ঢাকামঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশ ও আমিরাতে ভারতের পেঁয়াজ কূটনীতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল ২০২৪ , ০৩:১৩ পিএম


loading/img
ফাইল ছবি

ভারতে বেশ কিছুদিন ধরেই পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভুটানের মতো কয়েকটি দেশে এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই পেঁয়াজ পাঠানো হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পেঁয়াজের দাম বাড়লেও ভারত থেকে ওই দেশগুলোতে কম দামে পেঁয়াজ রপ্তানিকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ ভারতের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, ভারতীয় কৃষকদের এক কেজি পেঁয়াজের জন্য ১২ থেকে ১৫ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই একই পেঁয়াজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছালে তার দাম কেজি প্রতি ১২০ টাকা হয়।

বিজ্ঞাপন

এখন প্রশ্ন হলো- রপ্তানি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কেন ভারত সরকার নির্বাচিত দেশগুলোর কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করছে? পেঁয়াজ রপ্তানি কি তাহলে ভারতের কাছে কূটনীতির একটা অংশ হয়ে উঠেছে?

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রীতি একেবারে নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ভারত তাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রে খাদ্যপণ্য, প্রয়োজনীয় সামগ্রী রপ্তানি করেছে এবং পরিষেবা দিয়েছে। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পেঁয়াজ এবং তার দাম ভারতে বেশ সংবেদনশীল একটি বিষয়। বিভিন্ন সময়ে পেঁয়াজের দাম নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের নির্বাচনে পেঁয়াজের সবচেয়ে প্রত্যক্ষ প্রভাব সম্ভবত দেখা গিয়েছিল ১৯৯৮ সালে। মনে করা হয়, ওই বছর দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের জন্য দায়ী ছিল পেঁয়াজের চড়া দাম।

বিজ্ঞাপন

আবার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভালো থাকাটাও পাশের দেশের জন্য কল্যাণকর। সেই কারণেও বন্ধুত্বপূর্ণ আদানপ্রদান চলতে থাকে বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, পেঁয়াজের ঘাটতির আশঙ্কায় গত ডিসেম্বর মাস থেকে রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। গত মাসে সরকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়েছে। তবে ভারত সরকার রাজনৈতিক চ্যানেল মারফত একথা একপ্রকার মেনে নিচ্ছে যে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে।

এদিকে, পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর থেকেই কৃষকরা এর বিরোধিতা করে আসছেন। সরকারের তরফে ঘোষণার পর মহারাষ্ট্রেও বিক্ষোভ দেখান কৃষকরা। নাসিকের লাসলগাঁও, নন্দগাঁও, পিপলগাঁও এবং উমরানেতে বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা বিক্ষোভ প্রদর্শনও করেন। প্রসঙ্গত, এই অঞ্চলগুলো পেঁয়াজ উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র।

নিষেধাজ্ঞার মাঝেই রপ্তানি

নিষেধাজ্ঞা চলার মধ্যেই ভারত থেকে একাধিক দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করা হয়েছে। সংবাদপত্র ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত।

অন্যদিকে, পহেলা মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৪ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার এমনটাও উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। তবে পরিমাণের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হলেছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, ত্রৈমাসিক ‘কোটা’ হিসাবে মাসে ৩ হাজার ৬০০ মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে না।

গত মাসে ভারত থেকে তিন হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ত্রৈমাসিক বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত আরও ১০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন বলছে, ভারতে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাশাপাশি ভুটানে ৫৫০ টন, বাহরাইনে ৩ হাজার টন এবং মরিশাসে ১২০০ টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববাজারে সাধারণত কেজি প্রতি পেঁয়াজের দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে থাকে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১৫০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে।

ভারত, পাকিস্তান ও মিসর পেঁয়াজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করায় এই দাম বেড়েছে।

দ্য হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি প্রতি টন ৫০০ থেকে ৫৫০ ডলার দরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পেঁয়াজ পাঠানোর তথ্য পেয়েছেন রপ্তানিকারকরা। যদি আমরা ভারতীয় টাকার নিরিখে বলি তাহলে এই মূল্য কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আমদানিকারকরা ভারত থেকে পেঁয়াজ কিনে ৩০০ কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছেন।

দশ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেলে আমদানিকারকরা প্রায় এক হাজার কোটি টাকা মুনাফা পাবেন। বিবিসি।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |