পুরুষত্বের জন্য টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রধানত দায়ী। হরমোনের ঘাটতি হলে পুরুষের শরীরের নানান রকম সমস্যা হতে পারে। বয়স ত্রিশ পেরোনোর পর পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের পরিমাণ কমতে শুরু করে। ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের পাশাপাশি কা’মবাসনা কমে যাওয়া, লি’ঙ্গোত্থানে সমস্যা, খারাপ মেজাজসহ মনোযোগের অভাব দেখা দেয়।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত কিছু খাবার খাওয়ার অভ্যাস করলেই উপকৃত পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনে শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাহায্য করে এমনই কিছু খাবারের নাম উল্লেখ করা হলো।
মধু
মধুতে আছে প্রাকৃতিক নিরাময়কারী উপাদান বোরোন। এই খনিজ উপাদান টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বাড়াতে এবং নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা ঠিক রাখে। যা ধমনী সম্প্রসারণ করে লি’ঙ্গোত্থানে শক্তি সঞ্চার করে।
ফ্যাটি ফিশ
টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে চাইলে আপনাকে ডায়েটে ফ্যাটি ফিশ রাখতেই হবে। আর এই বিষয়টি ইতোমধ্যেই একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। তাই স্যালমন, সার্ডিনের মতো মাছ খাওয়া শুরু করুন। তবে এসব মাছ না পাওয়া গেলে রুই, কাতলা বা বিভিন্ন ছোট মাছ খেলেও উপকার পাওয়া যাবে।
বাঁধাকপি
এই সবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। আরও আছে ইনডোল থ্রি-কার্বিনল। এই উপাদান স্ত্রী হরমোন ওয়েস্ট্রজেনের পরিমাণ কমিয়ে টেস্টোস্টেরন বেশি কার্যকর করে তোলে।
সবুজ শাকপাতা
শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে চাইলে নিয়মিত সবুজ শাক খেতে হবে। একই পরামর্শ দিচ্ছে হেলথলাইনও। শাকে ম্যাগনেশিয়ামসহ এমন কিছু মাইক্রোনিয়েট্রিয়েন্ট রয়েছে যা কিনা টেস্টোস্টেরন লেভেল অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়েটে শাকপাতা থাকাটা খুবই জরুরি।
রসুন
রসুনের আলিসিন যৌগ মানসিক চাপের হরমোন করটিসলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ফলে টেস্টোস্টেরন ভালোমতো কাজ করে। ভালো ফল পেতে রসুন কাঁচা খাওয়ার অভ্যেস করুন।
ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেটে থাকে কোকাও নামক একটি উপাদান। আর এই উপাদানটি কিন্তু অত্যন্ত উপকারী একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এ ছাড়াও ডার্ক চকোলেটে অন্যান্য একাধিক উপকারী ফ্ল্যাভানয়েডসও রয়েছে। এইসব উপাদানও টেস্টোস্টেরন বাড়াতে সক্ষম।
ডিম
ডিমে আছে স্যাচারেইটেড ফ্যাট, ওমেগা থ্রিএস, ভিটামিন ডি, কলেস্টেরল এবং প্রোটিন। টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরির জন্য এই উপাদানগুলো জরুরি।
কলা
এই ফলের ব্রোমেলেইন এনজাইম টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। আর দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি সরবরাহের উৎস হিসেবে কাজ করে।
ঝিনুক
টেস্টোস্টেরন তৈরিতে জিংক গুরুত্বপূর্ণ। ঝিনুকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান। যা টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।ঝিনুক পছন্দ না, তাহলে বিকল্প হতে পারে চিজ বা পনির। বিশেষ করে সুইস এবং রিকোত্তা চিজ।
টক ফল
‘স্ট্রেস হরমোন’ কমানোর পাশাপাশি টকজাতীয় ফলে রয়েছে ভিটামির এ। যা টেস্টোস্টেরন উৎপন্ন করতে প্রয়োজন হয়। এছাড়া ওয়েস্ট্রজেনের মাত্রা কমায় অর্থাৎ পুরুষ হরমন ভালোমতো কাজ করতে পারে।
পালংশাক
এটা প্রমাণিত যে, ওয়েস্ট্রজেনের মাত্রা কমাতে পারে এই শাক। তাছাড়া আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি এবং ই। আর এসবই টেস্টোস্টেরন তৈরির উপাদান।
আঙুর
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একথোক লাল আঙুর খাওয়া গেলে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, শুক্রাণুর তৎপতরতা উন্নত করে আর শক্তিশালী করে।
ডালিম
ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইম্পোটেন্স রিসার্চ থেকে জানা যায় যৌন কর্মে অক্ষম পুরুষদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ যারা প্রতিদিন ডালিমের রস খেয়ে থাকেন তাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
বেরি জাতীয় ফল
ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, বেরি জাতীয় ফলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। আর এই সমস্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিন্তু টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা নেয়। এমনকি একাধিক ছোট-বড় রোগ দূরে রাখার কাজেও এর জুড়ি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাবা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করার ইচ্ছা থাকলে নিয়মিত এই ফল খেতে ভুলবেন না।
মাংস
বিশ্বাস করা হয় যারা একেবারেই মাংস খান না তাদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ কম থাকে। তবে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার আগে সাবধান। যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান গরু ও ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরি খাবারে প্রচুর স্যাচারেইটেড ফ্যাট থাকে।
চাইলেই আপনি সহজেই বাড়াতে পারবেন টেস্টোস্টেরন। ডায়েটে কয়েকটি খাবারকে জায়গা করে দিতে হবে। তাহলেই আপনার টেস্টোস্টেরন বাড়তে থাকবে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ভালো।
আরটিভি/এসকে