২০০৯ সালের মে মাসে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন ঘটনার দিন ১ নং গেটে ডিউটিতে থাকা সৈনিক সুজাউল ইসলাম। তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ ১৭টি বছর। এর মধ্যে হারিয়েছেন মাকে। মায়ের মৃত্যুর সংবাদেও মুক্তি মেলেনি শেষ মুখ দেখবার। স্ত্রী রোকসানা বেগম স্বামীর জন্য প্রায় ১০ বছর অপেক্ষার পর ২০১৮ সালে বন্দী সুজাউলকে তালাক দিয়ে অন্যের সংসার করছেন বর্তমানে। এখন সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব নওগাঁর সুজাউল ইসলাম।
নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের সুজাউল ইসলাম। গত ২২ জানুয়ারি ২০২৫ সালে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় দীর্ঘ ১৭ বছর পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ছয় ভাইয়ের মধ্যে সর্বোকনিষ্ট সুজাউল। ১৯৯৫ সালে বিডিআরে যোগদান করেন তিনি। দেশের বিভিন্ন সীমান্তে কাজ করেছেন তিনি। সর্বশেষ পিলখানার ১নং গেটে ডিউটি করেছেন তিনি। সেদিন ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে ডিউটি করছিলেন। তিনি বিদ্রোহের ঘটনার সঙ্গে কোনভাবে জড়িত না বলে দাবি তার।
সুজাউল ইসলাম ২০০৯ সালে পিলখানার ঘটনার সময় নিরস্ত্র ডিউটি পালন করছিলেন। এমন সময় ভেতর থেকে হুড়োহুড়ির খবরে তিনি গেটেই অবস্থান করছিলেন। একদল সশস্ত্র বিডিআর পোশাকধারী তার সামনে এসে গেট খুলে দিতে বললে তিনি সিনিয়র অফিসারের আদেশের অপেক্ষায় ছিলেন। তাদের তিনি বের হয়ে যেতে দেননি।
সৈনিক সুজাউল জানান, পিলখানা ১নং গেট সংলগ্ন হাসপাতালের সামনে ঘটনার দিন তিনি ডিউটি করছিলেন। ঘটনার পর ২০২৯ সালের মে মাসে তাকে হত্যা ও পিলখানা মামলায় গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হয়েছিলো। ২০১২ সালে হত্যা মামলায় খালাস পান তিনি। এরপর ২০১৮ সালে পিলখানা মামলা বাতলের পর একই বছর বিস্ফোরক মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো। এরপর থেকে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি জীবনযাপন করে আসছিলেন।
তিনি আরও জানান, বন্দী জীবনে সবকিছু হারিয়েছেন। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন মারা যাওয়ার একদিন পর। জানাজায় অংশগ্রহণের সুযোগও তাকে দেওয়া হয়নি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময়। তার স্ত্রী তার জন্য ১০ বছর অপেক্ষার পর তাকে ছেড়ে অন্য কোথাও সংসার করছেন। নিজের ভিটা মাটি খালি অবস্থায় পড়ে আছে। বর্তমান সরকার তাকে মুক্তি দিয়ে নতুন জীবন দিয়েছে।
এখন কিছু করে খাওয়ার মতো জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি করেছেন সুজাউল ইসলাম।
এ দিকে তার পরিবার পরিজন, প্রতিবেশী ও সহকর্মীরা জানিয়েছেন, এতোদিন পর তারা সুজাউলকে দেখতে পাবেন কখনও চিন্তাও করেননি। তারা তাকে কাছে পেয়ে অনন্দিত। কিন্তু এখন সে নিঃস্ব। সব কিছু হারিয়েছে সুজাউল। পরিবার পরিজনসহ একটি সুখের সংসার ছিলো তার। কিন্তু বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় সে সব কিছু হারিয়েছে। আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। তাকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
১৭ বছরে সুজাউল বন্দী জীবনে পরিবার পরিজনের পাশাপাশি কর্মশক্তি, স্মৃতিশক্তিসহ মানসিক শক্তিও হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি আবার নতুন করে সুস্থ জীবনে ফিরে আসবেন, এমন প্রত্যাশা সকলের।
আরটিভি/এমকে