অক্টোবর মাস ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতার মাস। আর এই মাসের ১৩ অক্টোবর “নো ব্রা ডে”। এই একটা দিন অন্তত ব্রা খুলে নিজের স্তন দুটোকে পরীক্ষা করুন। এই ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাধারণত ৫০-৭০ বছর বয়সী মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার অধিক ঝুঁকি থাকে।
খুব স্বাভাবিকভাবেই, আমাদের দেশের নারীরা ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নন। এমনকি ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই, এমন নারীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। অজ্ঞতা, অসচেতনতা, বিভ্রান্তিমূলক ধারণা, জড়তা ও সঠিক তথ্যের প্রচারণার অভাবে প্রতি বছর ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলছে।
বলা হয়ে থাকে সঠিক চিকিৎসা ও নিয়মতান্ত্রিক জীবন ব্যবস্থা মেনে চলার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যান্সার পুরোপুরি চিকিৎসা করে সুস্থ করা সম্ভব। অথচ প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই প্রাথমিক অবস্থায় ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। যে কারণে নীরব ঘাতক ব্রেস্ট ক্যান্সারে অকাল প্রাণ হারাতে হয় অনেক ভুক্তভোগীকেই।
‘নো ব্রা ডে’ মানে ব্রা খুলে অশ্লীলতা প্রদর্শন করা? কিংবা ‘নো ব্রা ডে’ কি ব্রা না পরে পালন করতে হবে? উত্তর হচ্ছে— না। ‘নো ব্রা ডে’-তে ব্রা খুলে মিছিল বা উৎসব করার মতো ব্যাপার নেই।
ষাটের দশকে র্যাডিক্যাল নারীবাদীরা বলেছিল “আমরা ব্রা পড়বো কেন? কার জন্য?” একই রকমভাবে অনেকেই লিপস্টিক দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল; তারা বলেছিল-“কার জন্য আমরা মুখে লাল-নীল রঙ মেখে সং সাজবো?”, তারা আরও অনেক কথা বলেছিল, “আমরা হাই-হিল পড়বো না; কেন পড়বো? হাইহিল পড়লে আমার বক্ষ এবং নিতম্ব উন্নত দেখাবে? কার কাছে উন্নত দেখাবে? পুরুষের কাছে? পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য আমাদের আর কি কি করতে হবে?” এখনকার অনেক র্যাডিক্যাল নারীবাদীরা ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের ঘোরতর বিরোধী।
অনেকের কাছে আচমকা লাগতে পারে। কিন্তু তাদের কথার যুক্তি আছে কারণ হাইহিল জুতার ক্ষেত্রে অনেক হেলথ রিস্ক আছে। শরীরে নানা রকম সমস্যা হয়। পশ্চিমা দেশের মেয়েরা যারা রিসেপশনে কাজ করে,তারা আরামদায়ক জুতা পরে। কারণ হাইহিল পরে বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব না। ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট নিয়ে ইতিমধ্যে ব্যাপক সমস্যা শুরু হয়ে গেছে; ফ্রান্সের একটি কোম্পানি একসময় ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্টের সামগ্রী বানাতো, তারা জরিমানা গুনতে গুনতে এখন দেউলিয়া।
লাইগেশন আরেকটি সমস্যা। এটা স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় একজন নারী সারাজীবনের জন্য মাতৃত্ব হারায়। আজকাল যেভাবে বিবাহ-বিচ্ছেদ হচ্ছে, তাতে একজন নারী যদি দুটি সন্তান নেয়ার পর লাইগেশন করায় তারপর যদি তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাহলে তার উপায়? উল্লেখ্য, বাংলাদেশে লাইগেশন ব্যবস্থা যত বেশী হয়েছে, সেই হারে পুরুষের জন্য স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা "ভ্যাসেক্টমি" কিন্তু হয়নি। কেন হলো না? বিষয়টি কি তবে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার ফলাফল?
