্কুল সময়ে শিক্ষার্থীদের আড্ডা বন্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আড্ডাবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে ইশতিয়াক আহমেদ ফয়সাল নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘নানা কারণে সন্তানের স্কুল কিংবা কোচিংয়ে যাওয়ার কথা আমরা যাচাই করি না। আমাদের সন্তানদের পড়ার নামে আড্ডা দেওয়া, বিভিন্ন কিশোর গ্যাং-এ জড়িয়ে যাওয়া বন্ধে ওসি সাহেবের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। তিনি পুলিশ হয়ে অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছেন। এটা অব্যাহত রাখা উচিত। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমবে।’
এছাড়াও তিনি গতানুগতিক পুলিশিংয়েও পিছিয়ে নেই। অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার, বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং, ওপেন হাউজ ডের মতো গতানুগতিক পুলিশিংও করছেন নিয়মিত। এ কারণেই গত দুই বছরে কোতোয়ালি এলাকায় ঘটেনি বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা। তিনি সেরা ওসি নির্বাচিত হওয়া ছাড়াও তার থানাও নির্বাচিত হয়েছে সেরা থানা হিসেবে।
এজে/পি
মন্তব্য করুন