জাপানি, আমেরিকা ও ইউরোপের প্রায় ১০টি বিদেশি জাতের আম চাষ করছেন তার বাগানে। পরিত্যক্ত জায়গায় দেশি-বিদেশি জাতের আম এবং সাথি ফসল হিসেবে বাদাম চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। কৃষক আলীম মৃধার বাড়ি মান্দা উপজেলায় হলেও নওগাঁ সদর উপজেলার আনন্দনগর বাগবাড়ি এলাকায় প্রায় আট বিঘা জমিতে মিশ্র ফসল উৎপাদন করে ভাগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। স্থানীয় এলাকাবাসী এমন বিদেশি জাতের আম চাষ দেখে নিজেরাও ফসল ফলাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
বাগানে ঝুলছে নানান বর্ণের রঙিন আম। রাস্তা দিয়ে চলার পথে পথিকের চোখে পড়ে এমন রঙিন আম। মিয়াজিকি, রেড-পালমার, কিউজাই, কিং অব চাকাপাত, হ্যানী-ডিউ, সূর্যডিম, ব্ল্যাক-স্টোন, হোয়াইট-স্টোন, ব্যানানা ম্যাংগোসহ প্রায় দশ জাতের বিদেশি আমের চাষ করছেন আলীম মৃধা।
আলীম মৃধার মান্দা উপজেলায় দেশি জাতের আমের বাগান থাকলেও ২০২২ সাল থেকে নওগাঁ সদর উপজেলার বাগবাড়ি এলাকায় স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে প্রতি বছর ৯০ হাজার টাকায় প্রায় আট বিঘা জমি লিজ নিয়ে দেশি ও বিদেশি জাতের আম চাষ করেন। সেখানে তিনি বিদেশি আমের পাশাপাশি ‘সাথি ফসল’ হিসেবে উৎপাদন করছেন দেশি জাতের বাদাম। এ ছাড়াও বিদেশি জাতের সঙ্গে তিনি দেশি জাতের বারি-৪ আম চাষ করছেন প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় বাড়তি লাভের আশা করছেন তিনি।
আলীম মৃধা জানান, নাটোর জেলার কৃষিবিদ মুঞ্জুরুল ইসলামের সহযোগিতায় এই বিদেশি জাতের আমের চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এ ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান প্রয়াস এবং বিত্ত্ববান এলাকাবাসীর আর্থিক সহযোগিতা পান তিনি। কিশোরগঞ্জ জেলার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ২০২২ সালে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে বিদেশি জাতের আম চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরে গাছে ভালো মুকুল আসলেও তা ভেঙে দেন এবং দ্বিতীয় (এই) বছরে তিনি আশানুরূপ ফলন পান।
নওগাঁ জেলা ও সদর উপজেলার কৃষি বিভাগ থেকে কোনো প্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ এই কৃষকের। তার দাবি, এই বিদেশি জাতের আম ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আমেরিকায় বেশি জনপ্রিয়। কৃষিবিভাগ থেকে অথবা কোনো ব্যায়ারের মাধ্যমে যদি তার এ আমগুলো বিদেশে রপ্তানি করা যায় তাহলে তিনি বেশি লাভবান হবেন। তিনি সরকারের কাছে আবেদন জানান, এই বিদেশি জাতের আমগুলো যেন রপ্তানি করা যায় এমন ব্যবস্থা করার।
এ দিকে এলাকাবাসী এমন রঙিন জাতের আম কখনো দেখেননি বা শোনেনওনি। এলাকাবাসী জানান, তার বাগানে প্রবেশ করলে আমের রঙ এবং গঠন দেখলে ভালো লাগে। প্রতিদিনই তার বাগানে স্থানীয়রা ভিড় করেন রঙিন আম দেখতে। আম চাষি আলীম মৃধার সফলতায় তারাও উৎসাহিত হচ্ছেন এমন বাগান করতে।
অপরদিকে জেলা কৃষিবিভাগ জানিয়েছে, আর্থিক ভাবে কোনো কৃষককে সহযোগিতা করার কোনো নিয়ম নেই কৃষি অধিদপ্তরের। তবে কৃষক যদি উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ চায় তবে সব সময় তা দেওয়া হয়ে থাকে। বিদেশি জাতের আম রপ্তানিতে নানান নিয়ম অনুসরণ করতে হয় একজন কৃষককে। তবে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন হলে তার বাগানে বিদেশি জাতের আমগুলো রপ্তানির জন্য সঠিক পরামর্শ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কৃষিবিভাগ।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবীদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কৃষক তার ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ চাইলে আমরা তা সব সময় দিয়ে সহযোগিতা করে থাকি। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন হলে আমরা অবশ্যই আলীম মৃধাকে সহযোগিতা করবো।’
উৎপাদনে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহযোগিতা না পেলেও কৃষক আলীম মৃধার আশা রপ্তানিতে বেসরকারিভাবে হলেও সহযোগিতা পাবেন তিনি। এ বছর নওগাঁ জেলায় ৩০ হাজার তিনশ’ হেক্টর জমিতে দেশি-বিদেশি আমের আবাদ হচ্ছে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, প্রায় ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আম। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।