আইভিএফ হচ্ছে আরেকটি ইস্যু। যদি কোনো নারী কিংবা পুরুষ এর ফারটিলিটি সমস্যা হয়; কিংবা বাচ্চা নিতে সমস্যা হয় তাহলে এই ব্যবস্থার দ্বারস্থ হতে হয়। ফার্টিলিটি সমস্যা অনেক রকম হতে পারে, স্বামীর সমস্যা ও স্ত্রী'র সমস্যা দুজনের সমস্যাই উল্লেখযোগ্য। পুরুষের ক্ষেত্রে স্পার্ম কোয়ালিটি (স্পার্ম কাউন্ট, ঘনত্ব ইত্যাদি); আর মেয়েদের ক্ষেত্রে অন্যতম জটিল সমস্যা হচ্ছে "আরলি ম্যানুপজ" কিংবা স্থায়ীভাবে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া। এছাড়াও বিভিন্ন রকম সমস্যা আছে। যেমন ওভারিয়ান ফেইলর (গর্ভপাত, টিউবে কন্সিভ করা ইত্যাদি)। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা "আরলি ম্যানুপজ"। এই সমস্যায় একজন নারীর দেহ ডিম উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তখন মা হতে হলে অন্য কারো কাছ "ডিম" গ্রহণ করতে হয়। ডিম গ্রহণ করার পদ্ধতিটি ল্যাবরেটরি নির্ভর। এই ব্যবস্থায় ল্যাবরেটরিতে "ডিম্বাণু"র মধ্যে স্পার্ম প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। এতে করে এম্ব্রো (ভ্রূণ) জন্ম লাভ করে। সেই ভ্রূণ পরবর্তীতে মানব দেহে প্রবেশ করানো হয়। এই ব্যবস্থাকে বলে "ইনভেট্রো ফার্টিলিটি" কিংবা আইভিএফ।
কেন এই আইভিএফ প্রসঙ্গ টেনে আনা হলো? কারণ এখনকার যুগে অনেক পরিবার সন্তানহীনতা সমস্যায় ভুগছেন। এই সমস্যায় অতীতে নারীদের তালাকপ্রাপ্তা হতে হতো; অথবা সতীনের ঘর করতে হতো। এমন কি কেউ জানতেও পারতো না, সমস্যাটি কার? স্ত্রী'র না স্বামীর? সব দোষ নারীর কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হতো। অনেক সময় পীরের পানিপড়া খেলে সন্তান হবার কথা জানা যেত। কিন্তু আজকাল ডিএনএ টেস্ট আসার পর পীরেরা এখন আর আগের মতো পাইকারি দরে "বাবা" হতে পারছেন না।
আমরা ছিলাম, "নো ব্রা দিবস" এর আলোচনায়। রসিকতা করে বলা যেতেই পারে, 'এখন যদি পুরুষরা "নো জাঙ্গিয়া দিবস" পালন করে তাহলে কেমন হবে?' কিছুই হবে না। আন্দোলন তারাই করে, রাজপথে তারাই নামে যারা ভিক্টিম হয়।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ জানা থাকলে একদম শুরু থেকেই সতর্ক হওয়া যায়। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ার আগেই চিকিৎসা শুরু করলে, সুস্থ হয়ে ওঠা যায়।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ হলো-
১. স্তন্য ও বগলের নিচের দিকে পিন্ড (লাম্প) বা চাকার মতো বোধ হওয়া।
২. স্তন্যের ত্বকের রঙ পরিবর্তন হওয়া।
৩. স্তন্যের আকার ও আকৃতিতে পরিবর্তন আসা।
৪. স্তন্যের ত্বক কুঁচকে যাওয়া।
৫. স্তন্যের বোঁটা (নিপল) ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়া।
৬. স্তন্য বোঁটা ও বোঁটার চারপাশে ফুসকুড়ি কিংবা র্যাশের মতো দেখা দেওয়া।
৭. বোঁটা থেকে সাদা কিংবা হলদেটে তরল বের হওয়া।
৮. স্তন্যে ব্যথাভাব দেখা দেওয়া।
জেনে রাখা ভালো যে, স্তন্যের ৯০ শতাংশ টিউমারই নিরীহ। সব টিউমারই ক্যান্সার নয়। তবে নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করা জরুরি। প্রতি মাসে পিরিয়ডের প্রথম অথবা দ্বিতীয় দিন নিজেই হাত দিয়ে স্তন পরীক্ষা করলে প্রাথমিক পর্যায়েই এটা চিহ্নিত করা সম্ভব।
"নো ব্রা ডে" পালন করা শুরু হয় ২০১১ সালের ৯ জুলাই। প্রথম তিন বছর জুলাইয়ে নো ব্রা ডে পালন করা হলেও, পরবর্তীতে অক্টোবরের ১৩ তারিখ থেকে পালন করা হয়ে আসছে এই বিশেষ দিনটি।